• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

“বুদ্ধিজীবী হত্যার ব্যথা আমরা ৪৫ বছর ধরে বয়ে আসছি-নায়ক মুজাহিদের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখুন”


প্রকাশিত: ৩:৩২ এএম, ১৬ জুন ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩০৯ বার

    এস রহমান.ঢাকা:  `বুদ্ধিজীবী হত্যার ব্যথা আমরা ৪৫ বছর ধরে বয়ে আসছি-নায়ক মুজাহিদের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখুন’।এ দাবি স্বজনদের-দেশবাসীরMuzahid-www.jatirkhantha.com.bd
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আপিলের রায় আজ মঙ্গলবার ঘোষণা করবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চের আজকের কার্যতালিকার ১ নম্বরে মুজাহিদের রায় ঘোষণার জন্য রয়েছে। এ বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড আপিল বিভাগে বহাল থাকলে এর প্রতিক্রিয়ায় জামায়াত এক দিনের হরতাল দিতে পারে। দলটির দায়িত্বশীল সূত্র এ কথা জানিয়ে বলেছে, পাশাপাশি সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচিও দেওয়া হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলীয় অন্য নেতাদের বেলায়ও এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল।
মুজাহিদ জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী নেতা। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের তিনি সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন। চূড়ান্ত রায়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে এবং দণ্ড কার্যকরের আগে-পরে জামায়াত কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে। অবশ্য দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা আশা করছেন, আপিলের রায়ে মুজাহিদ মৃত্যুদণ্ডের সাজা থেকে রেহাই পাবেন।
জামায়াতের সূত্র জানায়, আপিলে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে প্রথমে এক দিনের হরতাল দেওয়া হতে পারে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায়ে প্রথম সর্বোচ্চ সাজা পান মুজাহিদ। ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়, এর একটিতে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও সহযোগিতার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। ফরিদপুরের সদর থানার বাকচর গ্রামে হিন্দু নিপীড়ন ও নির্যাতনের দায়েও তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
২০১৩ সালের ১১ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন মুজাহিদ। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল আপিল বিভাগে ওই আপিলের শুনানি শুরু হয়। নয় কার্যদিবস ধরে চলা শুনানির প্রথম ছয় দিন ট্রাইব্যুনালের রায় ও সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এরপর তিন কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের পাল্টাপাল্টি যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে ২৭ মে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। ওই দিনই ১৬ জুন (আজ) রায়ের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

ali-ahsan-m-mojaheed-www.jatirkhantha.com.bdঅ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আশা করছেন, চূড়ান্ত রায়েও মুজাহিদের সর্বোচ্চ দণ্ড বহাল থাকবে। গতকাল সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ব্যথা আমরা ৪৫ বছর ধরে বয়ে আসছি। আমরা মুজাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি, তাঁর চরম দণ্ড প্রত্যাশা করছি। সর্বোচ্চ সাজা না হলে বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে না।’
আপিলের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম যুক্তি ছিল, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পেছনে গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের বেশির ভাগ সদস্যই আলবদরে যোগ দিয়েছিলেন। মুজাহিদ ছিলেন ছাত্রসংঘের প্রধান। তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও তা কার্যকরে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
তবে ট্রাইব্যুনালের মতো আপিল বিভাগেও যুক্তি উপস্থাপনকালে আসামিপক্ষ দাবি করেছে, মুজাহিদ একাত্তরে ছাত্রসংঘের নেতা ছিলেন, কিন্তু আলবদর বাহিনীতে ছিলেন না। একাত্তরের অক্টোবর থেকে তিনি ছাত্রসংঘের সভাপতি হন। তদন্ত কর্মকর্তা আলবদর বাহিনীর নামের তালিকায় মুজাহিদের নাম পাননি। আপিল বিভাগে মুজাহিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।
এর আগে আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও তিনটি মামলার চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়েছে। আর জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।