• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

রুপের জালে কালোটাকায় মানবপাচার বানিজ্য ফুলেফেঁপে ক্রোড়পতি রেজিয়া


প্রকাশিত: ৯:২৪ পিএম, ২৬ মে ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৪ বার

rajia-crorpoti manobpacherkari-www.jatirkhantha.com.bdএস রহমান.ঢাকা:  রেজিয়া আক্তার রেবি ওরফে রেবি ম্যাডাম মানব পাচার করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন । মানব পাচার করে  একাধিক দামি গাড়ি রয়েছে আলিশান বাড়িও। সামান্য এক কৃষকের স্ত্রী রেবি মানব পাচার করে আজ কোটি কোটি টাকার বিত্তবৈভবের মালিক। কক্সবাজারের উখিয়ার মানব পাচার সম্রাজ্ঞী রেবি সাগরপথে পাচার করেছেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।
কয়েকবার গ্রেফতারও হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। পুলিশ তাকে রিমান্ডেও নিয়েছেন। তার স্বামী নুরুল কবিরও পুলিশের খাতায় একজন শীর্ষ মানব পাচারকারী। তিনিও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে একাধিকবার জেল খাটেন। বতর্মানে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানিয়েছেন, মানব পাচারকারী যতই শক্তিশালী হোক, তাকে ধরা পড়তেই হবে।
কক্সবাজারের টেকনাফে এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে মানব পাচারকারী নেই। এখানে মানব পাচার করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন অনেকেই। এখন তাদের রয়েছে বিশাল অট্টালিকা আলিশান বাড়ি, দামি গাড়ি। বাড়ি পাহারা দিতে রয়েছে ৮-১০ জন করে গার্ড।
উপকূলীয় এলাকায় দাবড়িয়ে বেড়ানো রেবি ম্যাডামের নিয়ন্ত্রণে সংঘবদ্ধ একটি চক্র, যার সদস্য সংখ্যা ৫০। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় রয়েছে মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে তিনটি মামলা। এ ছাড়াও কক্সবাজার সদর থানায় রয়েছে দুটি মানব পাচার মামলা। তার স্বামী নুরুল কবিরের বিরুদ্ধেও রয়েছে মানব পাচারের ছয়টি মামলা।
এলাকাবাসী জানান, উখিয়া উপকূলীয় জালিয়াপালং ইউনিয়নের শীর্ষ মানব পাচারকারী হিসেবে কুখ্যাত রেবি। সবাই এক নামে চেনে। স্থানীয়রা জানান, সোনারপাড়া গ্রামের এক সময়ের হতদরিদ্র কৃষক নুরুল কবিরের স্ত্রী রেজিয়া আক্তার এখন ভারতের দস্যুরানী ফুলনদেবীর সঙ্গেই তুলনীয়। পুলিশের খাতায় নাম থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নাম না থাকায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ।
তারা জানান, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের আশীর্বাদ থাকায় মানব পাচার মামলা থেকে তিনি বারবার রক্ষা পেয়ে যাচ্ছেন। ২০১২ সাল থেকে রেবি ম্যাডাম মানব পাচারে সরাসরি জড়িত হন। তার স্বামী নুরুল কবির বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন সংগ্রহ করে তার বাড়িতে রেখে সুযোগ বুঝে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দিতেন ট্রলারে করে। এভাবে চলতে থাকে তার মানব পাচার বাণিজ্য।
ধীরে ধীরে এই রেবি ম্যাডাম কোটিপতির তালিকায় নাম উঠে যাওয়ার কারণে এলাকায় কাউকে পরোয়া না করে প্রকাশ্যে এ জঘন্যতম কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তার হাতে পাচারের শিকার অনেকে মারা গেছেন। নিখোঁজ রয়েছেন অনেক নিরীহ মানুষ। স্থানীয়রা জানান, রেবি এক সময় জীবনবীমা কোম্পানিতে চাকরির মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করলেও তার সংসারে ছিল অনটন। স্বামী নুরুল কবির সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আনার জন্য মানব পাচার কাজে জড়িয়ে পড়েন।
এ সময় উপকূলের মেরিন ড্রাইভ ও কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের কোটবাজার সি-বিচ সড়ক দিয়ে অহরহ লোকজন জড়ো হতো সোনারপাড়া বাজারে। বলতে গেলে এ সময় সোনারপাড়া, ইনানী, নিদানিয়া এলাকায় মালয়েশিয়া যাত্রীর হাট বসত। নুরুল কবির এ সময় লোকজন সংগ্রহ করে সাগরপথে পাচার করে দেওয়ার জন্য কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হলে তার বাড়িতে এসব লোকজনকে আশ্রয় দিয়ে রাখতেন। থাকা-খাওয়া বাবদ তারা স্বামী-স্ত্রী অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অসহায় মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু যাত্রীদের কাছ থেকে।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি রেবি ম্যাডামকে মানব পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করে কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশ।
এর আগে তার স্বামী নুরুল কবিরকে মানব পাচারের অভিযোগে উখিয়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। ইতিমধ্যে রেবি ম্যাডাম জামিনে মুক্ত হয়ে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর স্বামীকে মুক্ত করার জন্য কক্সবাজার আদালতপাড়ায় তদবিরের জন্য ঘোরাঘুরি করাকালে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে আটক করে। এ সময় পুলিশ তার ভ্যানিটি ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে ৮৪ লাখ টাকা এবং ২৭ লাখ টাকার দুটি ব্যাংকের চেকও উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে।
কিন্তু বারবার আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসার সুযোগ পেয়ে ফের বেপরোয়াভাবে জড়িয়ে পড়েন মানব পাচার বাণিজ্যে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে মানব পাচারের তথ্য প্রকাশ করার অভিযোগে রেবি ম্যাডামের নেতৃত্বে ২০-৩০ জনের ক্যাডার বাহিনী সোনারপাড়া বাজারে উপজেলা মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদের মালিকানাধীন ওষুধের দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
এ সময় হামলায় আহত হন আবদুল হামিদ। এ ঘটনায় উখিয়া থানায় আবদুল হামিদ বাদী হয়ে রেবিসহ ১১ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও তা থমকে আছে। জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোছাইন চৌধুরী জানান, রেবি এলাকার জন্য অভিশাপ।
তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনের তত্ত্বাবধায়নে উপকূলীয় এলাকা দিয়ে হাজারেরও অধিক লোকজনকে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দেওয়া হয়েছে।