মানবপাচারকারী ওয়ান্টেড হাব নেতারা বহাল তবিয়তে বিমানের ব্যবসা হাতিয়ে নিচ্ছে
এস রহমান: মানবপাচারকারী ওয়ান্টেড হাব নেতারা বহাল তবিয়তে বিমানের ব্যবসা হাতিয়ে নিচ্ছে।ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেনীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা মোটা অংকের সুবিধা নিয়ে ওয়ান্টেড হাব নেতা দের ব্যবসা করার সুযোগ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।ওমরাহ করতে গিয়ে অনেকে ফেরত না আসায় আগেই বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সৌদি সরকার।
মানবপাচারের অভিযোগে ১০৪ হজ এজেন্সিকে কালো তালিকাভুক্তও করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। যে তালিকায় খোদ হাব-এর নেতৃবৃন্দের মালিকানাধীন এজেন্সিও রয়েছে। একই অভিযোগে এবার ওমরাহর পাশাপাশি হজযাত্রী পাঠানোর ব্যাপারে নতুন করে দুটি এজেন্সির ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আগে শুধু অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এজেন্সির তালিকা দিলেও এবার এসব এজেন্সির মাধ্যমে ওমরাহ করতে গিয়ে ফিরেনি এমন লোকের সংখ্যা উল্লেখ করে হালনাগাদ একটি তালিকা এসেছে সৌদি আরব থেকে।
যার একটি হাব-এর সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহর এজেন্সি। এর আগে গত ৬ই আগস্ট সুনির্দিষ্ট এজেন্সির নাম উল্লেখ করে ওমরাহ ভিসা নিয়ে দেশটিতে যাওয়া ১১৪৮৫ জন ফিরে না আসা বাংলাদেশীর তালিকা দেয়। ওই সব এজেন্সির বির“দ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানালেও সে ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।
চলতি হজ মওসুমের শুরুতে হজযাত্রী পাঠানো নিয়ে সংকট দেখা দেয়। অভিযোগ ওঠে, মানবপাচারের তালিকাভুক্ত এজেন্সি যাত্রী পাঠাতে পারলেও, বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক প্রতিষ্ঠিত এজেন্সি। ফলে হজ ফ্লাইটের শুর“ থেকেই হাব-এর নেতৃবৃন্দ এবং কোটা বঞ্চিতরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। আন্দোলনে নামে কোটা বঞ্চিত হজ এজেন্সিরা। এর ধারাবাহিকতায় আশকোনা হজ ক্যাম্পের সামনে প্রতিদিনই নানা কর্মসূচি পালন করছে তারা।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে আন্দোলনকারীরা জানান। এমনকি ঢাকাতে হজ বঞ্চিতদের জড়ো করে সমাবেশে করারও ঘোষণা দেন তারা। অন্যদিকে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে গত ১৭ই আগস্ট রাতে হাব নেতৃবৃন্দ লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ এনে সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত হাব সদস্যদের প্রতি গত ১৯শে আগস্ট একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।
ওই দিনের ঘটনা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। একই দিন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অপর একটি চিঠি পাঠায় হাব-এর সাধারণ সম্পাদক। সচিব বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে হজ অফিসের কার্যক্রম সূচার“ভাবে সম্পাদনের নিমিত্তে হজযাত্রীদের এবং হাব-এর নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা বিধানসহ হাব-এর কার্যনির্বাহী পরিষদ এবং ঢাকা আঞ্চলিক কমিটির যৌথসভার সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়। তবে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদের দাবিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পরিকল্পিতভাবে হাব নেতৃবৃন্দ এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, যাদের কারণে ওমরাহ ভিসা বাতিল করেছিল তারাই হজযাত্রী পাঠাতে বেশি তৎপর। অথচ সুনামের সঙ্গে যারা কাজ করছেন তারা এবার কোটা বঞ্চিত হচ্ছেন। সৌদির হজ মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ ছিল অনেকে ওমরাহ করতে এসে দেশে ফেরত যায়নি। এ ঘটনাকে মানবপাচার হিসেবে আখ্যায়িত করে তারা ওমরাহ ভিসা দেয়নি। এ ব্যাপারে মক্কা আল মুকাররম-এর বাংলাদেশ হজ কল্যাণ অফিস থেকে যারা দেশে ফেরত যায়নি তাদের সংখ্যা এবং এজেন্সি সম্পর্কে সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য চাওয়া হয়।
