ব্লগার অনন্ত বিজয় খুনের নেপথ্যে-সিলেটে মৌলবাদের পাতা ফাঁদ
এস রহমান.সিলেট: নিজের মৃত্যুর একদিন আগেই লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যাকাণ্ড, বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নারী লাঞ্ছনা ও ছাত্র ইউনিয়নসহ কয়েকটি সংগঠনের কর্মসূচিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে লিখেছিলেন ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ।তার ব্লগিং নিয়ে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জাতিরকন্ঠের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুরে ধরা হলো।
আর নিজের উপর হামলার ঠিক কিছুক্ষণ আগে তিনি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে নিয়ে করা স্থানীয় একজন সংসদ সদস্যের একটি মন্তব্যের সমালোচনা করে।খুন হওয়ার আগে ফেসবুকে এটিই ছিল তার শেষ পোস্ট ।
এরপর থেকে তার টাইম লাইনে একের পর এক পড়ছে পোস্ট যাতে থাকছে শোক, শ্রদ্ধা, সমবেদনা আর ক্ষোভ।
গতকাল তার পোস্টে অনন্ত লিখেছিলেন, “অভিজিৎ রায়কে যখন খুন করা হয়, অদূরেই পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছিল। খুনিরা নিশ্চিন্তে খুন করে চলে গেল। পরে পুলিশ বলে তাদের নাকি দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। বড় জানতে ইচ্ছে করে তাদের দায়িত্বটা আসলে কি!
অনন্ত বিজয় দাশ ‘যুক্তি’ নামে একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক পত্রিকা সম্পাদন করতেন সিলেটে।
ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে যখন খুন করে খুনিরা পালিয়ে যাচ্ছিল তখনও কিন্তু পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু পুলিশের কপাল খারাপ, তারা বলতে পারলো না— এক্ষেত্রেও তাদের কোনো দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। কারণ, লাবণ্য নামের তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানবিক মানুষ খুনিদের ধরে ফেলেন। খুনিদের শ্রীঘরে পাঠিয়ে দেন”।
গত ২৬শে মার্চে স্বাধীনতা দিবসে অনন্ত বিজয় লিখেছিলেন, “সুপ্রিয় দেশবাসী, শুভ স্বাধীনতা দিবস! একসেপ্ট রিলিজিয়াস এন্ড কালচারাল মাইনোরিটিস্!”
অনন্ত বিজয়ের বন্ধু ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বিনয় ভদ্র বিবিসিকে বলেন মূলত বিজ্ঞান বিষয় পত্রিকা সম্পাদনা আর ব্যাংকের চাকুরি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন অনন্ত।
ঢাকার শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ওই সময় তিনি সিলেটে ওই আন্দোলনের একজন সংগঠক ছিলেন।
নেপালের ভূমিকম্পের পর তার একটি পোস্ট ছিল, “কাঠমোল্লা টাইপের ধার্মিকদের কাছে খুব বেশি আশা করতে নেই। সেটা পাকিস্তানি মোল্লাই হোক, মার্কিন খ্রিস্টান মোল্লাই হোক আর ভারতীয় হিন্দু মোল্লাই হোক! দিনশেষে এরা সবাই এক গোয়ালের!”
২৮শে এপ্রিলের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর তিনি লিখেছেন , “এলোমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই! ইস! সোনার ছেলেরা বায়না ধরেছে, মা কি আর না-দিয়ে পারে!! বঙ্গে মোরা “নির্বাচন” করলেও আদতে এটা “ইলেকশন” নয়, “সিলেকশন”-ই হলো!…”
গত ৫ই মে তিনি লিখেছেন , “মনে হচ্ছে আল-কায়েদার সাথে আইএসের মাঠ দখলের লড়াই খুব শীঘ্রই। কেন জানি মনে হচ্ছে, এটা বাংলাদেশ ইস্যুতেই ঘটবে।…”
সৌদি সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ওমরাহ ভিসা বন্ধের পর ৮ই মে অনন্ত লিখেছেন , “ ওমরাহ হজে গিয়ে নাকি কিছু বাংলাদেশি আর দেশে ফিরেনি। সৌদি সরকার এজন্য খুব ক্ষিপ্ত। তারা এখন ওমরাহ হজের ভিসা ইস্যু করা বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য পুরোপুরি। ভাবতেছি : — সৌদি সরকারের এহেন সিদ্ধান্তে কারো ধর্মানুভূতি (বিশেষ করে হজানুভূতি) আহত হয়েছে কী?…”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড: শফিউল ইসলামের প্রসঙ্গে ৯ইমে তার মন্তব্য ছিল, “ক্লাসে ছাত্রীদের নেকাবের (চেহারা ঢাকা) বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল ইসলাম যদি অবস্থান নিয়েও থাকেন, তাহলে তিনি হুবহু তাই করেছেন যা করেছেন মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি ও বিশ্ব-মুসলিমের শিক্ষাকেন্দ্র আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম ড: তানতাওয়ি।…………”
অন্যদিকে মুক্তমনা ব্লগে তার অধিকাংশ লেখাই বিজ্ঞানভিত্তিক। তবে অভিজিৎ রায় হত্যার পর আটক হওয়া শফিউর রহমান ফারাবী ও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে একটি করে পোস্ট রয়েছে সেখানে।