• বুধবার , ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ভয়–ডরহীন’-বাংলাদেশ-বোলিং চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা জিততে পারি’


প্রকাশিত: ৭:৪৭ পিএম, ১৭ মার্চ ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৩১ বার

 

205অনলাইন ডেস্ক রিপোর্টার.:   

অনেকে বলেন, ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসল মজা-রোমাঞ্চ নাকি নকআউট পর্বে। এ পর্বটাও আবার এই শুরু এই শেষ! সংক্ষিপ্ত রোমাঞ্চকর সেই নকআউট পর্বের শুরু আগামীকাল। তবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখা বাংলাদেশের খেলা পরশু। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের হারানোর কিছু নেই; বরং ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলার কথাই বললেন সাকিব আল হাসান।

201বাংলাদেশের সামনে আট বছর আগের স্মৃতি। ২০০৭ বিশ্বকাপে এ দিনে পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে এসেছিল সেই দারুণ জয়। সেই ম্যাচে ৫৩ রান করা সাকিব আজ সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘আমার মনে হয় সেদিন (আট বছর আগে) আমরা ভয়হীন ক্রিকেট খেলেছিলাম। সেদিন যেমনটা খেলেছিলাম, তেমনটাই খেলতে চাই। এ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত মনে হয় সেটি করতে পেরেছি। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেমন খেলেছি, তেমনটা খেললে আশা করি ম্যাচটা দারুণই হবে। এটি আসলে ওই দিনের ওপর নির্ভর করছে। এ জন্য আমাদের শুরুটা ভালো করা প্রয়োজন। আমরা যদি ছন্দ ধরে রাখতে পারি, তাহলে যেকোনো কিছুই সম্ভব।’

এ বিশ্বকাপে দারুণ ফর্মে রয়েছে ভারত। ছয়ে-ছয় নিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে তারা। দলে রয়েছে ভীতিজাগানিয়া কয়েকটি নাম—মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ান। সাকিবও মানছেন তা। তবে নিজেদের সেরা দিনে কোনো বড় নামে কাজ হয় না, সেটিও মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশ-সেরা অলরাউন্ডার, ‘ভারত খুবই ভালো দল। তারা বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তাদের দলে বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছে। তবে আমরাও কিন্তু এ বিশ্বকাপে ভালো খেলছি। আমাদের আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে। এ ম্যাচের জন্য আমরা প্রস্তুত। অবশ্যই কাগজে-কলমে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত এগিয়ে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এটি এক ম্যাচের খেলা। যদি দিনটা আমাদের হয় আর তাদের খারাপ হয়, তবে কেউ জানে না কী হবে।’

বাংলাদেশের দলীয় লক্ষ্য ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। সেটি পূরণ হয়েছে। কাজেই ভারতের বিপক্ষে হারানোর কিছু নেই বললেন সাকিব, ‘দর্শকেরা দলের কাছে সব সময় অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। তাদের প্রত্যাশামতো আমরা বেশ ভালো খেলেছি। আমাদের এখন প্রয়োজন খেলায় মনোযোগ দেওয়া এবং খেলায় কীভাবে ভালো করতে হয় , সেটিই মূল বিষয়। যদি সেটা ঠিকঠাক করতে পারি, আশা করি ফলই সব বলে দেবে। জয়-পরাজয় ব্যাপার নয়। যদি নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারি, সেটিই হবে মূল বিষয়।’

`বোলিং চ্যালেঞ্জটা নিয়ে যদি আমরা

জিততে পারি ম্যাচটা খুব এক্সাইটিং হবে’

দুদিন পর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে টস করতে নামবেন। সেই রোমাঞ্চ ছাপিয়ে কাল সারা দিন মাশরাফি বিন মুর্তজার মনে বেদনার ছায়া। অকালপ্রয়াত প্রিয় বন্ধু মানজারুল ইসলাম রানার মৃত্যুবার্ষিকীতে ব্যথাতুর মাশরাফি। 

সকালে উঠেই মনে হয়েছে এই দিনে রানা চলে গিয়েছিল। আমার সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল ও। টুরে একসঙ্গে ঘুমাতাম। ও আলো থাকলে ঘুমাতে পারত না। দরজার নিচে যে একটু ফাঁক থাকে, ওখান দিয়ে আলো আসত বলে টাওয়েল গুঁজে দিত। আমি আবার অন্ধকারে ঘুমাতে পারি না। ওকে তাই মারতাম। ও-ই তাই স্যাক্রিফাইস করত। বলত, তুই আগে ঘুমা, আমি পরে ঘুমাব, আমি অন্ধকার ছাড়া ঘুমাতে পারি না

২০০৭ বিশ্বকাপে রানা মারা যাওয়ার পরদিনই ভারতের সঙ্গে ম্যাচ ছিল। এবার আরেকটি বিশ্বকাপে দুই দিন পর সেই ভারতের সঙ্গেই খেলা। আসলে এই দুনিয়াতে কাকতালীয়ভাবে অনেক কিছুই মিলে যায়। আমরা নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জিতলে তো দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলতে হতো। আমরা এখন ভারতের সঙ্গে খেলছি।এই মেলবোর্ন অনেক কিছু নিয়ে নিয়েছে… রক্ত, মাংস…এবার যেন কিছু ফিরিয়ে দেয়। এই কোয়ার্টার ফাইনাল আবার সেই মেলবোর্নেই নিয়ে এল!
এই মেলবোর্নে আমি অনেক কষ্ট করেছি। অপারেশনের পর অপারেশন। অপারেশন তো অজ্ঞান করে করেছে। বুঝিনি। কিন্তু এরপর যে কষ্ট…হাঁটতে পারি না, সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করা…২০০৩-এ প্রথম আসি মেলবোর্নে।
এরপর তো আরও অনেকবার। তবে এবারই প্রথম মেলবোর্নে খেলব।
 তবে এখানে যে উইকেট দেখছি, তাতে এটা ভেজা থাকার কোনো চান্স নেই। এখানে মনে হয়, ৩০০ রানের উইকেটই থাকবে। তবে ওই বার আমি ভালো বোলিং করলেও আমরা সবাই মিলে ভালো খেলেছিলাম বলেই জিততে পেরেছিলাম। পুরো টিম পারফরম্যান্স ছিল। এখানেও আমাদের টিম একসঙ্গে ভালো খেললে সুযোগ থাকবে। ওদের যে দল, তাতে আমরা এক-দুজন ভালো খেললে পারব না।
তবে এই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকান বোলাররাও সংগ্রাম করছে, ভারতীয় বোলাররা এখনো সত্যিকার চ্যালেঞ্জে পড়েনি। অস্ট্রেলিয়ারও মিচেল স্টার্ক ছাড়া আর কেউ এমন বিরাট কিছু করেনি। বিশ্বের সেরা বোলিং অ্যাটাক বললে আপনি দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কথা বলবেন। নিউজিল্যান্ড নিজেদের মাঠে খেলেছে বলে ভালো করেছে, তার পরও আমাদের কাছেই ওদের বোলাররা মার খেয়েছে। এখানে ইউএই পর্যন্ত ২৫০ রান করে ফেলছে। এর কারণ হচ্ছে, এখানে ট্রু উইকেট, বল উঁচু-নিচু হয় না। ব্যাটসম্যানদের বিশ্বাস থাকে যে, বল ব্যাটেই লাগবে। এখানে তাই বোলিংটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে অনেকে মনে করছে ভারতের বিপক্ষে পড়েছি বলে আমরা লাকি। আবার আনলাকিও মনে করছে অনেকে। আমি বলব, সমান সমান। এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার পরই ভারত সবচেয়ে ভালো খেলছে। ভারতের এই ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে বোলিং করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জটা নিয়ে যদি আমরা জিততে পারি, ম্যাচটা খুব এক্সাইটিং হবে।
 সবচেয়ে বড় কথা, সবাই ভাবত আমরা অনেক বড় টিম। নকআউট ম্যাচে চাপ আছেই। সব দলই চিন্তা করবে, হেরে গেলেই বিদায়। আমরা যদি নিজেদের আট নম্বর দল ধরি, একমাত্র আমাদেরই এ নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। কারণ, আমাদের হারানোর কিছুই নেই। বাংলাদেশের মানুষ তো আশা করেছেই, কিন্তু এই বিশ্বকাপ নিয়ে এত যে কথা শুনেছেন, কাউকে কি বলতে শুনেছেন বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পারবে? কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যাওয়ার পর বলা হচ্ছে, ওরা কি এই চাপ নিতে পারবে? আমাদের ওপর কিসের চাপ, চাপ তো থাকবে অন্য দলের ওপর।

 আমরা তো বাংলাদেশের মানুষকে তেমন কিছুই দিতে পারিনি। যদি চিন্তা করে দেখেন, আমরা গত ১৫ বছর একঘেয়ে ক্রিকেট খেলে গেছি। কখনো হয়তো জিতেছি। আমি সব সময়ই বলি, বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রতিটি জয়ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই আমরা খুব বাজে খেলে হেরেছি। তার পরও বাংলাদেশের মানুষ আমাদের দিনের পর দিন সমর্থন করে গেছে। খারাপ খেললে গালি দেবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দিনের পর দিন আমাদের যেভাবে সমর্থন দিয়েছে, এটা অসাধারণ।
ভারতের যে-ই দাঁড়িয়ে যাবে, সে-ই ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে পারবে। ধাওয়ান আছে, রোহিত শর্মা ওয়ানডেতে ২৫০-এর বেশি রান করেছে। রায়না গত ম্যাচে এক শ মারল। ধোনি তো অহরহ করে আসছে। এমনকি রাহানেও দুর্দান্ত ক্রিকেটার। তার পরও কোহলির কথা আলাদা করে বলব, কারণ ও এমন একজন ব্যাটসম্যান, যে ম্যাচ শেষ করে দিয়ে বেরোবে। ধোনিও তা করে, তবে ও যেখানে খেলে, সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু কোহলি তিন-চারে নেমেও শেষ পর্যন্ত খেলে আসে। এটাও একটা-দুইটা বা পাঁচটা-ছয়টা ম্যাচ না, অসংখ্য ম্যাচে এমন করেছে। ওর উইকেটটা তাই তাড়াতাড়ি নিতে হবে। এত দূর যখন এসেছি, সহজে ছাড়ব না। আমরা সবাই নিজেদের উজাড় করে দেব।