পরে গত ১০ই আগস্ট দেশটির পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় ১০৪টি এজেন্সির নাম উল্লেখ করে তাদের পাঠানো যেসব যাত্রী ফেরত আসেনি তাদের একটি তালিকা পাঠায়। এতে দেখা যায় ওমরাহ ভিসা নিয়ে দেশটিতে যাওয়া ১১ হাজার ৪৮৫ জন ফেরত আসেনি। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ওই চিঠিতে এদের বির“দ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়। ওই তালিকার মধ্যে হাব-এর ১২ নেতা ও সদস্যের এজেন্সিরও নাম এসেছে।
এর মধ্যে হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহারের মেগাটপ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেডের পাঠানো ৬৭ জন, সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহর সঞ্চারি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস-এর ৬৫ জন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিনের মুনা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের ২১৮ জন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ফরিদ আহমেদ মজুমদারের গোল্ডেন বেঙ্গল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস-এর ৪৫১ জন, ইসি মেম্বার আফতাব আহমেদ চৌধুরীর আফতাব ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস-এর ২৪৩ জন, যুগ্ম সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন কামালের হাশিম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল-এর ১৯ জন, ইসি মেম্বার খাদেম দুলালের খাদেম এয়ার সার্ভিস-এর ৯৪ জন, মো. ইলিয়াসের গোল্ডন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস-এর ১০৬ জন, ইসি মেম্বার আবদুল মালেকের সবুজ বাংলা ইন্টারন্যাশনাল-এর ৭২১ জন, আবু বক্কর সিদ্দিকের আল নূর ইন্টারন্যাশনাল ট্রভেলস এজেন্ট-এর ২৩৭ জন, হাব চট্টগ্রাম-এর আবুল কাশেমের রয়াল এয়ার সার্ভিস-এর ২০৫ জন এবং সিলেট হাব-এর যুগ্ম সম্পাদক আবদুল হকের সিটি ওভারসিজ-এর ১১৮ জন দেশে ফেরত আসেনি।
এদিকে চলতি হজ মওসুমের মধ্যেই বাংলাদেশের দুটি এজেন্সির ওপর হজ ও ওমরাহ যাত্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত ১৬ই আগস্ট বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ে সৌদি আরবের ওমরাহ বিভাগের পাঠানো এক চিঠিতে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। যার একটি হাব-এর সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ-এর এজেন্সি সঞ্চারি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস। অপরটি হলো- এফএম সাইফুল্লাহ-এর ওয়ার্ল্ড লিংক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস। সানজারি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস ট্রাভেলস ৬৫ জন এবং এফএস সাইফুল্লাহর ওয়ার্ল্ড লিংক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ২৭ জনকে পাচারের অভিযোগে হজ ও ওমরাহ যাত্রী পাঠানোর ব্যাপারে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। মানবপাচারের অভিযোগ এনে ওই দুটি এজেন্সির বির“দ্ধে ব্যবস্থা নিতেও আহ্বান জানিয়েছে।
কালো তালিকাভুক্তির সত্যতা স্বীকার করে হাব-এর সভাপতি ইব্রাহীম বাহার বলেন, তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেশটির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েছিলাম। তারাও একেক সময় একেক রকম তথ্য দিয়েছে। তার নিজের এজেন্সির অধীনে যাওয়া অনেক লোক ফেরত আসেননি এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে বলেছিল আমার এজেন্সির ৪২ জন আসেনি। পরে শোনা গেল ২৫ জনের কথা। সর্বশেষ শুনছি ৬৭ জন আসেনি।
তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়ার পর ধর্ম মন্ত্রণালয় শোকজ করেছে। লিখিতভাবে সেই শোকজের জবাব দিয়েছি। কালো তালিকার অন্তর্ভুক্ত এজেন্সির হজযাত্রী পাঠানোর ব্যাপারে বলেন, ওমরাহ ভিসা এবং হজের ভিসা আলাদা। তাই হজযাত্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। অতি সম্প্রতি দুটি এজেন্সির ওপর ওমরাহ এবং হজযাত্রী পাঠানোর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তাদের জানা নেই বলে জানান। এছাড়া ভুয়া হজযাত্রী পাঠানোর অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, এ অভিযোগের জবাব দেবেন হজ পরিচালক। হজ অফিস যাচাই করে যাত্রীদের ডিও লেটার দিচ্ছে। এ ব্যাপারে কোন সমস্যা থাকলে সেটা হাব-এর দায়িত্ব নয়, হজ অফিস এর জন্য দায়ী।