• শনিবার , ১৮ মে ২০২৪

মিনায় এক ফেরদৌসির হারিয়ে যাওয়া এবং স্বামীর ফিরে পাওয়া..


প্রকাশিত: ৫:৫৩ পিএম, ১৩ অক্টোবর ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৪ বার

আনন্দবাজার অবলম্বনে বিশেষ প্রতিবেদক:   তুমুল হুড়োহুড়ির মধ্যে ফস্কে গিয়েছিল স্ত্রীর হাত। তারপর দু’দিন মিনায় হন্যে হয়ে স্ত্রী ফেরদৌসি বেগমের (৫৫) জন্য ঘুরেছেন ভারতের বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের কনুটিয়া গ্রামের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হেরেসতুল্লা। পদপিষ্ট হয়ে হজযাত্রীদের মৃত্যুর সংখ্যা শুনে তাঁর মনে শঙ্কার মেঘ কালো হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার রাতে যখন সেখানferdousi-www.jatirkhantha.com.bdকার হাসপাতালে স্ত্রীর দেখা পেলেন, তখন আনন্দে মন ভরে উঠেছিল। কিন্তু তা স্থায়ী হল না। হেরেসতুল্লার সামনেই ফেরদৌসির শ্বাসপ্রশ্বাস কমতে কমতে একসময় বন্ধ হয়ে গেল।

হজ করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ভারতীয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫। রবিবার বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইট করে জানান, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আরও ছ’জনের দেহ পাওয়া গেছে। তার আগে শনিবার রাতে আরও সাত ভারতীয়ের দেহ শনাক্ত হয়। তবে, পিটিআই-এর দেওয়া এ দিনের ১৩ জনের নামের তালিকায় ফেরদৌসির নাম নেই। এ দিনই আবার সৌদি প্রশাসনের তরফে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১০৯০ জনের ছবি প্রকাশ করা হয়।

হেরেসতুল্লা স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামেরই এক দম্পতির সঙ্গে হজ করতে গিয়েছিলেন। ৬ অক্টোবর তাঁদের ফেরার কথা ছিল। রবিবার বিকেলে অনেক চেষ্টার পরে তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়। হেরেসতুল্লা জানান, গত সোমবার থেকে পুরুষ-নারীদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল। তবুও দিনের বিভিন্ন সময়ে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হচ্ছিল। তাঁর কথায়, ”বৃহস্পতিবার আমরা ঢিল ছোঁড়ার অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। পাশাপাশি হাঁটছিলাম। হঠাৎ কী হল, একটা ভিড় আছড়ে পড়ল। দু’জনে আলাদা হয়ে ছিটকে পড়লাম। কপাল জোরে তেমন চোট পাইনি। কিন্তু উঠে দেখি চারপাশে লোকজন পড়ে রয়েছে। অনেকে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। স্ত্রীকে হন্যে হয়ে খুঁজছিলাম। কোথাও ওঁর খোঁজ না পেয়ে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”

এই খোঁজাখুঁজির সময়েই হঠাৎ এক পরিচিতের দেখা পেয়ে মনে বল পান হেরেসতুল্লা। সেই পরিচিতের কাছে জানতে পান, তিনি ফেরদৌসিকে এক জায়গায় দেখতে পেয়েছেন। ফেরদৌসি গুরুতর আহত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁরাই ওঁকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দেন।

এ কথা শুনেই হাসপাতালে হাসপাতালে স্ত্রীর খোঁজ শুরু করেন হেরেসতুল্লা। বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর যে দৌঁড় শুরু হয়েছিল, তা শেষ হল শনিবার রাতে। হেরেসতুল্লা বলেন, ”ওই রাতে একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলিতে ঘুরে আহতদের মধ্যে স্ত্রীর খোঁজ করছিলাম। হঠাৎ দেখি একটি ওয়ার্ডে স্ত্রী শুয়ে। কিছুক্ষণ ভাবলেশহীন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। মিনিট পনেরোর মধ্যেই চোখের সামনে মারা গেল।”

ঘণ্টাখানেক পর সম্বিৎ ফিরতে হেরেসতুল্লা গ্রামের বাড়িতে দুঃসংবাদ জানান। এ-ও জানান, স্ত্রীর দেহ পাওয়ার জন্য ভারতীয় দূতাবাস এবং হজ কমিটির মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন। শেষকৃত্য সেরে ফিরবেন।

ফেরদৌসির নিখোঁজের সংবাদ আসার পর থেকেই থম মেরে ছিল ওই চিকিৎসকের বাড়ি। শনিবার রাতে মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন সকলে। রবিবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পড়শিরা সান্ত্বনা দিচ্ছেন হেরেসতুল্লার ছেলে চিকিৎসক রামিজ ইউসুফ, মেয়ে শাবানা মহাজেবিনকে। তাঁরা শুধু বলেন, ”কলকাতায় হজ হাউসে পৌঁছতে যাওয়ার সময় মায়ের সঙ্গে শেষ দেখা হয়। বুধবার ফোনে শেষ কথা হয়েছিল। তখনও কী আর জানতাম, বৃহস্পতিবারটা এত ভয়ঙ্কর হবে!”