• বৃহস্পতিবার , ২ মে ২০২৪

ভোট কার অধীনে-কাদের ফখরুলের পাল্টাপাল্টি হুশিয়ারি


প্রকাশিত: ১০:৩৫ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২৩ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৯ বার

 


লাবণ্য চৌধুরী : ভোট কোন সরকারের অধীনে হবে, তা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অবস্থান বিপরীত মেরুতে। বিএনপি চাইছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। আর আওয়ামী লীগ বলেছে শেখ হাসিনার অধীনেই ভোট হবে । বুধবারই এক সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির প্রতি শেষ বার্তা দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাই হবেন। আওয়ামী লীগ বলছে, ভোট কীভাবে হবে, তা সংবিধানে বলা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে ভোটের সময়। কেউ চাইলে ভোটে না আসতে পারে। তবে বাধা দিতে পারবে না কেউ।

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ নানা পক্ষ প্রদান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টায় আছে। তারা সংলাপে বসারও পরামর্শ দিচ্ছে।তবে, বিএনপি বলছে, তাদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, সংলাপ হতে পারে, তবে সে জন্য বিএনপিকে শর্ত ছাড়তে হবে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ভোট:কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এটাই বিএনপির উদ্দেশে শেষ বার্তা বলে জানিয়েছেন,আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের । বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, অবরোধ দিলে পাল্টা অবরোধ হবে, বিএনপিকে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। গতকাল বুধবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এই সমাবেশের আয়োজন করে।

বিএনপি ঢাকা অবরোধ করলে পাল্টা অবরোধ করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দাঁড়াতে দেব না। কারণ, যারা বলেছেন শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচন করতে হবে; বাধা যারা দেবে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা। আমরা তো নির্বাচন চাই, আমরা কেন বাধা দেব? অবরোধ যারা করবে, ঢাকা অচল যারা করবে, তারাই বাধা দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বন্ধুরা কি ব্যবস্থা নেয়, আমরা তা দেখব।’

ওবায়দুল কাদের সমাবেশে বক্তৃতা শুরু করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম উল্লেখ করে। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুলের পকেট গরম, মাল-পানি ভালো সরবরাহ, ভালো আসছে, পকেট গরম, ওনার কথাও গরম। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আমাদের ধমক দেন, ভয় দেখান। মির্জা ফখরুল পাঁচ তাঁরা হোটেলের নাশতা খেয়ে অনশন করেন তিন ঘণ্টা, আড়াই ঘণ্টা পরে বিদেশি জুস খেয়ে অনশন বন্ধ করেন। এ আন্দোলন তাঁরা করছেন।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘আমাদের বার্তা দিচ্ছে, দিনক্ষণ বলে দিচ্ছে, কবে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। আমি ফখরুল সাহেবকে বলতে চাই, আজ নয়-কাল—এভাবে বলবেন না। বলেন, কখন আমাদের শেষ বার্তা? আপনারা কে বার্তা দেওয়ার? কার কাছে ক্ষমতা দেবেন শেখ হাসিনা? আপনার কাছে নাকি দণ্ডিত যুবরাজ তারেক রহমানের কাছে? কার কাছে দেবে। আমিও বার্তা দিয়ে দিচ্ছি। শেষ বার্তা। আপনি শেষ বার্তা দিয়েছেন ক্ষমতা ছেড়ে দিতে, আমি আপনাকে শেষ বার্তা দিচ্ছি, আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা নির্বাচনী সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। বার্তা দিয়ে দিচ্ছি, নির্বাচনের পর আল্লাহর রহমতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা আবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসবেন। এটাই আমাদের বার্তা। অন্যথা হবে না।’

বিএনপিকে খুনির দল আখ্যা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এদের হাতে রক্তের দাগ। এদের হাতে ১৫ আগস্টের রক্ত, শিশু রাসেলের রক্ত, বঙ্গবন্ধুর রক্ত, বেগম মুজিবের রক্ত, জাতীয় চার নেতার রক্ত। এরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকেও হত্যা করতে চেয়েছিল, যেখানে আইভী রহমানসহ ২৩ জনের রক্ত। এরা বাংলার শতসহস্র মায়ের বুক খালি করেছে। এ অপশক্তির হাতে বাংলাদেশের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারি না।’

তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে উল্লেখ করে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক আজিমপুরে শুয়ে আছে। ওইটা আর ফিরে আসবে না। ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক আর আসবে না। ওয়ান-ইলেভেনের দুঃস্বপ্ন কি সফল হবে?’

পশ্চিমাদের সমর্থনে উৎসাহিত হচ্ছি—বিএনপির মহাসচিবের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব দুনিয়ার অবস্থা ভালো না। যাদের কথা বলছেন তাদের ঘর সামলানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। যাদের কথা বলছেন তাদের চারপাশে অশান্তির আগুন, এ আগুন সামাল দিতে পারছে না। তারা ঘর সামলাবে! না এখানে এসে আপনাকে উৎসাহ দেবে? সময় চলে গেছে। উৎসাহ দেওয়ার দিন চলে গেছে।’

খেলা হবে, এই খেলায় জিততে হবে জানিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ স্পিরিট যেন থাকে। কেউ কেউ বলে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে স্পিরিট বাড়বে। সরকারি দলে থাকলে একটু নরম নরম। এখনতো দেখছি স্পিরিট আছে। এটা থাকবে তো?’ এ সময় সমাবেশে আগতরা ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দেন।

নৌকা ছাড়া উপায় নেই এমন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের শান্তি চাইলে নৌকা, সুখ চাইলে নৌকা, উন্নয়ন চাইলে নৌকা, মুক্তিযুদ্ধ চাইলে নৌকা, স্বাধীনতা চাইলে নৌকা। নৌকা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র থাকবে না। সারা দেশে উন্নয়ন চাইলে শেখ হাসিনার নৌকায় ভোট দিতে হবে।

নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, সারা দুনিয়ায় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। দাম বাড়াচ্ছে বড় বড় শক্তি, বাংলাদেশের মানুষ এর শাস্তি পাচ্ছি। সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে, ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি, একজন মানুষ আছে কষ্ট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে যার রাতে ঘুম নেই। তিনটা ঘণ্টা তিনি ঘুমান। বঙ্গবন্ধুর পর এমন সৎ নেতা আমরা দেখিনি। শেখ হাসিনা নেতা, আমাদের বুকে সাহস আছে।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী। আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শাহজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, মির্জা আজম, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান, ঢাকার দুই মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ফজলে নূর তাপস প্রমুখ।

 

সরকার পদত্যাগের এক দফা-বিদায় হন: ফখরুল

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দলটি। বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবো। এই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। তারপর থেকে এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামবো না। অনেক বাধা আসবে, এসব বাধা অতিক্রম করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে ফখরুল বলেন, জনগণ এই সরকারকে দেখতে চায় না বুঝতে পেরে বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। ক্ষমতা শেষ হওয়া ঘনিয়ে আসায় সরকার জনগনের ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে। সমাবশকে পণ্ড করতে গতকাল থেকে ২৫০জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই, জনগন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, মানে মানে বিদায় হন।

দুর্গা পূজার ছুটির মধ্যে সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পূজার ছুটির সিদ্ধান্ত নেন কী করবেন। পদত্যাগ করে সেফ এক্সিট নেবেন, নাকি জনগণের দ্বারা বিতাড়িত হবেন। তাই সময় থাকতে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।

মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে বিএনপি নেতাদের দমিয়ে রাখা যাবে না উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘যত দ্রুত এটা বুঝে পদত্যাগ করে সেফ এক্সিট নেবে সরকার, ততোই তাদের জন্য ভালো। সরকার বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার ও সাজা দিয়ে নির্বাচনের মাঠ পরিষ্কার করতে চায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে শুধু রাজনীতি নয় অর্থনীতি রক্ষা করা যাবে না।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, সরকার শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না।সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার শুরু করেছে। গ্রেপ্তারের ভয় এখন বিএনপির নেতাকর্মীরা পায় না। নেতাকর্মীরা জেনে গেছে সরকারকে যেতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি নয় আওয়ামী লীগ বেশি বাড়াবাড়ি করছে। অহংকার ছাড়ুন নয়তো পরিণতি ভয়াবহ। সরকারকে বলছি, বিএনপির বসাবসির কোনো কর্মসূচি নেই, আন্দোলনের কর্মসূচি আসছে।

এর আগে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এই জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে জড়ো হতে শুরু করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। সমাবেশস্থলের চারপাশ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুনে ঢেকে যায়। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে ব্যানার ও ফেস্টুন সহকারে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন তারা। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সরকারের পদত্যাগ করতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় নেতা-কর্মীদের।