ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ অন্যায়-এটা আদালতের মাধ্যমে হওয়া উচিত: মিন্টু
বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ বা স্থগিত করা হচ্ছে, তা আইনসিদ্ধ হচ্ছে না। আদালতের প্রক্রিয়ার বাইরে এভাবে ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার বিষয়টি তিনি নিজেও পছন্দ করেন না।
সোমবার ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সদস্যদের সঙ্গে এক আলোচনায় প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। সভায় দেশের বর্তমান ব্যবসা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও করণীয় বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন এই ব্যবসায়ী নেতা। অনুষ্ঠানে ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমসহ সংগঠনটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ)। আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘অন্যায়ভাবে (ব্যাংক হিসাব) ফ্রিজ করাটা আমি নিজেও পছন্দ করি না। এখন যেটা ঘটছে, ইচ্ছা হলেই আরেকজনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে দেওয়া হচ্ছে; এটা আইনসিদ্ধও নয়। বিষয়টি আদালতের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হওয়া উচিত। যদি উপযুক্ত প্রমাণ থাকে, তাহলে অনুসন্ধান করে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ফ্রিজ করা যেতে পারে। আমার ব্যাংক হিসাবও ফ্রিজ করতে পারে, আপত্তি নেই; কিন্তু যা–ই করুক আইন অনুযায়ী করুক।’
সম্প্রতি বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক খাতের ১৬টি কোম্পানির মালিকানা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারের উপদেষ্টা কমিটির এক সভায়। এর বাইরে এই গ্রুপের বেশ কয়েকটি কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘কারা বিক্রি করবে, কেন করবে? কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য বা প্রতিষ্ঠান নৈতিকও না অনৈতিকও না। এসব প্রতিষ্ঠান যারা চালায়, তারা যদি অনৈতিক হয়, আইন মেনে তাদের বিচার হওয়া উচিত। এ নিয়ে আমি কিছু বলব না। মালিকদের শাস্তি হোক, কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান যেন বন্ধ না হয়। কোনো উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান, যেখানে হাজার হাজার লোক কাজ করে, তা নিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নেবে না, সেটা আশা করব।’
ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা মন–কষাকষি চলছে। এর কারণ, ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ভুলে গিয়ে শুধু একটি দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে। এখন সেই সরকার আর ক্ষমতায় নেই, এটা ভারতের জন্য মেনে নেওয়া কষ্টকর। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নীতি হচ্ছে, আগে আপনি (ভারত) ৫ আগস্ট এর নীতিগত স্বীকৃতি ঠিকমতো দেন; এরপর আমরা ভবিষ্যতের দিকে আগাই। আমিও মনে করি, এটা যথাযথ চিন্তাধারা।’
ভারতকে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হওয়া উচিত। তবে একই সঙ্গে আত্মসম্মান যেন বজায় থাকে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করায় অর্থনীতির অন্য ভিত্তিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সুদহার বাড়িয়ে টাকার সরবরাহ কমালে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমে যাবে। এতে পণ্যের সরবরাহ কমবে। অর্থাৎ মুদ্রা সরবরাহ কমাতে গিয়ে পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেওয়া হবে। আর পণ্য সরবরাহের ঘাটতি থেকে তৈরি মূল্যস্ফীতি দীর্ঘস্থায়ী হয়। সুতরাং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার পাশাপাশি দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
তবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় উন্নত হচ্ছে বলে মনে করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এ সভাপতি। তিনি বলেন, তবে ব্যাংক খাতে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা এক দিনে ঠিক হবে না। সরকার একদিকে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার এবং অন্যদিকে গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ফলে যেসব ব্যাংককে দুর্বল বলা হয়, তারা ক্রমেই ভালো করছে।
পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি করতে হলে গণতান্ত্রিক সরকার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, একজন উপদেষ্টা বলেছেন যে তাঁরা দায়িত্বে আছেন, ক্ষমতায় নেই। এটা তো ভয়ংকর কথা। গণতান্ত্রিক সরকারের জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা থাকে। তাই অতিসত্বর নির্বাচন দেওয়া, অন্তত নির্বাচন নিয়ে একটা রোডম্যাপ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
সব ক্ষেত্রে সংস্কার দরকার নেই উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, যেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, সেগুলো তারা (সরকার) এখনই করতে পারে। তবে সাংবিধানিক সংস্কারগুলোর বিষয়ে সবার সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাব তৈরি করে দিতে পারে। তাতে ভবিষ্যতে যে-ই সরকারে আসুক, তাঁরা ওই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবেন।