• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

লুটেরা এসআলমের গাড়িতে বিএনপির সালাহউদ্দিন


প্রকাশিত: ১১:১৯ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬২ বার

 


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : বহুল বিতর্কিত লুটেরা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের মালিকানাধীন গাড়িতে চড়ে নিজ এলাকায় গিয়ে সংবর্ধনা নিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। এনিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল এস আলমের সম্পত্তি যেন ক্রয় বিক্রয় করতে সহায়তা না করে। অথচ এসব জেনেও সালাহউদ্দিন চড়লেন এস আলমের গাড়িতে।

এর আগে গত গত বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর দলের নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরের সঙ্গে পেকুয়ায় পৌঁছান তিনি।কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদের গাড়িবহর পেকুয়ায় পৌঁছানোর বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ রকম একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যে গাড়িতে (জিপ) চড়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার থেকে পেকুয়ায় আসেন, সেটির নম্বর চট্ট মেট্রো ঘ-১১-১৫৩৩। এটি মিতসুবিশির স্টেশন ওয়াগন ব্র্যান্ডের জিপ। তিনি সামনে সিটে বসে হাত নেড়ে আশপাশের লোকজনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিববহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানা যায়, সালাহউদ্দিন আহমেদকে বহন করা গাড়িটি (চট্ট মেট্রো ঘ-১১-১৫৩৩) এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন। এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে এটি ২০১০ সালে নিবন্ধন করা। ঠিকানা লেখা আছে এস আলম ভবন, চট্টগ্রাম নগরের আছদগঞ্জ। এটি এস আলম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়।

বিআরটিএ চট্টগ্রামের উপপরিচালক আইনুল হুদা গাড়িটি এস আলম গ্রুপের নামে নিবন্ধন করা বলে দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে নিশ্চিত করেন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৪ জুন কক্সবাজারে জেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। ৬২ দিন পর ওই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি দেশে ফেরেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে দুবার (১৯৯৬ ও ২০০১) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদও একবার (২০০৮) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।১০ বছরের বেশি সময় পর গত বুধবার নিজ জেলা কক্সবাজারে যান সালাহউদ্দিন আহমেদ। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর দলের নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরের সঙ্গে তাঁর গ্রামের বাদি পেকুয়ায় পৌঁছান তিনি। সেখানে তাঁকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর আগে সালাহউদ্দিন আহমেদ চকরিয়া শহীদ আবদুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনালে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন।

এস আলম গ্রুপের গাড়িতে চড়ে এসে নিজ এলাকায় সংবর্ধনা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আজ রোববার বিকেলে বলেন, ‘শত শত লোক এসেছে। কার গাড়িতে উঠেছি জানি না। যে চালক গাড়িটি চালিয়েছেন, তিনি সাত-আট বছর ধরে আমার পরিবারের গাড়ি চালিয়ে আসছেন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরের কালুরঘাট এলাকার একটি কারখানা থেকে বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি বের হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, একটি কারখানা থেকে একের পর এক দামি গাড়ি বের হচ্ছে। সেখানে কয়েকজন ব্যক্তি তা তদারক করছেন। যাঁরা ভিডিওটি শেয়ার করেছেন, তাঁদের ভাষ্য, এগুলো শিল্প গ্রুপ এস আলমের গাড়ি এবং যাঁরা তত্ত্বাবধানে আছেন, তাঁরা বিএনপির নেতা-কর্মী। এ ঘটনার পর দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানসহ তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে দলটি।

ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম)। দেশের ছয়টি ব্যাংকের মালিকানা ছিল এই গ্রুপের। দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর একে একে সামনে আসে এস আলম গ্রুপের দুর্নীতি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল ইসলাম (এস আলম) ও তাঁর সহযোগী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।