• বুধবার , ২৭ নভেম্বর ২০২৪

রাজকীয় বিদায় আবদুল হামিদের


প্রকাশিত: ৩:২২ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৩ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজকীয় বিদায় নিলেন আবদুল হামিদ। টানা ১০ বছরের অধ্যায় শেষে বঙ্গভবন ছাড়লেন বিদায়ী রাষ্টপতি মো. আবদুল হামিদ। রাজসিক বিদায় অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে মোটর শোভাযাত্রায় বঙ্গভবন থেকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর নিকুঞ্জে তার নিজের বাড়ি রাষ্ট্রপতি লজে। রবিবার (২৩ এপ্রিল) বঙ্গভবনে শেষ কার্যদিবস শেষে সোমবার বিদায়বেলায় তিনি নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে তার কার্যালয়ের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেন। এর আগে বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন সাহাবুদ্দিন।

নিকুঞ্জ-১ এলাকায় আবদুল হামিদের তিনতলা বাড়ি আগেই আসবাবসহ সব সরঞ্জাম দিয়ে বসবাসের জন্য প্রস্তুত করা হয়। নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা।
বঙ্গভবন ছাড়ার সময় বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) একটি সুসজ্জিত চৌকস অশ্বারোহী দল অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বঙ্গভবন গেট থেকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান। মাঝখান দিয়ে খোলা জিপে করে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি যান। তার খোলা জিপে ফুলের পাপড়ি ছুঁড়ে তাকে বিদায় জানানো হয়। এরপর সেখান থেকে বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে শেষবারের মতো মোটর শোভাযাত্রায় নিকুঞ্জের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রবীণ রাজনীতিক আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথম দফায় দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ২১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান বিদেশে চিকিৎসাধীন জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে আবদুল হামিদ কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে সাতবার আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এ সফল রাজনীতিবিদ।

অবসরে যেসব সুবিধা পাবেন

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন ছেড়ে অবসরে গেলেও আবদুল হামিদ আইন অনুযায়ী অবসর ভাতা, একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসাসুবিধা সহ অন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি সর্বশেষ যে মাসিক বেতন পেতেন, তার ৭৫ শতাংশ হারে তিনি আমৃত্যু মাসিক অবসর ভাতা পাবেন। আবার অবসর ভাতা পাওয়ার যোগ্য একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতার পরিবর্তে আনুতোষিকও (এককালীন অর্থ) নিতে পারেন।
অবসরে গিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে একজন ব্যক্তিগত সহকারী এবং একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী) পাবেন আবদুল হামিদ। একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসাসুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসাসুবিধা পাবেন।
এছাড়া আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ, সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট, দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় থাকার সুবিধা পাবেন। এছাড়া সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দাপ্তরিক ব্যয়ও পাবেন তিনি।

নিকুঞ্জের বাসভবনে আবদুল হামিদ

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় রাষ্ট্রপতির আসনে থাকা মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবন ছেড়েছেন। সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে বঙ্গভবনে রাজসিক সংবর্ধনার পর রাজধানীর নিকুঞ্জের বাসায় পৌঁছান তিনি। এরপর প্রায় ১০ মিনিট তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি কথা বলেন। এর আগে, বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে বঙ্গভবন থেকে বের হন তিনি। গতকাল (২৩ এপ্রিল) রোববার ছিল বঙ্গভবনে আবদুল হামিদের শেষ কার্যদিবস।

বঙ্গভবন ছাড়ার আগে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন তিনি। এরপর বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এটিই দেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতিকে সামরিক কায়দায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হলো। নানা অনুষ্ঠানিকতা শেষে আবদুল হামিদকে নিকুঞ্জের বাসায় নেওয়া হয়।
আবদুল হামিদের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, নিকুঞ্জ-১ এর ক-ব্লকের ৩ নম্বর রোডের এই বাসা নতুন ঠিকানায় থাকবেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। সেখানে ইতোমধ্যে পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী স্থানান্তর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে।