যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে নায়িকারা কানে
বিনোদন প্রতিনিধি : এবার যৌনহেনস্তার প্রতিবাদে নায়িকারা কান চলচ্চিত্র উৎসব গরম করে তুলেছেন ইতিমধ্যে। গত ৮ মে শুরু হয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসব। এ উৎসব চলবে ১৯ মে পর্যন্ত।কান চলচ্চিত্রের ইতিহাসে গত ৭০ বছরে এমনটা ঘটেনি। গত বছর থেকে হলিউডে একের পর এক যৌন হেনস্তা’র নানা কাহিনী বেরিয়ে আসার পর পরিস্থিতি এবার অনেকটাই ভিন্ন। প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের হাতে চার অভিনেত্রী এই কান উৎসবে এসেই হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন।
এরপর অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব, গ্র্যামি পুরস্কারের মতো কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭১তম আসরেও ‘# মি টু’ এবং ‘টাইমস আপ’ আন্দোলনের ছোঁয়া লেগেছে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট ৮২ জন নারীকে গতকাল শনিবার দেখা গেছে কানের লালগালিচায়।
কানে পালে দো ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে প্রবেশের মূল ফটকের সামনে এই প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রধান বিচারক হলিউড অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন অভিনেত্রী ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট, জেন ফন্ডা, সালমা হায়েক, মারিয়ন কঁতিয়ারসহ আরও অনেক তারকা।
৮২ জন নারীকেই কেন এভাবে প্রতিবাদ করতে হলো? জানা গেছে, কানের ৭১ বছরের ইতিহাসে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে এ পর্যন্ত ৮২ জন নারী নির্মাতার ছবি স্থান পেয়েছে। তাই ‘# মি টু’ এবং ‘টাইমস আপ’ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে ৮২ জন নারী জড়ো হন।
৮২ জন নারীর পক্ষ থেকে লিখিত বিবৃতি পড়েন বরেণ্য ফরাসি নারী নির্মাতা আনিয়েস বারদা ও অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নারী হিসেবে আমাদের প্রত্যেককেই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু নিজেদের সংকল্প আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের প্রতীক হিসেবে আজ আমরা এই সিঁড়িতে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি।’ বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে যে নারীরা কাজ করছেন, এখানে তাঁদের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার ডাক দেন এই নারীরা।
কান উৎসবে নারীদের এমন প্রতিবাদ এবারই প্রথম, তা নয়। এর আগে লালগালিচায় অভিনেত্রীরা কী পোশাক পরবেন, হিলওয়ালা উঁচু জুতা পরবেন কি পরবেন না, এসব বিতর্ক হয়েছে। তবে হার্ভি-কাণ্ডের পর বিতর্ক তার চরম সীমায় পৌঁছেছে। স্কটিশ চিত্রনাট্যকার কেইট মুওর কানকে ‘দুই সপ্তাহের পুরুষ বুদ্ধি ও নারী সৌন্দর্যের’ উৎসব বলে অভিহিত করেছেন।
হার্ভি-কাণ্ডের পর কান উৎসব পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমোও বলতে বাধ্য হয়েছেন, কান আর আগের মতো কখনোই থাকবে না। তাই হয়তো উৎসব কর্তৃপক্ষ এবার নারীদের জন্য প্রথমবারের মতো খুলেছে হেল্পলাইন।কিন্তু ফ্রেমোর আরেকটি পদক্ষেপ খেপিয়ে তুলেছে প্রতিবাদকারীদের।
তিনি ডেনমার্কের নির্মাতা লার্স ফন ট্রিয়ারের ওপর থেকে সাত বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন। এতে অবাক হয়েছেন অনেকে, কারণ ট্রিয়ারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল যৌন হয়রানির। ট্রিয়ারের ছবিটি মনোনয়ন পেয়েছে ‘আউট অব কমপিটিশন’ বিভাগে।
কানের সেরা ছবির বিচারে এবারই সবচেয়ে বেশি নারী বিচারক থাকছেন। নয় সদস্যের প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরিবোর্ডে আছেন কেট, ক্রিস্টেনসহ পাঁচ নারী। উৎসবের বিরুদ্ধে এবারও উঠেছে ‘সেক্সিজম’-এর অভিযোগ। বেশি বিচারক থাকলেও প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিযোগিতা বিভাগে নারী নির্মাতার ছবি এত কম কেন। ২১টি ছবির নির্মাতাদের মধ্যে নারী নির্মাতা মাত্র তিনজন।
উৎসব শুরুর আগে প্রধান বিচারক কেট ব্ল্যানচেট বলেছেন, ‘এবার জুরিতে অনেক নারী আছেন ঠিক, কিন্তু প্রতিযোগিতায় আরও নারী থাকলে ভালো হতো।’ তিনি আরও বলেন, এটা সত্যি যে পরিস্থিতি বদলেছে। কিন্তু সত্যিকারের বৈচিত্র্যের জন্য আরও অনেক নারীর অংশগ্রহণ লাগবে।