রাজউকের মহাদুর্নীতিবাজ সিরাজুলের নায়েব ও সোহাগ আঙ্গুল ফুলে বটগাছ-
বিশেষ প্রতিনিধি : রাজউকের মহাদুর্নীতিবাজ সিরাজুলের নায়েবে আমীর-নায়েব ও সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রাজউকের কালো বেড়াল ধরা পড়বে বলে জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা।সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বের সিন্ডিকেট মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, বাণিজ্যিক এলাকায় আবাসিক ভবন নির্মাণে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দিয়েছেন আঙ্গুল ফুলে বটগাছ বনেছেন।
দুদক জানায়, ভয়াবহ অনিয়ম, দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি এবং গ্রাহকদের জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে তার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
দুদকের একটি সূত্র জানায়, রাজউকের বিদ্যমান বিতর্কিত বিশদ নগর অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) কাটছাঁট করে নিজের সুবিধামতো ভূমি ছাড়পত্র দিয়েছেন সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট। মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, বাণিজ্যিক এলাকায় আবাসিক ভবন নির্মাণে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দিয়েছেন হরহামেশা। আর এসব অবৈধ কার্যক্রম রাজউকের বোর্ড সভা, ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিকে ভুল বুঝিয়ে অনুমোদনও করে নিয়েছেন তিনি।
এতে করে ড্যাপ গঠনের উদ্দেশ্য যেমন ভেস্তে গেছে, তেমনি ক্ষুন্ন হয়েছে সরকারের ইমেজ। এসব ঘটনার নিখুঁত তদন্তের স্বার্থে ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র তলব করে ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছে দুদক। বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে গতকাল দুদক কার্যালয়ে দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত সিরাজুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে তাকে দুদুকে হাজির হতে নোটিশ দেয়া হয়।
দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ে ভয়ে কাঁপছিলেন সিরাজুল ইসলাম। তাকে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। এ সময় তিনি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে এলোমেলো জবাব দেন। ৯৪নং ইন্দিরা রোডের মৃত নজরুল ইসলামকে জীবিত দেখিয়ে তার নামে ১০ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন দিয়ে দুর্নীতির রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন এই সিরাজুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নির্বাক থাকেন রাজউকের মহাদুর্নীতিবাজ সিরাজুল ইসলাম। দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট আবাসিক প্লট হলেও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়। আর এই প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন রাজউকের বর্তমান প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম। এসব বিষয়েও দুদকের পক্ষ থেকে যে ক’টি প্রশ্ন করা হয় সিরাজুল ইসলাম একটিরও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গঠনের পর বিদ্যমান বিতর্কিত ড্যাপের ভুল-ক্রুটি সংশোধনের জন্য প্রায় আড়াই হাজার আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্য থেকে সর্বশেষ সভায় মাত্র ১০৫টি আবেদন উত্থাপন করে রাজউক। সেগুলোর সবই প্রভাবশালী মহলের।
এর মধ্যে ৫১টি আবেদন ছিল অযৌক্তিক। মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সেসব আবেদন উত্থাপন করেন আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সিরাজুল ইসলাম। যদিও মন্ত্রিসভা কমিটি সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে মাত্র ৫০টির অনুমোদন দিয়েছে। বাকিগুলো বাদ দেয়া হয়। এখনও রাজউকের পরিকল্পনা শাখায় প্রায় ২ হাজার ৩০০ ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আবেদন জমা পড়ে আছে। এসব রয়েছে তার নিয়ন্ত্রণে।
ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আবেদনের সঙ্গে ঘুষ গ্রহণের সুযোগ থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও সেসব থেকে দূরে রেখেছেন সিরাজুল ইসলাম। নায়েব নামে তার কম্পিউটার অপারেটরকে এসব কাজে ব্যবহার করছেন। আর তার দুর্নীতির আরেক সঙ্গী হচ্ছেন রাজউকের উপনগর পরিকল্পনাবিদ কামরুল হাসান সোহাগ।
দুদক সিরাজুল ইসলামের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করলেও দুর্নীতির বরপুত্রের একান্ত সহযোগী কামরুল হাসান সোহাগ ও কম্পিউটার অপারেটর নায়েবের ব্যাপারে তদন্ত না করায় রাজউকের অনেকে মনে করছেন, এভাবে তদন্ত করলে সঠিক চিত্র বের করে আনা কঠিন হবে।
এজন্য রাজউকের সৎ কর্মকর্তারা চান, কামরুল হাসান সোহাগ ও নায়েবের বিরুদ্ধে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের অনিয়ম নিয়ে দুদকের তদন্ত করা প্রয়োজন। প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস এলাকা এবং বাংলাদেশের রাজধানী শহরের মাস্টার প্ল্যান নিয়ে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক এটা রাজউকের বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী চান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল জানান, রাজউকের দুর্নীতির ঘটনায় যারাই জড়িত থাকবে, অনুসন্ধান ও তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে।