মন্ত্রীর ভাগ্নির পরকীয়ায় লাশ হলো ভাগ্নে
বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা: ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ-ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকা সোনিয়া তার স্বামী ওবায়দুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। বুধবার রাতে তাকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতারের পর ঢাকায় আনা হয়।গতকাল শুক্রবার তাকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে আদালতে নেওয়া হলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সোনিয়া স্বীকার করেছেন, তার পরিকল্পনা এবং তার দেয়া টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে ওবায়দুলকে খুন করা হয়। আর এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় তার প্রেমিক সাইফুল হাসান রুবেল। হত্যাকান্ডে রুবেলের সহযোগী ছিল তার তিন ভাগ্নে। ওবায়দুল হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেয়া এ চারজনের মধ্যে মূল ঘাতক তানভীর ও তথ্যদাতা মিঠু ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সোনিয়ার প্রেমিক রুবেল এবং অপর সন্দেহভাজন পাপ্পুও গোয়েন্দা জালে রয়েছে। যেকোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলেন তদন্ত সংশিষ্টরা।
এ হত্যাকান্ডটি ঘটে যাওয়ার পর প্রথম দিকে গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল ছিনতাইয়ের উদ্দেশে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। কিন্তু বিনা বাধায় মোবাইল, মানিব্যাগ ও ল্যাপটপ দিয়ে দেওয়ার পরও কেন ওবায়দুলকে গুলি করা হলো তা নিয়ে পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ অধিকতর তদন্ত শুরু করে।
পরে পুলিশ সাধারণ সন্দেহবশত ওবায়দুলের স্ত্রীর মোবাইল ফোনের কল লিস্ট অনুসন্ধান এবং তার মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে। সোনিয়ার মোবাইল ফোনের কললিস্ট থেকে কিছু সন্দেহজনক তথ্য পাওয়ার পর, পুলিশ হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল এবং নিহত ওবায়দুলের কর্মস্থল থেকে বের হওয়ার রাস্তায় কয়েকটি সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির নাম্বার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কর্মস্থল থেকে ঘটনাস্থল পর্যন্ত ওবায়দুলকে অনুসরণকারী মাহমুদুল হাসান মিঠু নামের এক যুবককেও শনাক্ত করা হয়। এরপর চাঁদপুর থেকে ওই যুবককে গ্রেফতার করার পরই বেরিয়ে আসে হত্যা রহস্য।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার বলেন, ‘আমরা এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছি। হত্যাকান্ডে জড়িত নিহতের স্ত্রীসহ মোট তিনজনকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য দুজনও গোয়েন্দা জালে রয়েছে। যেকোনো সময় ওই দুইজনকেও গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।’
নিহত ওবায়দুল হাসানের বড়ভাই শেখ আহাম্মদ বলেন, ‘আমার ভাই অত্যন্ত সহজ-সরল প্রকৃতির ছেলে ছিল। বিয়ের পর স্ত্রীর সব চাওয়া পূরণ করতে সবকিছুই সে করেছে। গত বছরের ৮ অক্টোবর সোনিয়ার সঙ্গে তার বিয়ের কথা পাকা হয়। ৯ নভেম্বর হয় আকদ ও বিয়ের অনুষ্ঠান। বিয়ের পর চট্টগ্রামের ষোলোশহর দুই নম্বর গেটে একটি বাসা নিয়ে ওঠে দুজন।
পরে মামা নুরুল ইসলাম বিএসসির (বর্তমানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী) মালিকানাধীন কোয়ালিটি আইসক্রিমের ব্যবসা দেখাশোনা করতেই স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। ঢাকাতেও প্রথমে মামা নুরুল ইসলাম বিএসসির বাড়িতেই স্ত্রীকে নিয়ে ওঠে সে। পরে স্ত্রীর দাবির প্রেক্ষিতেই মামার বাসা ছেড়ে অন্যখানে যায়। এই স্ত্রীর পরিকল্পনাতেই আমার ভাই খুন হয়েছে সেটা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।’
হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী ওবায়েদ হাসানের স্ত্রী সোনিয়া চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আবছারের কন্যা। তিনি প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগনেতা নুরুল ইসলাম বিএসসির ভাগ্নে।