মুখ খুললেন তালেয়া-এফবিআই এজেন্টের সঙ্গে দেখা হয়েছিল শফিক রেহমানের
স্টাফ রিপোর্টার : সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআইয়ের কাছে থাকা তথ্যের সন্ধান করতে শফিক রেহমান যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন এবং সেখানে সংস্থাটির এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। তবে তিনি কোনোভাবেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। গতকাল সোমবার দুপুরে ইস্কাটনের নিজ বাড়িতে এক ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সাংবাদিক শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান। এ ছাড়া তাঁদের ইস্কাটনের বাসায় তল্লাশি চালানোর সময় পুলিশ নথি জব্দ করেছে বলেও তিনি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন।
ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তালেয়া রেহমান দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে সে সময় আর্থিক তথ্য ফাঁসের গুজব কতটা সত্যি সেটি অনুসন্ধান করতে ২০১২ সালে আমেরিকা যান শফিক রেহমান। অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে নিবন্ধ লেখার জন্যই শফিক রেহমান ওই নথি সংগ্রহ করেছিলেন। একই কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এফবিআইয়ের এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। ওই সময় সম্ভবত ২০১২ সালে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়।
ইস্কাটনের বাসা থেকে নথি জব্দ করা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তালেয়া রেহমান বলেন, উনি (শফিক রেহমান) অত্যন্ত গোছানো মানুষ। এ পর্যন্ত যত লেখা লিখেছেন সে সম্পর্কে সব তথ্য তিনি ফাইল করে রেখেছেন। এটাও উনি (জব্দ করা নথি) ফাইল করে রেখেছিলেন। এটাই তিনি ওদেরকে (ডিবিকে) দিয়েছেন।
তালেয়া রেহমান দাবি করেন, কোনো ঘটনা জানতে পারা আর ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা এক কথা নয়। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের আদালত বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন সেখানে শফিক রেহমানকে জড়িয়ে পুলিশের দাবি সঠিক নয়।তালেয়া রেহমান বলেন, তিনি (শফিক রেহমান) ব্যাপারটা জানতেন। উনার (শফিক রেহমানের) লাস্টিকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলে উনি বলেন। এ পর্যন্তই।’
এফবিআই এজেন্ট লাস্টিকের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শফিক রেহমানের স্ত্রী বলেন, তিনি কোনো টাকা দেননি, তবে লেনদেনের খবরটা তিনি জানতেন।এ ঘটনায় আরো কয়েকজন বাংলাদেশির জড়িত থাকার যে দাবি পুলিশের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তালেয়া বলেন, স্বামীর কাছ থেকে তিনি ‘একজনের’ নাম শুনেছেন।
স্বামীর কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যায় তালেয়া বলেন, ‘এই যে কিছু তথ্যের আদান-প্রদান হয়েছে, সেই তথ্যটা ছিল একজন বিশেষ পারসন সম্পর্কে। নিশ্চয়ই ঘটনার সময় জানতেন বলেই আমেরিকায় গিয়েছিলেন। আমি জেনেছি পরে।’
তালেয়া রেহমান বলেন, ‘শফিক রেহমান গোয়েন্দাদের ইনফরমেশন দিয়েছেন। সেই ইনফরমেশনের মধ্যে হত্যা নেই, অপহরণ নেই। তিনি দিয়েছেন লাস্টিক যে তথ্য দিয়েছেন সে সম্পর্কিত ইনফরমেশন। আমি এর বেশি কিছু জানি না।’তালেয়া বলেছেন, তাঁর স্বামী একজন ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিক’। প্রতিটি জিনিসের প্রমাণ তাঁর কাছে থাকে। তবে ওই ঘটনা নিয়ে তিনি লেখেননি, শুধু কালেক্ট করে রেখেছেন।’
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তালেয়া রেহমান দাবি করেন, আদালতে তাঁর (শফিক) সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। ননস্টপ ইন্টারগেশনের কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে তিনি অসুস্থ। তিনি আমাকে শারীরিক নির্যাতনের কথা না বললেও মিথ্যা সাক্ষী দিতে রাজি করানোর জন্য শারীরিক নির্যাতন হতে পারে বলে আমাকে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নানা মন্তব্যে শঙ্কিত তিনি। তিনি এ বক্তব্যকে কিছুটা একপেশে অসত্য ও বিকৃত বলে দাবি করেন।
তালেয়া রেহমান মামলার তদন্ত, জয়ের ফেসবুক পেজের স্টেটাস, শফিক রেহমান অসুস্থ, সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে নানা শঙ্কার কথা বলেন। একই সঙ্গে শফিক রেহমান একজন দেশপ্রেমিক সাংবাদিক। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, মামলা প্রত্যাহার ও রিমান্ড বাতিলের দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে বয়স ও অসুস্থতার কারণে রিমান্ডের সময় তাঁর জীবনহানির শঙ্কা করেন তিনি।
পাঁচ দিনের রিমান্ডে মাহমুদুর রহমান
আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যাচেষ্টার মামলায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানোর (শ্যোন অ্যারেস্ট) অনুমতি দিয়ে তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হলে এ বিষয়ে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম নবীর আদালত।
শুনানি উপলক্ষে মাহমুদুর রহমানকে সোমবার সকালেই আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে কোর্টের হাজতখানায় রাখা হয়। দুপুর ২টায় শুনানির জন্য নির্ধারিত সময়ে আদালতের এজলাসে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। আদেশে বলা হয়, ‘পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশনা যথাসম্ভব অনুসরণ করে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।’
এজলাসে আসার তিন মিনিটের মাথায় বিচারক ওঠেন। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ড মঞ্জুর করার সপক্ষে বক্তব্য দেয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্তে আসামির নাম এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সাজাপ্রাপ্ত রিজভী আহমেদ সিজার অর্থের বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে যে তথ্য বাংলাদেশি একজন রাজনৈতিক মিত্রকে দিয়েছিলেন তিনি বিএনপি নেতা এবং বিএনপি সরকারের সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান। এ মামলার ঘটনার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দেশে-বিদেশে অনেক আসামির সম্পৃক্ততা আছে। তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জন্য আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রার্থিত ১০ দিন রিমান্ড দেওয়া হোক।
মাহমুদুর রহমানের পক্ষে আদালতে তাঁর আইনজীবীরা বলেন, মামলাটির কোনো ভিত্তি নেই। মামলাটি যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা হয়েছে এ রকম কোনো ঘটনা কোথাও ঘটেনি। গত বছরের ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়ের দেওয়া ফেসবুক স্টেটাসের ভিত্তিতে এ মামলা দায়ের হয়েছে। অথচ ওই স্টেটাসে মাহমুদুর রহমানের সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। জয় নিজেও কোথাও এমন কথা বলেননি। মাহমুদুর রহমান ২০০৬ সালের পর আর যুক্তরাষ্ট্র যাননি।