মাদকের নেশায় বেসামাল এক মডেল..
বিনোদন রিপোর্টার : মাদকের নেশায় বেসামাল এক মডেল..অনেকেই হয়তো জানেন না যে, গ্ল্যামার-দুনিয়া মানেই কেবল খ্যাতি, অর্থ, প্রতিপত্তি আর জৌলুশ নয়। এই জগতের একটা অন্ধকার দিকও রয়েছে। অসতর্ক পদক্ষেপের ফলে এই অন্ধকারের আবর্ত আজকের রাজাকে কালকের ফকিরে রূপান্তরিত করতে পারে।
মডেল গীতাঞ্জলি নাগপালের কাহিনি যেন সেই সত্যকেই প্রমাণিত করে। তথ্য-এবেলা।১৯৯০-এর দশকে দিল্লির মেয়ে গীতাঞ্জলি ছিলেন মডেলিং দুনিয়ার পরিচিত নাম। সুস্মিতা সেনের মতো মডেলের সঙ্গে র্যাম্পে বহু বার হাঁটতে দেখা গিয়েছে গীতাঞ্জলিকে। গীতার বাবা ছিলেন নেভি অফিসার।
মাউন্ট ক্যারমেল স্কুল কিংবা শ্রীরাম কলেজের মতো নামজাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেটেছিল তাঁর ছাত্রীজীবন। পড়াশোনা শেষ করে মডেলিং-কে বেছে নেন পেশা হিসেবে। ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে মডেলিং দুনিয়ায় বেশ ভালো কাজ পেলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসতে থাকে গীতাঞ্জলির খ্যাতি।
২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে প্রবল অর্থাভাবে আক্রান্ত হয়ে বন্ধুবান্ধবদের কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততে দেখা যায় গীতাঞ্জলিকে। কয়েক বছর পরে একেবারে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান এই মডেল। কেউ আর তাঁর খোঁজই রাখেননি যেন।
পুনরায় তাঁর দেখা মেলে ২০০৭ সালে। কিন্তু তখন আর সেই আগের গীতাঞ্জলি নেই তিনি। দামি পোশাকের জায়গায় গায়ে উঠেছে ছেঁড়াখোড়া আধময়লা পোশাক। রেশমের মতো চুল জট আর ময়লায় ক্লেদাক্ত। দক্ষিণ দিল্লির হাউজ খাস এলাকায় তখন তিনি রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করে বেড়াচ্ছেন।
কিছু মিডিয়া ফটোগ্রাফার চিনে ফেলেন । তারা গীতাকে দেখেই তার ছবি তুলতে শুরু করেন। গীতাও সঙ্গে সঙ্গে পরনের ব্লাউজটিকে একটু নামিয়ে নিয়ে একেবারে পেশাদার মডেলের মতো পোজ দিতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁকে ঘিরে মিডিয়া পার্সনদের ভিড় জমে যায়। কিন্তু কী ভাবে পালঙ্ক থেকে রাস্তার ফুটপাথে নেমে এলেন গীতাঞ্জলি? নিজেই সংবাদমাধ্যমের সামনে ব্যক্ত করেন সেই কাহিনি।
জানান, খ্যাতির শিখর থেকে একটু একটু করে যখন অবতরণ শুরু হয় তাঁর, তখনই ড্রাগের নেশায় আসক্ত হন তিনি। সর্বগ্রাসী নেশায় একেবারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে যান। পেশায় মন্দা আগেই দেখা দিয়েছিল, আস্তে আস্তে নেশার অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন তিনি।
সে এক ভয়ঙ্কর সময় গিয়েছে গীতাঞ্জলির— মাদক দ্রব্য পাওয়ার আশায় কখনও তিনি অচেনা-অজানা পুরুষদের শয্যাসঙ্গিনী হচ্ছেন, কখনও বা পরিচারিকা হিসেবে কাজ করছেন লোকের বাড়ি বাড়ি। কিছু দিন পরে সেই অর্থ রোজগারের এই পথও বন্ধ হয়। ভিক্ষাজীবীতে পরিণত হন গীতাঞ্জলি। তাঁর রাত্রি কাটতে থাকে খোলা আকাশের নীচে ফুটপাথে, কখনও বা কোনও মন্দিরের চাতালে।
২০০৭-এ ফুটপাথ থেকে অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারের পরে মিডিয়ার নজর নতুন করে পড়ে গীতার উপর। আবার যেন পুরনো দিনের গ্ল্যামারাস জীবনের স্বাদ ফিরে পান তিনি। আবার ঝাঁকে ঝাঁকে ক্যামেরা ধাওয়া করতে শুরু করে তাঁকে। পেজ থ্রি-তে আবার ছাপা হতে থাকে তাঁর ছবি। কিন্তু সেই মিডিয়া-অ্যাটেনশান উপভোগ করার মন তখন গীতার ছিল কি না, তা বলা মুশকিল।
কারণ তখন গীতা শুধু যে ভিক্ষাজীবীতে পরিণত হয়েছেন তা নয়, পাশাপাশি মানসিক অসুস্থতাও দেখা দিয়েছে তাঁর। দিল্লির মহিলা কমিশনের উদ্যোগে তাঁকে এক মানসিক রোগের হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর।
জানা যায়, এখন সুস্থ রয়েছেন গীতাঞ্জলি। মডেলিং অবশ্য আর করেন না। তবে মানসিক রোগ আর আর্থিক দুর্দশা থেকে মুক্তি মিলেছে তাঁর। কিন্তু এখনও গ্ল্যামার দুনিয়ার প্রদীপের নীচে লুকনো অন্ধকারের জীবন্ত দৃষ্টান্ত হয়ে রয়ে গিয়েছেন গীতাঞ্জলি নাগপাল।