• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

মোদি উচ্ছাস বাংলাদেশে-তবে তিস্তায় নিরব থাকবেন তিনি ?


প্রকাশিত: ১১:২৮ পিএম, ৩১ মে ১৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৫ বার


আন্তজার্তিক ডেস্ক রিপোর্টার.ঢাকা:

 

মোদি উচ্ছাস বাংলাদেশে-তবে তিস্তায় নিরব থাকবেন তিনি ? ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে তিস্তার পানি চুক্তির বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলবেন না। তাঁর সফরে যৌথ বিবৃতিতেও তিস্তার বিষয়টিmodi-hasina-www.jatirkhantha.com.bd উল্লেখ থাকবে না। এরপরও আগামী ৬ জুনে দুদিনের ঢাকা সফরে নয়া অধ্যায় শুরুই মোদির লক্ষ্য। আজ রোববার ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জাহাজ চলাচল বিষয়ক একটি চুক্তির খসড়ায় আজ রোববার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।

কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষালের ‘ঢাকায় নয়া অধ্যায় শুরুই লক্ষ্য মোদির’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি তোলা হবেই। তবে প্রকাশ্যে তিস্তা নিয়ে মোদি কোনো কথা বলবেন না বলেই ঠিক হয়েছে। এমনকি কোনো যৌথ বিবৃতিতেও তিস্তার উল্লেখ থাকবে না। কিন্তু গঙ্গা এবং তিস্তা ছাড়া আরও যে ৫৪টি নদীর জলবণ্টন ঘিরে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে, তার সবই খতিয়ে দেখার একটা আশ্বাস ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া হতে পারে। এই বিষয়গুলোকে যৌথ নদী কমিশনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টাও হতে পারে বলে সূত্রের খবর। তবে তিস্তা জট ছাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর তরফে উদ্যোগ যে নেওয়া হবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’

আনন্দবাজার পত্রিকার ভাষায়, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে তাঁর ঢাকা সফর এক নতুন অধ্যায় সূচিত করতে চলেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল শনিবার আনন্দবাজারকে মোদি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শান্তি এবং স্থায়িত্ব নিয়ে আসবে।’

মোদি বলেন, ‘সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে সংসদের অনুমোদন নিয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিটি করতে চলেছে ভারত। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে এই সীমান্ত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পরও সেই বিতর্ক বহাল রয়ে গিয়েছে। আমরা এই বিতর্কের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করছি এবং সেটা সর্বসম্মতির ভিত্তিতে। এটা আদৌ সামান্য ঘটনা নয়।’ সীমান্ত নিয়ে মনোমালিন্য মিটে গেলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব আরও মজবুত হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ রোববার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ নিয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়েছে। এগুলো মূলত বন্দর, জলপথে বাণিজ্য, মানবপাচার-বিরোধী পদক্ষেপ ইত্যাদি নিয়ে। এই সফরকে কেন তিনি এতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের তা জানান মোদি। তাঁর বক্তব্য, ‘আয়তনে বাংলাদেশ ছোট হলেও আমাদের কাছে তার ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক।’ শেখ হাসিনার সরকার বেশ কয়েক বছর ধরেই যে সন্ত্রাস দমনে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদি। আর এই পরিস্থিতিতে তিনি মনে করেন, উন্নয়নই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করার কাজে সব চেয়ে বড় হাতিয়ার হতে পারে। দুই দেশের যোগাযোগ যত বাড়বে, ততই বাড়বে পারস্পরিক আস্থাও। সেই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতেই একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে দিল্লি। আর যোগাযোগ বাড়াতে কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে আগরতলা পর্যন্ত তৈরি হয়েছে নতুন বাস যোগাযোগ।
জাহাজ চলাচল চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, আজকের মন্ত্রিসভায় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে জাহাজ চলাচল বিষয়ক একটি চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুসারে দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনের পথ আরও সুগম হবে। সীমান্তবর্তী এলাকায় যেখানে যেখানে চেকপোস্ট আছে, ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন আছে, সেখানে দ্রুত সড়ক তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আজকের বৈঠকে।
আনন্দবাজারের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্র তাদের বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় এই মুহূর্তে বাংলাদেশই ভারতের সব চেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী। ফলে এই চুক্তি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আজ মানবপাচার-বিরোধী এক বিশেষ সমঝোতা স্মারকও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

রাজনৈতিক মতৈক্য তুলে ধরতেই সফরসঙ্গী মমতা
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক মতৈক্যর ছবিটি ঢাকায় সামনে তুলে ধরতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সফরসঙ্গী হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মোদি। মমতা ৫ তারিখ রাতেই ঢাকা পৌঁছাবেন। ৬ তারিখই ফিরছেন মমতা। মোদি ফিরবেন এক দিন পরে, ৭ তারিখে।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সূত্রে বলা হচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে স্থলসীমান্তের সব চেয়ে বড় অংশটি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সেই কারণে মোদির এই সফরে মমতার সঙ্গী হওয়াটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
মনমোহন সিংহের জমানায় তিস্তা নিয়ে যে সমাধানসূত্রটি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল শুকনা মৌসুমে তিস্তায় যে পরিমাণ পানি থাকবে, তা সমান ভাগে ভাগাভাগি হবে। এর মধ্যে আবার প্রত্যেক দেশ থেকেই চার ভাগ জল বরাদ্দ করা হবে নদী খাতে নাব্যতা বজায় রাখতে চার্জিংয়ের জন্য। কিন্তু মমতা এই প্রস্তাবে রাজি হননি। তাঁর যুক্তি, শুকনা মৌসুমে তিস্তায় কার্যত পানিই থাকে না। আর বর্ষার সময় বাংলাদেশ যে পানি পায় প্রকৃতির নিয়মেই। তাই সমস্যা মূলত শুকনা মৌসুমেই। এ দিকে সিকিম রাজ্যে তিস্তায় প্রায় ৮টি হাইড্রলিক বাঁধ তৈরি করেছে। মমতার আপত্তি রয়েছে এ নিয়েও। সিকিমের বক্তব্য, তারা পানি আটকে বাঁধ দেয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তবু দাবি করে আসছেন, সিকিমের এই দাবি যাচাই করার দায়িত্ব পুরোপুরি কেন্দ্রের।