‘বিষ’ প্যারাসিটামল-রীড ফার্মার মালিকদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ
মেডিকেল রিপোর্টার : ভেজাল প্যারাসিটামল দিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় রীড ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিক মিজানুর রহমান ও স্ত্রী শিউলি রহমানসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে দেওয়া খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি আদেশের অনুলিপি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এই পাঁচজনকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপিলের গ্রহণযোগ্যতার শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।পরে তিনি বলেন, বিচারিক আদালতে আসামিদের খালাসের রায় মামলার নথিপত্র, সাক্ষ্য অনুযায়ী হয়নি। ফলে আসামিদের খালাসের রায় যথাযথ এবং যুক্তিযুক্ত নয়। তাই তাদের উপযুক্ত সাজা চাওয়া হয়েছে আপিলে। ২০০৯ সালের জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত রীড ফার্মার প্যারাসিটামল সিরাপ পানে সারাদেশে ২৮ শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠলে ১০ অগাস্ট ঢাকার ঔষধ আদালতে এ মামলা হয়।
তৎকালীন ড্রাগ সুপার শফিকুল ইসলামের করা এ মামলার এজাহারে বলা হয়, রীড ফার্মার প্যারাসিটামলে বিষাক্ত উপাদানের কারণে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলেন, ওই প্যারাসিটামলে ডাই ইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া যায়নি। তবে ওই ওষুধ ছিল নিম্নমানের। ঢাকার ঔষধ আদালতের বিচারক আতোয়ার রহমান গত বছরের ২৮ নভেম্বর পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেন।
রায়ে বলা হয়, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার ‘অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে’ অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। রায় ঘোষণার দিন পাঁচ আসামির মধ্যে রীড ফার্মার মালিক মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক শিউলি রহমান রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য তিন আসামি কোম্পানিটির পরিচালক আব্দুল গণি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক ছিলেন পলাতক।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম সঠিক নিয়ম মেনে জব্দ তালিকা এবং পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেননি। মামলা দায়েরের সময় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ ছিল, তা না নেওয়ায় তার অযোগ্যতা ও অদক্ষতা প্রমাণিত হয়।
এর আগে ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির দায়ে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের অন্যতম মালিক, ব্যবস্থাপকসহ তিনজনকে ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছিল ঔষধ আদালত।একই আদালত ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে ১৯৯২ সালে ৭৬ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঔষধ আইনে করা আরেকটি মামলায় বিসিআই ফার্মার ছয় কর্তাব্যক্তিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছিল।