• বুধবার , ২০ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা ও আরসা বিষে জর্জরিত বাংলাদেশ!


প্রকাশিত: ৫:৫৪ পিএম, ২৫ অক্টোবর ১৭ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৭ বার

আল জাজিরা বিবিসি রয়টার্স অবলম্বনে এস রহমান :  একদিকে রোহিঙ্গাদের আহাজারি অন্যদিকে আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি সংক্ষেপে Rohingya_Ata-Ullah-www.jatirkhantha.com.bdআরসা নিয়ে এখনো চলছে নানান আলোচনা। কারা এই আরসা ? আরসার নেতা কে এই আতা উল্লাহ তা নিয়েও চলছে আলোচনা। কথিত আরসার কারণেই বাংলাদেশ এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে। একদিকে রোহিঙ্গা’রা বাংলাদেশকে নানাভাবে বিপদগ্রস্থ করে তুলছে অন্যদিকে আরসা’র পলাতক সদস্যদের নিয়েও নানা উদ্বেগের কারণ রয়েছে। এছাড়া ইয়াবা চোরাচালান রুট হিসেবে বাংলাদেশে বেহাল অবস্থার সৃষ্ঠি হয়েছে।

Rohingya_Ata-Ullah-www.jatirkhantha.com.bd-00‘জাতিগত নিধনের মুখে’ রোহিঙ্গাদের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে রাখাইন রাজ্য থেকে বের করে দেওয়ার চার সপ্তাহের মাথায় সেখানে অমুসলিমদের দিয়ে সেই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা চলছে। এই বাস্তুচ্যুতির ঘটনা আরসা’ই প্রথম দায়ী। ওদিকে তাদের তৎপরতাও প্রশ্নের মুখে। কারণ, রাখাইনে যদি রোহিঙ্গারা থাকতেই না পারে, তাহলে আরসা বা বিদ্রোহীরা সেখানে ভিত্তি পাবে কীভাবে?

২৫ আগস্ট হামলার পর যখন শরণার্থীদের স্রোত বাংলাদেশে আসছিল, তাদের মধ্যে যুবক-তরুণদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। অধিকাংশই ছিল শিশু আর নারী। সে সময় এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। সেই সময় এক মধ্যবয়সী নারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছিলেন, তিনি যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁর দুই ছেলেকে রাখাইনে রেখে এসেছেন। আরেক ছেলে পরিবারের অন্য সদস্যদের কক্সবাজারে পৌঁছে দিয়ে আবার রাখাইনে চলে গেছে। সেই মা বলছিলেন, ‘আমি আমার ছেলেদের স্বাধীন আরাকানের জন্য উৎসর্গ করেছি।’ বলার অপেক্ষা রাখে না তাঁরা আরসার হয়েই লড়ছে।
Rohingya_Ata-Ullah-www.jatirkhantha.com.bd-2
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী সম্পর্কে যাঁরা খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা এটা খুব সহজেই মানবেন যে দেশটির সেনাবাহিনীর কয়েক দশক ধরে অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আজ হোক বা কাল, কোনো না কোনো একটি উগ্র প্রতিরোধপর্ব গড়ে উঠতই।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে ৩০টি পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে বিদ্রোহীরা হামলা চালায়। এ হামলার জের ধরে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্মম পাল্টা আক্রমণের মুখে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। দেখা যাচ্ছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামে একটি ‘ছায়া-গোষ্ঠী’ এই উগ্র তৎপরতা ও হামলার নেপথ্যে রয়েছে।

রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের উগ্রপন্থীদের সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে, আরসার কৌশল সাংগঠনিকভাবে এখনো খুবই দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি সব রোহিঙ্গারও এর প্রতি সমর্থন নেই।এমনকি মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে সেদিনের হামলাকে ‘সাধারণ হামলা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, সেদিন হামলাকারীরা স্থানীয়ভাবে তৈরি রামদা ও ধারালো বাঁশের মতো সাধারণ মানের অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
Rohingya_Ata-Ullah-www.jatirkhantha.com.bd-1
নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার যেসব ঘটনা ঘটছিল, এর মধ্যে দক্ষিণের উপকূলবর্তী মংডু জেলার শহর আলে থান কিঁয় পুলিশ ক্যাম্পের হামলা প্রথমদিককার এবং অন্যতম বড় হামলা। পরে এ ব্যাপারে পুলিশ কর্মকর্তা অং কিঁয় মোয়ে সেখানে পরিদর্শনে যাওয়া একদল সাংবাদিককে বলেন, হামলা সম্পর্কে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছিল এবং সবাইকে ওই রাতের আগেই ব্যারাকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার কথা বলা হয়েছিল।

রাত ৪টার দিকে দুটি দলে ভাগ হয়ে প্রায় পাঁচশ লোক বঙ্গোপসাগরের উপকূলসংলগ্ন এলাকায় এই হামলা চালায়। তাঁরা সৈকতসংলগ্ন নিজের বাড়িতে থাকা একজন অভিবাসন কর্মকর্তাকে হত্যা করে। কিন্তু খবর পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে গুলি চালালে তারা সহজেই চলে যায়। পরে সেখান থেকে ১৭টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

হামলার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া একজন রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে বিবিসির সংবাদদাতা জোনাথন হেডের কথা হয়েছে। আলাপে তিনি জানাচ্ছিলেন, কীভাবে তিনি রাখাইন থেকে বিতাড়িত হন। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে আরসার হামলার ধরন নিয়েও অভিযোগ করছিলেন এবং বলছিলেন, নিজের গ্রামের লোকজনকে বিদ্রোহীরা এই হামলার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেছিল। গ্রামের লোকজনকে তারা গরু-ছাগল দিয়ে সাহায্য করে বলেছিল, রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাধীন মাতৃভূমি কায়েমই এর প্রতিদান হবে। এ সময় তারা গ্রামের যুবকদের মধ্যে রামদা বিতরণ করে এবং তাদের কাছের পুলিশ ক্যাম্পে হামলা করার জন্য উৎসাহিত করে। তারা স্বাধীন আরাকানের জন্য গ্রামবাসীর সহায়তা চেয়েছিল।
??????????????????????????????????????????????????????????????
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ওই রোহিঙ্গা যুবক আরো বলেন, আরসা বলেছিল তাদের কাছে প্রচুর অস্ত্র আছে। হামলায় তারা পেছন থেকে সব ধরনের সহায়তা দেবে। তাঁর নিজের গ্রামের অন্তত ২৫ জন বিদ্রোহীর কথামতো কাজ করেছিল। পরে তাঁদের মধ্যে মধ্যে কেউ কেউ সেখানেই মারা গেছেন। তবে এসব সাধারণ রোহিঙ্গা সশস্ত্র বিদ্রোহীদের কাছ থেকে কোনো ‘ব্যাকআপ’ পায়নি।

বিবিসির ওই সাংবাদিকের সঙ্গে বাংলাদেশে বসবাসকারী আরেকজন বিশোর্ধ্ব রোহিঙ্গা যুবকের যোগাযোগ হয়, যিনি চার বছর আগে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। ওই যুবক জানান, ২০১৩ সালে আরসার (প্রধান) নেতা আতা উল্লাহ তাঁদের গ্রামে এসেছিলেন। তিনি তাঁদের বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি যে নির্যাতন-নীপিড়ন করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে লড়ার এখনই সময়।

আরসার নেতা প্রতিটি পাড়া থেকে পাঁচ থেকে দশজনের দল গঠন করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। পরে তাঁর গ্রামের একটি দলকে পাহাড়ের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যারা পুরোনো গাড়ির পিস্টন ব্যবহার করে বোমা বানানো শিখেছিল।

