যাচ্ছে ইলিশ আসছে ডাইল-রাজশাহী সীমান্তে জমজমাট চোরাচালান
বাঘা ও রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হচ্ছে দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ।ঠিক তেমনিভাবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ বিনিময়ে, মাসিক চুক্তিতে ইলিশ মাছ পাচার হয়ে আসছে ডাইল (ফেনসিডিল)। মাসোহারার বিনিময়ে প্রতিনিয়ত রাজশাহীর বাঘা-চারঘাটের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ডাইল- ইলিশ লেনদেন হচ্ছে।
ইলিশ পাচার করে তার বিনিময়ে চোরাকারবারিরা ভারত থেকে মাদক ছাড়াও চিনিও চোরাচালান করছে। নিয়ে আসা হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের মাদক। এতে একদিকে মাদকে আসক্ত হচ্ছে যুবসমাজ, অন্যদিকে ইলিশ চলে যাচ্ছে ভারতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে ফেনসিডিল আমদানি ও ইলিশ পাচার চলছেই। তবে বিজিবি অভিযান চালিয়ে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো ইলিশ ও ফেনসিডিল জব্দ করছে।
জানা গেছে, পদ্মার পানি বাড়ায় রাজশাহীর বাঘা-চারঘাটের সীমান্ত এলাকার নদীপথ বেছে নিয়েছে চোরাকারবারিরা। কৌশলে ভারতীয়রা ইলিশ নিয়ে মাদকের চালান পাঠাচ্ছে। জড়িতরা অধিকাংশই মাদককারবারি। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, বাজারে ইলিশের দাম নাগালের বাইরে। উপজেলার দিঘা গ্রামের নিম্ন আয়ের সুফিয়া বেওয়ার ভাষ্য, তিনি ৮ থেকে ১০ বছর ইলিশের স্বাদ নিতে পারেননি।
বাঘার মীরগঞ্জ-আলাইপুর, চারঘাটের রাউথা ও পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সীমান্ত খুবই কাছে। মাছ ধরার অজুহাতে দুই দেশের জেলেরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে নদীতে চলাচল করে। সুযোগ মতো ভারতের জেলেরা ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকপণ্য দিয়ে ইলিশ নিয়ে যায়। বিনিময়ে চোরাকাবারিরা পায় মোটা অঙ্কের টাকা। রাতের অন্ধকারে সীমান্তে এসব কারবার চলে।
মীরগঞ্জ সীমান্তের আবুল (ছদ্মনাম) জানান, সীমান্তরক্ষীদের টহলের ফাঁকে ফাঁকে ইলিশ পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। চারঘাট সীমান্ত এলাকার নাঈম (ছদ্মনাম) জানান, চোরাকারবারিদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী। তারা যোগাযোগ সহজ করার জন্য ভারতের সিমও ব্যবহার করে।জানা গেছে, গত আগস্ট মাসে বিজিবি ও জনতা মিলে ২৪০ কেজি ইলিশ আটক করে।
এর মধ্যে বাঘা সীমান্তে ৮০ কেজি, মশিদপুর খেয়াঘাটে ১৪০ কেজি, কিশোরপুর তাগাদিপাড়া থেকে ২০ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। পরে নিলামে মাছগুলো বিক্রি করা হয়। একইভাবে সম্প্রতি চারঘাটের মুক্তারপুর গ্রাম থেকে ৪০০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে রাজশাহীর ডিবি পুলিশ। এছাড়া গত আগস্টে বাঘায় পৃথক অভিযানে ১ হাজার ১৭৮ বোতল, ৭১৯ বোতল, ৫৫০ বোতল, ২৬০ বোতল ও ১৭৪ বোতল ফেনসিডিল জব্দ হয়। এসব ঘটনায় জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেও ধরা হয়।
চারঘাট ও বাঘা থানা সূত্রে জানা যায়, দুই থানায় হওয়া মামলাগুলোর অধিকাংশ মাদক-সংক্রান্ত। গত মাসে ইলিশ পাচারের অভিযোগে বাঘা থানায় তিনটি মামলা হয়েছে।
চোরাকারবারিরা আড়ানী, ঈশ্বরদী, নাটোরসহ বিভিন্ন আড়ত থেকে ইলিশ নিয়ে পাচার করছে। আড়ানীর ইলিশ মাছের আড়তদার বাবলু হালদারসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, চাঁদপুর থেকে আসা ইলিশ অনেকে কার্টন কার্টন কিনে নিচ্ছে। এসব ইলিশ তারা কোথায় বিক্রি করছে, তা তিনি জানেন না।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা রবি বলেন, রাতের আঁধারে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নদীপথে ভারতে পাচার হয়। বিনিময়ে ভারতের ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক দেশে ঢোকানো হচ্ছে।জানা গেছে, ভারতে বিক্রি হওয়া এক কেজি ইলিশের দামে ৫ থেকে ৬ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যাচ্ছে। চারঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, নদীতে পানি বাড়ায় পাচারকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন হচ্ছে।
বিজিবি আলাইপুর ক্যাম্প (বিওপি) কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, গত মাসে তিনি ১০টি মামলা করেছেন। জব্দ করা মাছ নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। পাচার রোধে কঠোর থাকবে বিজিবি।বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, পুলিশকে নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এর পরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তথ্য থাকলে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।