• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে এটা পছন্দ না হতাশ পাার্টির-মিউনিখে প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ১:৫৮ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫২ বার

বিশেষ প্রতিনিধি মিউনিখ থেকে : মিউনিখ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন গণতন্ত্র ও সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় তৃণমূল পর্যায়েও মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে এটা পছন্দ না হতাশ পার্টির।।তিনি বলেন, এখন আমাদের নারীপুরুষের সকলের মধ্যেই ক্ষমতায়ন, নিজের কিছু করার একটা উদ্যোগ এবং উদ্যম সৃষ্টি হয়েছে। সেটি আমাদের আশার বিষয়। কিছু তো হতাশ পার্টি আছে। আর কিছু আছে কিছু ভালো লাগে না পার্টি।

কিছু ভালো লাগে না পার্টি গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভালো থাকে না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ হলেই তাদের খুব কষ্ট হয়। কারণ তখন নাকি তাদের মূল্যটা কমে যায়। যদি কোনো মিলিটারি ডিক্টেটর, ইমারজেন্সি, অস্বাভাবিক বা অসাংবিধানিক সরকার হয়, তাদের মূল্য বাড়ে। এই জন্য তাদের একটা চক্রান্ত থাকে সব সময়, বাংলাদেশে এই যেন গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে, যে উন্নতি হচ্ছে; সেটা বন্ধ হয়ে যাক।

একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি হোক। এবারের নির্বাচনের আগে সেই একই খেলা খেলতে চেয়েছিলো। সাথে মুরুব্বীও আছে, তারাও উস্কানি দেয়। সেই খেলায় তারা সফল হতে পারেনি। মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। আমরা ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছি। অনেক পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক এই নির্বাচন দেখেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছি। তাই আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, একটা বিষয় ঠিক, যদি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকে ও সরকারের ধারাবাহিকতা থাকে, তাহলে উন্নতি হয়। উন্নতিটা দৃশ্যমান হয়। সে উন্নতি শুধু বড় বড় স্থাপনা নয়, সবচেয়ে বড় কথা সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়। আমি দাবি করতে পারি, তৃণমূল পর্যায়ে মানুষেরও জীবনমান উন্নত হয়েছে। গ্রামে গেলেই সেটা বোঝা যায়। কতোটা পরিবর্তন এসেছে দেখা যায়। চিন্তাচেতনা, খাওয়াদাওয়া, পোশাক- সব কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে। লেখাপড়ায় মনোযোগ আছে। এখন তো ডিজিটাল বাংলাদেশ।

এই যে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ সময়মতো করতে পারলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা ছিলো এটা ২০২১ সাল নাগাদ করবো। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী করবো। আমরা সফলভাবে করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী রোববার জার্মানির মিউনিখের আবাসস্থলে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন। জার্মানি এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ দেশ থেকে নেতাকর্মীরা এ সভায় যোগ দেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো ছিলো। তারা এতোটাই সমর্থন করতো বাংলাদেশকে, জার্মানি যেতে বাংলাদেশীদের ভিসা লাগতো না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হলে জার্মানি বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বাধ্যতামূলক করে। তিনদিনের সরকারি সফর শেষে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে মিউনিখে এটিই ছিলো প্রধানমন্ত্রীর শেষ কর্মসূচী।

প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি নিয়মিত ফ্লাইট জার্মানির মুনচেন ফ্রাঞ্জ জোসেফ স্ট্রস বিমানবন্দর থেকে রোববার রাত ৯টা ১০ মিনিটে (স্থানীয় সময়) ছেড়ে আসার কথা রয়েছে। জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাবেন। সোমবার বেলা ১১টায় ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জার্মানী গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার প্রথম সরকারি সফর। শেখ হাসিনা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।

প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি এবং ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির জেলেনস্কি এবং আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় শেখ হাসিনা যুদ্ধ, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানান।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমান পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন এবং জার্মান ফেডারেল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী সভেনজা শুলজেও শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন।ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতীয় মুদ্রা টাকা ও রুপি ব্যবহারের ওপর জোর দেন।

উইমেন পলিটিক্যাল লিডার (ডব্লিউপিএল) এর প্রেসিডেন্ট সিলভানা কোচ-মেহরিন, সিনিয়র ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ডেভেলপমেন্ট পলিসি অ্যান্ড পার্টনারশিপ অ্যাক্সেল ভ্যান টর্টসেনবার্গ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক পেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসিস, মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ড. স্যার নিক ক্লেগও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেন।

শেখ হাসিনা মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় বক্তৃতা ও ছয়টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করতে এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সে অর্থ জলবায়ু তহবিলে জমা দিতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।তিনি মিউনিখের বার্গারহাউস গার্চিং হোটেলে জার্মানি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংবর্ধনায়ও যোগ দেন।