শতকোটি মানুষের ভালবাসার মধ্যমনি বাংলাদেশের সুপারম্যান মুস্তাফিজ
আসমা খন্দকার : আগে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত ছিলেন, কিন্তু আইপিএলের শিরোপা জেতার পর এখন শতকোটি মানুষের ভালবাসার মধ্যমনিতে পরিণত হয়েছেন কাটার জাদুকর মুস্তাফিজ।
মুস্তাফিজ শুধু ভারত নয়, এশিয়া কাপেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এত দ্রুত কোন ক্রিকেটারের সফলতা পাওয়া তরুনের মত মুস্তাফিজই প্রথম। মাত্র এক ম্যাচ দিয়ে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এসেছেন।
প্রথমবার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলতে এসে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ‘দ্য ফিজ’। রোববার (২৯মে) রাতে ১৭ উইকেট পাওয়ার পর ১০ লাখ রুপি পেয়েছেন। মাঠে থাকা ধারাভাষ্যকাররা তাকে উপাধি দিয়েছেন ‘দ্য ফিজ’।
পুরো আইপিএলেই সবার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মুস্তাফিজ। তার স্লোয়ার ও কাটারের জাদু দিয়ে ‘বধ’ করেছেন বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের। আইপিএল শেষে অনলাইনে ভোটের মাধ্যমে বিশাল ভোট পেয়ে হয়েছেন সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার। এমন সাফল্যে শুধু মুস্তাফিজ নন, গর্বিত বাংলাদেশও। মুস্তাফিজের প্রথম পরিচয় তার অফ ‘কাটার’।
গত বছর ভারতের বিপক্ষে লোকজন তাকে চেনা শুরু করেন। অভিষেক ম্যাচেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ‘বধ’ করে ম্যাচ সেরা হয়ে যান তিনি। তার বোলিং জাদু দেখে ভারতীয় দলের কোচ ল্যাপটপে হিসাব করা শুরু করেছিলেন। কিভাবে তাকে আটকাবেন এ ধরনের নানান কৌশল রপ্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে তার।
আইপিএলের শুরুতেই হায়দ্রাবাদের কর্মকর্তারা মুস্তাফিজের দিকে চোখ ছিল। আগে থেকে তাকে নেয়ারও ইচ্ছা ছিল তাদের। অবশেষে প্রায় দুই কোটি টাকার বিনিময়ে মুস্তাফিজ খেলেছেন হায়দ্রবাদের হয়ে। আধো বাংলা ও ভুলে ভরা ইংলিশ দিয়ে মন জয় করেছেন মুস্তাফিজ। হয়াদ্রাবাদের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের মধ্যমনি হয়েছেন তিনি। যার এত সব অর্জন আইপিএল দিয়ে তিনি তো সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হবেনই।
মুস্তাফিজ শুধু ভারত নয়, এশিয়া কাপেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এত দ্রুত কোন ক্রিকেটারের সফলতা পাওয়া তরুনের মত মুস্তাফিজই প্রথম। মাত্র এক ম্যাচ দিয়ে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এসেছেন। তার সঙ্গে সবসময় ছিলেন তার ভাই, মা-বাবা। তাদের অফুরন্ত চেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে আজ বিশ্ব মানচিত্রে মুস্তাফিজ সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উঠে বসে আছেন।
আইপিএলের শেষদিকে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের জন্য ভোটাভুটি হয়। আর অনলাইনে সেই ভোটের মোট ৮৩.২ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মুস্তাফিজ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ভারতের লোকেশ রাহুল (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর খেলোয়াড়) পেয়েছেন মাত্র ৬.৩ শতাংশ ভোট।
এদের দুজনের ব্যবধান এত বেশি যে ভোটের ফলাফল দেখে রীতিমত বিস্ময় পুরো ভারত। শুধু মুস্তাফিজ ও লোকেশ রাহুল নন এই তালিকায় ছিলেন ভারতের জাসপ্রিত বুমরা, মুরুগান অশ্বিন, শিভিল কৌশিক, ক্রুনাল পান্ডে, বারিন্দার সরন, রিশব পন্ট এবং অস্ট্রেলিয়ার কেন রিচার্ডসন ও অ্যাডাম জাম্পা।
সেরা উদীয়মান মুস্তাফিজ গত রোববার রাতে ফাইনালেও হায়দ্রাবাদকে হতাশ করেননি। একটি উইকেট নিয়েছেন, করেছেন মিতব্যয়ি বোলিংও। স্রেফ দুর্ভাগ্যের কারণে নিজের দ্বিতীয় উইকেট পাননি। না হলে ফাইনাল শেষে তার নামের পাশে ১৭ না হয়ে ১৮ সংখ্যা লেখা হত। তবুও মুস্তাফিজ সবার চোখে আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। যে আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে আজ আকাশে উড়ছে ডেভিড ওয়ার্নারের হায়দ্রাবাদ।
পুরো আাসরে মুস্তাফিজ তিনটি ম্যাচে উইকেট পাননি। তবুও অন্যদের তুলনায় তিনি ছিলেন সফল। অন্যদের তুলনায় মুস্তাফিজের ইকোনমি রেটই (৬.৯০) সেরা। সেরা বোলারদের তালিকায় অবশ্য তার স্থান ৫ম। সেটিও কম কিসের।
শীর্ষস্থান দখল করেছেন তারই সথীর্থ ভুবেনম্বর কুমার। মাত্র ৬টি উইকেটের জন্য শীর্ষস্থান হয়নি তার। আফসোস নেই মুস্তাফিজের। এক আইপিএল থেকে যা পেয়েছেন তাই কম কিসের।