• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত


প্রকাশিত: ১:৪৭ পিএম, ১৬ জুন ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৮ বার

  এস রহমান.ঢাকা: একাত্তরে বুদ্ধিজীবী নিধনের পরিকল্পনা ও সহযোগিতার দায়ে আলবদর বাহিনীর নেতা আলী আহসান  মোহাম্মাদ মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েmujahid-1-www.jatirkhantha.com.bd মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার সকালে এ রায় ঘোষণা করেন।
মুজাহিদের রায় ঘোষণার বিষয়টি এই বেঞ্চের আজকের কার্যতালিকার ১ নম্বরে ছিল। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ Muzahid-www.jatirkhantha.com.bdসিদ্দিকী। সকাল ৯টা ৭ মিনিটে সংক্ষিপ্ত আদেশ পড়া শুরু করেন প্রধান বিচারপতি। এক মিনিটের মধ্যে তা শেষ হয়।
মুজাহিদ জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী নেতা। তিনি দলটির বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের তিনি সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম সর্বোচ্চ সাজা পান মুজাহিদ।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও সহযোগিতা এবং ফরিদপুরের বাকচর গ্রামে হিন্দুদের হত্যা ও নিপীড়নের দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১৩ সালের ১১ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন মুজাহিদ। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল আপিল বিভাগে ওই আপিলের শুনানি শুরু হয়। নয় কার্যদিবস ধরে চলা শুনানির প্রথম ছয় দিন ট্রাইব্যুনালের রায় ও সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এরপর তিন কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের পাল্টাপাল্টি যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে ২৭ মে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। ওই দিনই ১৬ জুন (আজ) রায়ের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে হত্যা :

আপিল বিভাগ সংক্ষিপ্ত রায়ে প্রথম অভিযোগ থেকে মুজাহিদকে খালাস দেন। শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে হত্যায় সহযোগিতা করার এই অভিযোগটি ট্রাইব্যুনালে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।

মুজাহিদের বিরুদ্ধে তৃতীয় অভিযোগ—ফরিদপুরের রণজিৎ নাথকে আটক রেখে নির্যাতন। মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আটকে রেখে নির্যাতনের দায়ে মুজাহিদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এই কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

মুজাহিদের বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগ—নাখালপাড়া সেনাক্যাম্পে আলতাফ মাহমুদ, রুমী, বদি, আজাদ, জুয়েল প্রমুখকে হত্যায় প্ররোচনা। মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের হত্যায় সহযোগিতার দায়ে মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন।

ষষ্ঠ অভিযোগ বুদ্ধিজীবী নিধনে সহযোগিতা ও পরিকল্পনার দায়ে মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এই দণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

ফরিদপুর সদর থানাধীন হিন্দু অধ্যুষিত বাকচর গ্রামে হিন্দুদের হত্যা ও নিপীড়নের সপ্তম অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া এই দণ্ড কমিয়ে মুজাহিদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

মুজাহিদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ও চতুর্থ অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়নি।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে আসামির পরিচিতিতে বলা হয়, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ছাত্রাবস্থায় ইসলামী ছাত্র সংঘে (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন) যোগ দেন। ১৯৬৮-৭০ সালে তিনি ফরিদপুর জেলা ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ওই বছরই তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সেক্রেটারি হন। একাত্তরের অক্টোবরে তিনি ছাত্র সংঘের সভাপতি ও আল-বদর বাহিনীর প্রধান হন বলে দাবি করা হয়। আসামি ১৯৮৬,১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে চারবারই পরাজিত হন। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন।

আলবদর বাহিনীতে মুজাহিদের অবস্থান প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল বলেন, একাত্তরে ছাত্র সংঘের সদস্যরা আলবদর বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়। যেহেতু মুজাহিদ ছাত্র সংঘের ঊর্ধ্বতন নেতা ছিলেন, এ জন্য আলবদর ও ছাত্র সংঘ—দুটি সংগঠনের ওপরই তাঁর কর্তৃত্ব ছিল। মুজাহিদ একাত্তরে রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে ক্ষমতাধারী ছিলেন, আর এ ক্ষমতার জন্যই তিনি আলবদর বাহিনীকে দিক-নির্দেশনা দিতে পারতেন। তবে তিনিই এ বাহিনীর একমাত্র নেতা ছিলেন না।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ জন্য আলবদরের কোনো আনুষ্ঠানিক নথিতে মুজাহিদের নাম থাকা জরুরি নয়। সব ধরনের নথি ও সাক্ষ্য মূল্যায়ন করে বোঝা যায়, মুজাহিদ আলবদর বাহিনীর সব ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতেন। অবস্থানগত কারণেই আলবদর গঠন থেকে শুরু করে হত্যা-নিধনযজ্ঞের শেষ পর্যন্ত এ বাহিনীর ওপর তাঁর কর্তৃত্ব ছিল।