মুক্তাগাছা নির্বাচনে আনারসের পাল্লা ভারি
বিশেষ প্রতিনিধি : মুক্তাগাছা নির্বাচনে আনারসের পাল্লা ভারি হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাত প্রমাণিত হওযায় আনারসের প্রার্থীর পক্ষে জনমত জোরালো হতে দেখা গেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে মুক্তাগাছায় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে তেমন ইঙ্গিত মিলেছে। ভোটাররা জাতিরকন্ঠ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন, ভোটের আগে একটি জয় পেয়ে গেছেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস মার্কার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ।
ইসির তদন্তে নৌকা প্রতিকের প্রতি ওসি আলী আহম্মেদ মোল্লার পক্ষপাতমূলক আচরণ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করেছে নির্বাচন কমিশন। পক্ষপাতমূলক ওসিকে ক্লোজ করতে পেরে স্বতন্ত্র উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস মার্কার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ সমর্থকরা বলেছেন, এবার তাঁরা আশাবাদী যে, জনমত তাদের পক্ষেই আসছে।
জানা গেছে, বেশ কিছু প্রমানসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হাই আকন্দ ওসি বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন বরাবরে অভিযোগ করেন। এনিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ব্যানারে শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে সিইসি বরাবরে স্মারকলিপি দেন। নির্বাচন কমিশনের একটি তদন্ত টিম গত ২৫ মার্চ তদন্ত শেষে ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়।
ওদিকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রশাসন নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও দখলমুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন, অবরোধ ও স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মঞ্চের উদ্যোগে সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডাকবাংলো কার্যালয় থেকে সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস মার্কার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ, সাবেক গণপরিষদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক খোন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিস আলী, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম প্রমুখ। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতারা।
নৌকার পক্ষপাতে ওসি প্রত্যাহার–
চতুর্থ ধাপে চলতি উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্বে অবহেলা ও সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষাবলম্বন করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী আহম্মেদ মোল্লাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুরে নির্বাচন কমিশনর নির্দেশে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে নেয়া হয়। তবে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এথানায় কোন নতুন ওসি যোগদান করেননি। থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর (তদন্ত) বন্দে আলী মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, গত ২২ মার্চ শুক্রবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে স্থানীয় প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল হাই আকন্দ।
এরপর আনারস প্রতীকের পোস্টার ছিড়ে ফেলা, প্রচারণা ক্যাম্প ভাংচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি আটানী বাজার মোড়ে পৌঁছালে সেখানে নৌকার সমর্থকদের সাথে ধাওয়া-পাল্ট ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েকটি দোকান ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে।
এদিকে ওই ঘটনার একদিন পর দুই পক্ষ থেকেই থানায় পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু ওসি আনারস প্রতীকের সমর্থকের মামলা না নিয়ে নৌকা সমর্থকের দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে এফআইআর নথিভুক্ত করেন। মামলায় উপজেলা জুড়ে আনারস প্রতীকের কর্মীদের বেছে বেছে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১০/১৫জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। পুলিশ স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই কর্মী জামাল উদ্দিন বাদশা ও আব্দুর রশিদ মেম্বারকে গ্রেফতার করে।
আরও জানা যায়, এই ঘটনাসহ পক্ষপাতমূলক আচরণের বেশ কিছু প্রমানসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হাই আকন্দ ওসি আলী আহম্মেদ মোল্লার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন বরাবরে অভিযোগ করেন। এনিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ব্যানারে শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে সিইসি বরাবরে স্মারকলিপি দেন।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের একটি তদন্ত টিম গত ২৫ মার্চ তদন্ত শেষে ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়। এর প্রেক্ষিতে বুধবার নির্বাচন কমিশন ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশনা দিয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে চিঠি দেয়। পরে ওসি আলী আহম্মেদ মোল্লাকে মুক্তাগাছা থানার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী অব্দুল হাই আকন্দ জাতিরকন্ঠ কে বলেন, ‘ওসি আলী আহম্মেদ মোল্লা সকল বিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচন নিয়ে স্পষ্টত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষ অবলম্বন করে আমার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করেন। আমি বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করি।’ তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নির্বাচনের বাকি প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার দাবি জানান।এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চলতি উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে তাকে প্রত্যাহার করে নতুন অফিসার দেয়া হয়েছে |