এই প্রশিক্ষণ গ্রামের লোকজনকে উৎসাহিত করে এবং তাঁরা বিদ্রোহীদের খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করতে শুরু করে। আরসায় যোগ দেওয়া ওই যুবক আরো বলেন, এভাবেই একপর্যায়ে তিনি আরসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর তাঁরা ধারালো বাঁশের অস্ত্র নিয়ে গ্রামে টহল দেওয়া শুরু করেন। সবাই যাতে মসজিদে যায়, এটাও তাঁরা নিশ্চিত করেন। তবে তিনি আরসার কাছে কোনো ধরনের বন্দুক দেখেননি বলেও জানান।
Rohingya_camp-www.jatirkhantha.com.bd
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিক টমি উইলকসের সঙ্গেও কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে এমন কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবকের সাক্ষাৎ হয়েছিল। রাখাইন রাজ্যের বুথিডং এলাকার সেই যুবকরা জানিয়েছিল, চূড়ান্তভাবে হতাশ ও উপায়হীন রোহিঙ্গাদের হামলায় উদ্ধুদ্ধ করার আরসার নেতারা একে-৪৭ বন্দুকের মতো অস্ত্রেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দিনশেষে তাঁদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই ছুরি আর বাঁশের লাঠি নিয়েই ভারী অস্ত্রে সজ্জিত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালাতে হয়েছে।

এমনকি তাঁদের বোমাসদৃশ যেসব বিস্ফোরক দেওয়া হয়েছিল, সেসবও কাজে আসেনি। কারণ, লক্ষ্য সঠিক হলেও এসব বিস্ফোরক কখনোই বিস্ফোরিত হয়নি। পাশাপাশি এটাও সত্য, আরসার বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, তাদের সদস্যরা ভারী অস্ত্র নিয়ে গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তাঁদের হাতে ছোট ছুরি ও বড় তলোয়ারের মতো অস্ত্রও রয়েছে।

তবে আরসার নেতারা গ্রামে থাকা তাঁদের সদস্যদের কাছে মোবাইলভিত্তিক অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বার্তা পাঠাতেন। ২৫ আগস্ট হামলার বার্তাও অনেকের কাছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেই আসে। আরসার গ্রাম পর্যায়ের সুনির্দিষ্ট নেতারাই এসব গ্রুপের সদস্য। এসব গ্রুপ পরিচালিত হতো সৌদি আরব বা মালয়েশিয়া থেকে।

‘বিশ্বের নজর কাড়ার জন্য’
mayanmar-armi-suchi-www.jatirkhantha.com.bd
আরসায় যোগ দেওয়া ওই রোহিঙ্গা যুবক ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে বলছিলেন, ২৫ আগস্ট দূর থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল আর আগুন দেখা যাচ্ছিল। তখন আরসার স্থানীয় আমির এসে ওই যুবককে বলে, ‘সেনাবাহিনী পথে আছে, তাদের ওপর প্রথমেই হামলা চালাতে হবে। যেকোনো সময় তোমার মৃত্যু হতে পারে।’ আমির আরো বলে, ‘সেই মৃত্যু যেন শহীদের মৃত্যু হয়।’

যুবক আরো জানান, গ্রামের সব বয়সের লোকজন ছুরি ও বাঁশ নিয়ে তৈরি হয় এবং সৈন্যদের ওপর হামলা চালায়। সেখানে অনেকেই হতাহত হয়। মারা যাওয়া অনেকের নামও বিবিসিকে জানান তিনি। তার পরই শুরু হয় পাল্টা-হামলা আর অগ্নিসংযোগ। তখন মানুষ ধানক্ষেত দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাংলাদেশের পথে রওনা দেন। স্থানীয় বৌদ্ধরাও তাঁদের বিতাড়িত করতে ভূমিকার রাখে।
তাহলে এই নিরর্থক হামলার উদ্দেশ্য কী? বিবিসির সাংবাদিক জানতে চান ওই আরসার সদস্যের কাছে।

জবাবে যুবক বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছিলাম। আমরা নানাভাবে এত নির্যাতিত ছিলাম যে, মৃত্যুও আমাদের জন্য কোনো ব্যাপার ছিল না।’আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজেদের যোগাযোগের কথা অস্বীকার করে ওই যুবক আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছি। আমরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। এটাই আসল কথা।’

