মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজন্টে পপুলারের ব্যবসা
বিশেষ প্রতিনিধি : মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজন্ট ব্যবহার করে ব্যবসা করায় রাজধানীর ধানমন্ডি-২ নম্বর সড়কের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।দুই বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট (ডায়াগনস্টিক টেস্টে রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান) ব্যবহার এবং ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করায় র্যাবের অভিযানে এই জরিমানা করা হয়।
এমনকি রি-এজেন্টে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পরিবর্তন করে জেলা শহরের বিভিন্ন শাখায়ও পাঠানো হতো।সোমবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানটি চালানো হয়েছে। একটি অভিযোগ ছিল, ময়মনসিংহে পপুলারের শাখায় ঢাকা থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট পাঠানো হতো। বাক্সের গায়ে ২০১৬ সালের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বদলে তারা নতুন করে ২০১৮ সাল লিখত।
তিনি বলেন, ধানমণ্ডিতে অভিযানে এসে এই অভিযোগের সত্যতা পাই। তাদের ল্যাবের মেশিনের ভেতরে, স্টোররুমে বিপুল পরিমাণে মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট পাওয়া গেছে। এসব রি-এজেন্টের মধ্যে কোনোটির মেয়াদ ২০১৬ সালে আবার কোনোটির মেয়াদ ২০১৭ সালে শেষ হয়েছে। ডায়াগনস্টিকে বিভিন্ন টেস্টে এসব রি-এজেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছিল।
মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট ব্যবহার করে টেস্ট করা হলে সঠিক ফলাফল নাও আসতে পারে জানিয়ে সরওয়ার আলম বলেন, ভুল রিপোর্টের কারণে ভুল চিকিৎসা হতে পারে। তারা ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করছে। এ কারণে তাদের ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ৭ তলার ল্যাব এবং ১০ তলার স্টোররুমে অভিযানটি চালানো হয়।
এর আগেও পপুলার ডায়াগনস্টিককে নানা অনিয়মের কারণে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর পপুলার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত সংরক্ষণ ও ২৩ ধরনের অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির অপরাধে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে সময় পপুলারের ব্লাড ব্যাংক থেকে তিনটি রক্তভরা ব্যাগ পাওয়া গিয়েছিল যেগুলোর মেয়াদ ৪-৫ দিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
এদিকে সোমবার অভিযানের সময় সরেজমিনে দেখা যায়, পপুলার ডায়াগনস্টিকে ব্যবহৃত সিমটেক্স গ্রুপের স্যাম্পল প্লেটের রি-এজেন্টের মেয়াদ ২০১৭ সালের জুন মাসে, সিমেন্স গ্রুপের স্ট্যান্ডার্ড হিউম্যান প্লাজমার মেয়াদ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এবং ক্যাপিলারিস ইমিউনোটাইপিংয়ের মেয়াদ ২০১৭ সালের জুনে শেষ হয়ে গেছে। তারপরও এগুলো স্টোর করে রাখা হয়েছে এবং টেস্টে ব্যবহার করা হচ্ছে।
পপুলার কর্তৃপক্ষ বারবার একই ধরনের অপরাধ করলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেন আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৭ সালে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।এবার অভিযানে এসে এমডি কিংবা সিইও কাউকে না পেয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি সিলগালা করার কথা ভেবেছিলাম।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করলে এখানে চিকিৎসাধীন ও টেস্ট করিয়েছেন এমন অনেক রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে পরবর্তীতে এমন অভিযোগ পেলে তাদের আরও বড় ধরনের শাস্তি দেয়া হবে।অভিযানে র্যাব-২ এর অর্ধশতাধিক সদস্য ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সহায়তা করেছে। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ওষুধ প্রশাসনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।