রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সাড়া দিচ্ছেনা মিয়ানমার-আলজাজিরাকে শেখ হাসিনা
আন্তজার্তিক ডেস্ক : মিয়ানমারে হত্যা-নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাতারের দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। আলজাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্কের নেওয়া সাক্ষাৎকারটির সংক্ষিপ্ত একটি অংশ ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করেছে সংবাদমাধ্যমটি। পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি আগামী শনিবার সম্প্রচার করা হবে।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি, মিয়ানমারের আচরণ এবং ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রিত এই শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ আলোচনা শুরু করলেও মিয়ানমার ইতিবাচকভাবে সাড়া দিচ্ছে না। শরণার্থীদের অনেকে যে নিজেদের মধ্যেও সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত এবং মাদক, মানবপাচারসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে তা-ও তুলে ধরেন তিনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড ও পরিস্থিতির বিষয়ে নিক ক্লার্কের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়ন শুরু হলে তারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়। সেখানে তখন অনেক কিছুই ঘটেছে। এটা আমাদের খুব খারাপ লেগেছিল। এরপর আমরা সীমান্ত খুলে দিয়ে তাদের আসতে দিই। পাশাপাশি আমরা মানবিক কারণে তাদের সবার জন্য আশ্রয় ও চিকিৎসা দিই। ক্যাম্পের পরিবেশ খুব ভালো নয়। তবে আগুনের ঘটনাটি অতি সাম্প্রতিক।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি খুবই কঠিন। কারণ সারা বিশ্বের মনোযোগ এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং দেশটির উদ্বাস্তুদের দিকে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগদান শেষে গতকাল বুধবার বিকেলে কাতারের রাজধানী দোহা থেকে দেশে ফিরেছেন।
এর আগে গতকাল কাতারে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ এমএইচ স্কুলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংশ্লিষ্ট দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মতো উত্তরণের পথে অগ্রসরমাণ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাজারে প্রবেশাধিকার কমপক্ষে ছয় বছর বাড়ানোর পক্ষে সমর্থন চেয়েছেন। তিনি এলডিসি ৫ জাতিসংঘ সম্মেলনের সাইডলাইনে এক অনুষ্ঠানে উন্নয়ন সহযোগীদের সামনে পাঁচ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবার কাতারের কিউএনসিসি আয়োজিত ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর স্মুথ অ্যান্ড সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন : মার্চিং টুওয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমাদের উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য পাঁচটি পরামর্শ তুলে ধরতে চাই। প্রথমত, বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য কমপক্ষে ছয় বছরের জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাজারে প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণ; বাণিজ্যের জন্য সহায়তাসহ তাদের বাণিজ্য সুবিধা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান করতে হবে।
দ্বিতীয় পরামর্শে বেসরকারি খাতে প্রণোদনার মাধ্যমে উত্তরণের পথে অগ্রসর স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এফডিআইপ্রবাহ বাড়ানো এবং পারস্পরিক কল্যাণমূলক বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি হালনাগাদ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তৃতীয়ত, তিনি শিল্প সম্পর্ক উন্নত করা এবং ন্যায্য মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে দক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য বেসরকারি খাতকে সহায়তা করার উপায় অনুসন্ধানসহ উত্তরণের পথে অগ্রসর স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে টেকসই শিল্প প্রবৃদ্ধি জোরদারের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর চতুর্থ পরামর্শে বলেন, উদ্ভাবনী অর্থায়নের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে উত্তরণ পর্বে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ঋণের খরচ সহনশীল থাকে। পঞ্চম সুপারিশে তিনি এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে কার্যকর ভৌত ও ডিজিটাল অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নের ওপর জোর দেন এবং মানব পুঁজি গঠন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে অব্যাহত বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।