ওই রোহিঙ্গা যুবকের দেওয়া ধারণামতে, আরসা কয়েকশ লোকের একটি ছোট্ট দল। এর মধ্যে মুষ্টিমেয় বিদেশিও থাকতে পারে। তবে তাদের হাজার হাজার নিরস্ত্র ও প্রশিক্ষণহীন সমর্থক রয়েছে, যারা ২৫ আগস্ট হামলার শেষ মুহূর্তে গিয়ে অংশ নেয়।২০১২ সালে রাখাইনে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী রোহিঙ্গা পরিবারের সন্তান আতা উল্লাহ আরসার সূচনা করেন।

২৫ আগস্ট তিনি একটি ভিডিওবার্তা দেন। সেখানে তাঁর দুপাশে কালো হুডি পরা সশ্রস্ত্র দুই যুবককে দেখা যায়। তিনি এই হামলাকে প্রতিরোধমূলক বলে বর্ণনা করেন এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলছে বলেও অভিযোগ করেন। অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকা রোহিঙ্গাদের বার্মিজ সেনাবাহিনীর ওপর হামলার বাইরে আর কোনো পথ খোলা ছিল না বলেও উল্লেখ করেন আরসার নেতা।

তিনি আরাকানকে রোহিঙ্গাদের ন্যায়সংগত ভূমি দাবি করে এর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা করেন। পরে আরেকটি বিবৃতিতে আতা উল্লাহ বলেন, রাখাইন রাজ্যের অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তিনি রোহিঙ্গাদের রাখাইনের সন্তান বলেই অভিহিত করেন।
তবে দেশের অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা আরসার ওই বার্তায় চাওয়া হয়নি।

বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে যে অর্থে ইসলামী ‘জঙ্গি’ বা ‘জিহাদি’ নামটি ব্যবহার করা হয়, আরসা তাদের সংগঠনকে সেভাবে দেখতে নারাজ। আরসা সেখানকার অন্যান্য ইসলামী গ্রুপকে সন্দেহের চোখে দেখে।ব্যাংককভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যান্থনি ডেভিস দীর্ঘদিন ধরেই এ অঞ্চলের উগ্রবাদী তৎপরতা নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর মতে, ‘আতা উল্লাহ ও তাঁর মুখপাত্র এটা বোঝাতে পেরেছেন যে, তাঁদের লড়াই নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদের। তাঁদের সঙ্গে ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা আল-কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁরা বিচ্ছিন্নতাবাদীও না, জিহাদিও না।’

তারপরও মিয়ানমার সরকার তার দেশের জনগণের মাঝে এটা ভালোভাবে প্রচার করতে পেরেছে যে আরসার হচ্ছে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর ষড়যন্ত্রের ফল। বিদ্রোহীরা রাখাইনকে একটি ‘ইসলামিক রিপাবলিকে’ পরিণত করতে চায়। সে দেশের গণমাধ্যমে বিদ্রোহীদের তৎপরতা নিয়ে প্রচার চালানো হলেও রোহিঙ্গাদের ব্যাপকহারে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসার সংবাদ খুবই কম প্রচার পেয়েছে।

রোহিঙ্গাদের রাখাইনের বাসিন্দা বলে আতা উল্লাহ যে মন্তব্য করেছিলেন গত মাসের শেষদিকে, সে বিষয়টির সমালোচনা করেছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। তখন হামলার ঘটনার জন্য তিনি ‘চরমপন্থী বাঙালি সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিজেদের ভূখণ্ডের কোনো অংশই ছেড়ে দেবে না। চলমান অভিযানকে ‘১৯৪২-এর অসমাপ্ত কাজ’ বলে অভিহিত করেন তিনি। ‘অসমাপ্ত কাজ’ বলতে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রোহিঙ্গারা এককভাবে ব্রিটিশদের সমর্থন দেওয়ার কথা বলেন, যখন বার্মার অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী জাপানকে সমর্থন করেছিল।

vvv‘জনসংখ্যার পুনর্ভারসাম্যকরণ’

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও দেশটির বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা উভয়েই এ ‘যুদ্ধের’ সময় পরস্পরবিরোধী অবস্থানে গিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সমর্থন দিয়েছে। মিয়ানমারের বার্মিজ ও রাখাইন জাতীয়তাবাদীরা বিশ্বাস করেন, রোহিঙ্গারা ‘বাঙালি’ এবং তাঁদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
‘জাতিগত নিধনের মুখে’ রোহিঙ্গাদের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে রাখাইন রাজ্য থেকে বের করে দেওয়ার চার সপ্তাহের মাথায় সেখানে অমুসলিমদের দিয়ে সেই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা চলছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এই বাস্তুচ্যুতির ঘটনা আরসার তৎপরতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কারণ, রাখাইনে যদি রোহিঙ্গারা থাকতেই না পারে, তাহলে আরসা বা বিদ্রোহীরা সেখানে ভিত্তি পাবে কীভাবে?

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের হামলা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের পরিস্থিতিকে আরো কঠিন করে তুলবে। আর বাংলাদেশও এ ধরনের উসকানি খুব বেশিদিন সহ্য করবে না। কারণ, এর ফলে প্রতিবেশী হিসেবে তার কাঁধেই শরণার্থীর বোঝা চাপবে। যদিও সংগত কারণেই বাংলাদেশ সব সময়ই যেকোনো সীমান্তে সংঘর্ষের বিষয়টি এড়িয়ে চলে।

আরসার সদস্য রোহিঙ্গা ওই যুবক বিবিসির সংবাদদাতাকে জানান, আরসার নেতা আতা উল্লাহ এবং বাংলাদেশে থাকা অন্য সদস্যদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। যদিও আতা উল্লাহর সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ নেই বা আরসার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কেও তাঁর কোনো ধারণা নেই। শরণার্থী ক্যাম্পের অনেক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তাঁরা আরসার উপস্থিতি নিয়ে বেশ সতর্ক। আরসা সম্পর্কে কথা বলার সময় তাঁদের মধ্যে ভীতি কাজ করছিল।

এর কারণ হচ্ছে, তথ্য দেওয়ার অপরাধে আরসার হাতে অনেককে প্রাণ দিতে হতো এমন সুনির্দিষ্ট প্রমাণও পেয়েছে বিবিসি। তারপরও বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর যে হামলা-নির্যাতন চলছে, তার বিরুদ্ধে আরসাই একমাত্র সংগঠন, যারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। যদিও রয়টার্সের কাছে অনেক সাধারণ রোহিঙ্গা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের জীবনের এই দুর্বিষহ পরিণতির জন্য আরসা বিদ্রোহীরা দায় এড়াতে পারে না।

বিশ্লেষক অ্যান্থনি ডেভিস মনে করেন, এই যে পরিস্থিতি, তা এখন কোন দিকে যাবে, সেটা নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভূমিকার ওপর। তাঁর মতে, বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ করে দিতে পারে। অথবা প্রাথমিক কিছু সাহায্য দিয়ে আরসার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। সে রকম কিছু না হলে বাংলাদেশ বা বাইরের উগ্রপন্থীরা এদের মধ্যে তৎপরতা চালিয়ে তাদের পরিচালিত করতে পারে।
vvvv
‘ডাকের জন্য প্রস্তুত তাঁরা’

শরণার্থী ক্যাম্পে রয়টার্সের সঙ্গে আলাপকালে রাথেডংয়ের যুবক (ছদ্মনাম) কামাল হোসেন (৩৫) ও ২৫ বছর বয়সী আরেক যুবক জানান, ২৫ আগস্টের হামলায় তাঁরা নিজেদের ৪০ জনকে হারিয়েছে। তারপরও এখন যদি আরসার নেতা ডাক দেন, তাহলে তাঁরা যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এমনকি নারীরাও এতে শামিল হতে পারেন।