• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

রতনের পেটে ৪ হাজার কোটি-বিদেশে পলায়নকালে বাড্ডায় পাকড়াও


প্রকাশিত: ১২:০৩ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২৩ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৩ বার

তার কাছে অগ্রণী ব‍্যাংক, জনতা ব‍্যাংক, কমার্স ব‍্যাংক, সাউথইস্ট ব‍্যাংকসহ বিভিন্ন ব‍্যাংকের প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি মামলা চলমান রয়েছে।

 

শফিক রহমান : অবশেষে শীর্ষ ঋণখেলাপি নূরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জহির আহমেদ রতনকে গ্রেপ্তার করেছে বাড্ডা থানা পুলিশ। তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শোধ না করে বিদেশে পালানোর পথ খুঁজছিলেন। তাকে পাকড়াও করতে পাসপোর্ট জব্দ ও তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল চট্টগ্রামের একটি আদালত।

চট্টগ্রামে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করার দায়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দিয়েছিলেন। জহির আহমেদ রতন ছাড়াও ওয়ান্টেড রয়েছেন তার বাবা আলহাজ আবদুল খালেক ও তার মা নুরজাহান বেগম।ঋণখেলাপি মামলায় বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশ রাজধানী ঢাকার বাড্ডা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

জানা গেছে, সর্বশেষ ন্যাশনাল ব্যাংকের ১১৮ কোটি টাকা মেরে দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমদ রতন। তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা মেরেশোধ না করে বিদেশে পালানোর পথ খুঁজছিলেন।

চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম ওবায়দুল হক দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, একাধিক ঋণখেলাপি মামলায় নূরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। ওই পরোয়ানামূলে বৃহস্পতিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার বাড্ডা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত সূত্রে জানা যায়, ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের অন্যতম ব্যবসায়ী জহির আহমেদ রতন নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করায় বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণখেলাপি হন। তার কাছে অগ্রণী ব‍্যাংক, জনতা ব‍্যাংক, কমার্স ব‍্যাংক, সাউথইস্ট ব‍্যাংকসহ বিভিন্ন ব‍্যাংকের প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি মামলা চলমান রয়েছে। অর্থঋণ আদালত তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টসহ দেশত‍্যাগের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছেন।

এর আগে ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে নূরজাহান গ্রুপের পরিচালক ও জহির আহমেদ রতনের ছোট ভাই টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তার করেছিল চট্টগ্রামের খুলশি থানা পুলিশ। টিপু সুলতানের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন ব্যাংকের ২০টি মামলায় অন্তত ১৭টিতে সাজা রয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশের কপি এবং আগের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপি অতিরিক্ত আইজিপি (বিশেষ শাখা), অফিসার ইনচার্জ (বিশেষ শাখা), শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

কে এই লুটেরা রতন-

বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণখেলাপের দায়ে বিভিন্ন সময় আলোচনায় আসা জহির আহমদ রতন ১১৮ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৩ টাকা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। সবমিলিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর শোধ করছেন না।

অভিযোগ করা হয়েছে, ঋণের বিপুল টাকা তিনি কানাডায় পাচার করেছেন। তার স্ত্রী ও সন্তানও ইতিমধ্যে কানাডায় পাড়ি দিয়েছে।নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমদ রতনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা কমপক্ষে ১৫টি মামলা রয়েছে। আদালত এর আগেও ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন।

মামলার আদেশে আদালত জানান, ন্যাশনাল ব্যাংকের করা মামলার আসামি জহির আহমেদ রতন দেশের একজন শীর্ষ ঋণখেলাপি। এই জারি মামলাসহ অন্যান্য মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করেনি নূরজাহান গ্রুপ।আদালত আরও জানান, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা বর্তমানে কানাডায় বসবাস করেন। এমডি গ্রেপ্তার এড়াতে বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি যদি দেশ ত্যাগ করতে পারেন, তাহলে একাধিক ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

আদালত আরও জানায়, আসামির গৃহীত ঋণের বিপরীতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক না থাকায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুর তিন মাস অতিবাহিত হলেও ব্যাংকের কোনো টাকা পরিশোধ না করে তিনি পলাতক রয়েছেন। আদালতের জুডিশিয়াল রেকর্ড অনুযায়ী, জহির আহমেদের বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দাবিকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকার বেশি। কোনো মামলায় টাকা পরিশোধের সদিচ্ছার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।