বেনজীরের সাভানা হিন্দুদের সম্পত্তি
সম্পত্তি ক্রোক করল জেলা প্রশাসন-
গোপালগঞ্জ থেকে ফিরে লাবণ্য চৌধুরী : অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের নিয়ন্ত্রণ বুঝে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে দিয়ে আদালতের ক্রোকাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এদিকে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় বলেছে বেনজীরের এই সম্পত্তি হিন্দুদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কেড়ে নেয়া হয়েছে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে।ক্রোকের সময় এলাকাবাসী জড়ো হয়ে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে। ভুক্তভোগীরা জানান, জেলা প্রশাসক পার্কের দায়িত্ব নেওয়ায় খুশি তারা। সরকারি রাস্তা ব্যবহার করে নিজেদের জমি ও পুকুরে যেতে পারবেন। সেই সাথে তাদেরকে জোর করে নেয়া জমিগুলোও ফেরত পাবে বলে আশা তাদের।
শনিবার সকাল থেকে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী পার্কের যাবতীয় কার্যক্রম চালু থাকবে। এর আগে গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় পার্কের প্রধান ফটকের পাশে মাইকিং করে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যৌথভাবে এ ঘোষণা দেন। এর ফলে আজ থেকে সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের কর্তৃত্ব গ্রহণ করলো জেলা প্রশাসন।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসনের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজ বাবলী শবনম, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহামন, সহকারী পরিচালক সোহরাব হোসেন সোহেল, দুদক মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক মো.সাইদুর রহমান ও গোপালগঞ্জ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো.জিল্লুর রহমান রিগানসহ জেলা প্রশাসন ও দুদক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর দুইটি টীম ওই পার্কে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং বেনজীর ও তার পরিবারের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেয়। গোপালগঞ্জের দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক) উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান জানান, শনিবার সকাল থেকে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা প্রস্তুত ও সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়া হবে। এরপর থেকে আয়-ব্যয়সহ জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় পার্কের সকল কার্যক্রম চালু থাকবে এবং দর্শনার্থী প্রবেশে কোন বাঁধা থাকবেনা।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসনের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজ বাবলী শবনম পার্কের প্রধান ফটকের পাশে দাড়িয়ে এলাকাবাসির উদ্দেশ্য মাইকে ঘোষণা করে বলেন, ঢাকা মহানগর স্পেশাল জজ আদালতের আদেশ নং ২৬৯/২৪ ( তারিখ ২৩ মে) মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের বিধিমালা ২০০৭ এর ১৮ অনুযায়ী নিন্মবর্তী সম্পত্তির (সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের) ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পত্তি অবহিত করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ আদেশ কার্যকর করার জন্য এখনে উপস্থিত হয়েছি এবং আদেশ কার্যকর করা হয়েছে। এখন থেকে এ সম্পত্তির তত্বাবধায়ক জেলা প্রশাসক স্যার। এলাকাবাসির প্রতি অনুরোধ এসম্পত্তির তত্বাবধায়ক যেহেতু জেলা প্রশাসক স্যার, তাই এই সম্পত্তির জেলা প্রশাসক পরিচালনা করবেন। যেহেতু এটা সরকারি সম্পত্তি, তাই এখানে কোন প্রকার অবৈধ প্রবেশ বা হামলার ঘটনা ঘটলে জেলা প্রশাসক স্যারকে জানানোর অবুরোধ করছি। কেউ যদি আইন বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
ভুক্তভোগীরা জানান, জেলা প্রশাসক পার্কের দায়িত্ব নেওয়ায় খুশি তারা। সরকারি রাস্তা ব্যবহার করে নিজেদের জমি ও পুকুরে যেতে পারবেন। সেই সাথে তাদেরকে জোর করে নেয়া জমিগুলোও ফেরত পাবে বলে আশা তাদের। জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালে র্যাবের মহাপরিচালক এবং ২০২০ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত আইজিপি থাকাকালীন সময়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল গ্রামে ৬২১ (দুর্নীতি দমন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী) বিঘা জমির উপর গড়ে তোলেন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক। এ পার্কে সব জমি হিন্দু সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে।
তাদের ভয় দেখিয়ে, জোর করে এবং নানা কৌশলে জমি কেনা হলেও অনেক জমি করা হয়েছে দখল। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হলে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করে। পরে আদালত সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্রোকের নির্দেশ দিলে বিভিন্ন সময়ে রাতের আধারে ট্রাক করে মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসি।