বিসিসির টাকা ছিল হরিলুটের বাতাসা
দুর্নীতিবাজদের ছাড়ব না-খোকন সেরনিয়াবাত
বিশেষ প্রতিনিধি : কেঁচো খুড়তে অজগর বেরিয়ে আসছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের দুর্নীতি লুটপাটের। লুটপাটের শিরোমনি ছিলেন সাবেক মেয়র। বর্তমান মেয়র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন এর কাছে অভিযোগ করেছেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের টাকা সদ্য বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ‘হরিলুটের বাতাসা’র মতো ছিটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। বরিশাল সিটির বর্তমান মেয়রের অভিযোগ, নিয়োগ ছাড়াই পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে বেতন দিতেন সাদিক আবদুল্লাহ। এ ভগ্নদশা থেকে সিটি করপোরেশনকে সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে নিয়োগ ছাড়া কয়েক মাসের বেতন নেয়া ১৩৯ জনকে সিটি করপোরেশন থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও ৫১ জনের চাকরি স্থগিত করা হয়েছে।খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, নো ওয়ার্ক নো পে (কাজ নেই তো টাকাও নেই)। আমি মেয়র থাকাকালীন বিন্দুমাত্র দুর্নীতি কাউকে করতে দেব না। দুর্নীতির অণু-পরমাণু সব খুঁজে বের করা হচ্ছে। জনগণের প্রতিষ্ঠান যেভাবে চলা দরকার, ঠিক সেভাবেই চলবে।
ওদিকে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদের অনেকের দাবি কাজ করেও তারা বরখাস্তের শিকার হয়েছেন।তবে সিটির কাউন্সিলররা বলছেন, সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ যাদের মৌখিক নিয়োগ দিয়েছিলেন, তাদের কাজই ছিল সারাদিন ঘোরাফেরা করা আর মাস শেষে বেতন নেয়া। অন্যদিকে সাদিক আবদুল্লাহর আমলে চাকরিচ্যুত হওয়া ৩১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পুনর্বহাল করেছেন মেয়র খোকন।
চলতি বছরের ১৪ নভেম্বর বরিশাল সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। এর এক মাস না যেতেই ৮ ডিসেম্বর দৈনিক মজুরিতে মৌখিক নিয়োগপ্রাপ্ত ১৩৯ কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল করেছে তার পরিষদ। আর ৫১ জনের চাকরি স্থগিত করে তাদের বিষয়ে চালানো হচ্ছে তদন্ত।এসব কর্মচারী সদ্য সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বিদায় নেয়ার এক মাস আগে মৌখিক নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে দাবি সিটি করপোরেশনের একটি সূত্রের।
ওই সূত্রটি জানায়, সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব ছাড়ার এক মাস আগে প্রশাসনিক শাখা, হাটবাজার, পরিছন্নতা, বাণিজ্য ও জনসংযোগসহ বেশ কিছু শাখায় প্রায় ৩০০ জনকে নিয়োগ দেন। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০টি শাখায় বর্তমানে তিন সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
এসব বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, নিয়োগ ছাড়াই অনেক মানুষকে বেতন দিয়ে দুর্নীতির পাহাড় গড়েছিলেন সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। জনগণের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এটা লুটপাটের জায়গা নয়; জনগণের সেবার প্রতিষ্ঠান।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবের অভিযোগ, খোকন যাদের বরখাস্ত করেছেন, তারা কোনো কাজই করতেন না। তারা ঘোরাফেরা করতেন আর মাস শেষে বেতন নিতেন। সাদিক আব্দুল্লাহর নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়। এ ছাড়া বর্তমান মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতকে বিতর্কিত করতে সাদিক আব্দুল্লাহর এই নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি প্রচেষ্টা ছিল।
তার ভাষ্য, যাদের সাদিক আব্দুল্লাহ সিটি করপোরেশনের টাকায় বেতন দিতেন, তাদের দিয়ে নিজের বাসার কাজ করাতেন। বরিশালের জনগণ সাদিক আবদুল্লাহর নিয়োগকৃত কর্মচারীদের কারণে সমস্যায় ছিলেন।
বরিশালের সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ যা যা দুর্নীতি করছেন, তা এখন বের হচ্ছে। নিয়োগ ছাড়া বেতন দেয়া বিরাট অপরাধ। কেননা জনগণের ট্যাক্সের টাকা সাদিক আবদুল্লাহ নিজের লোকজনের মাঝে বিলিয়ে দেয়াটা জনগণকে ধোঁকা দেয়ার শামিল।
এমনিতেই যেখানে পাঁচ বছরে কোনো সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয়নি, সেখানে জনগণের টাকায় চলা সিটি করপোরেশনের টাকা এভাবে অপচয় করাটা রাষ্ট্রীয়ভাবে তদন্ত করা উচিত। কত কোটি টাকা এভাবে সরানো হয়েছে, তার হিসাব জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য বর্তমান পরিষদের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে চাকরিচ্যুতদের অভিযোগ, তারা সাদিক আবদুল্লাহর লোক হওয়ায় ক্ষোভে নতুন মেয়র নিয়োগ বাতিল করেছেন। বেতন বকেয়া আছে বলেও দাবি তাদের।বরিশাল সিটি করপোরেশনের দুরাবস্থা দূর করে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বলে জানান মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। তার ভাষ্য, কাজ না করে বেতন নেয়ার সুযোগ কেউ পাবেন না। কারও ব্যক্তি স্বার্থ দিয়ে করপোরেশন চলবে না।
তিনি বলেন, নো ওয়ার্ক নো পে (কাজ নেই তো টাকাও নেই)। আমি মেয়র থাকাকালীন বিন্দুমাত্র দুর্নীতি কাউকে করতে দেব না। দুর্নীতির অণু-পরমাণু সব খুঁজে বের করা হচ্ছে। জনগণের প্রতিষ্ঠান যেভাবে চলা দরকার, ঠিক সেভাবেই চলবে।আমি যেখানে নিজে ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অফিস করি, তখন অন্য কারও ঘুরেফিরে বেতন নেয়ার সুযোগ নেই। দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য করা হয়েছিল বরিশাল সিটি করপোরেশনকে। সেখান থেকে দুর্নীতি মুক্ত করা হচ্ছে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির লালসা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, যাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ডাকা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারি, তারা জানেই না যে, কোন শাখায় চাকরি করছেন। এমন অনেকে রয়েছে যে, তারা জানেই না যে, তাদের চাকরি হয়েছে করপোরেশনে।
এককথায় লুটপাট করা হয়েছে জনগণের টাকা। আমরা আরও কিছু ব্যক্তির তালিকা করছি, যারা নামমাত্র কর্মচারী সিটি করপোরেশনের। অচিরেই করপোরেশন আরও দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার খবর বরিশালবাসী পাবে।