• রোববার , ১৭ নভেম্বর ২০২৪

বিশিলের শাহ আলী নগর হাউজিংয়ের মহা জালিয়াত শমসের পাকরাও


প্রকাশিত: ৮:১৭ পিএম, ৪ এপ্রিল ১৭ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৮ বার

vvবিশেষ প্রতিনিধি  :  অবশেষে বিশিলের শাহ আলী নগর হাউজিং এস্টেটের জালিয়াত শমসের কে পাকরাও করেছে দুদক। জালিয়াতির মাধ্যমে ২৫০ কাঠার বেশি সরকারি জমি নিজের নামে ইজারা দেখিয়ে এই ভুয়া নগর গড়ে তোলেন মিরপুরের শমসের আলী। আর সেই নগরের জমিগুলো প্লট আকারে বিক্রি করে হাতিয়ে নেন শত শত কোটি টাকা। তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কর্মচারী ও সাব-রেজিস্ট্রারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট।  আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুর থেকে এ চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১-এর সহকারী পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ তাঁদের গ্রেপ্তার করেন।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন কথিত ‘শাহ আলী নগর হাউজিং এস্টেট’-এর মালিক শমসের আলী ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) মো. নুরুজ্জামান। দুদকের জনসংযোগ বিভাগ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক। মামলার আরেক আসামি মিরপুরের তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার মোখলেসুর রহমান ঠাকুর।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিশিল মৌজার খতিয়ান নম্বর ১১৯, ১০৬, ১৬১ ও ২৮৬-এর ৫১, ৫২, ৭৬ ও ৮১ নম্বর দাগে ৪ দশমিক ২৬৬৬ একর (২৫৮ দশমিক ৫৮ কাঠা) জমি ১৯৬০ সালে তৎকালীন গৃহায়ণ অধিদপ্তর অধিগ্রহণ করে (এল.এ. কেস নম্বর-১৩/১৯৫৯-৬০)। ১৯৮০ সালের ১৮ ডিসেম্বর এ বিষয়ে গেজেট নোটিফিকেশন করে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদিত নকশা ও সুপার ইম্পোজ নকশা অনুযায়ী এ সম্পত্তিতে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের জমি ও ডুইপ প্রকল্পের বিভিন্ন প্লট রয়েছে। এ সম্পত্তি কাউকে ইজারা কিংবা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

২০০০ সালের ২০ এপ্রিল এ সম্পত্তির ইজারা দলিল (দলিল নম্বর ২১১৭/২০০০) করে নেন মিরপুরের বিশিল এলাকার শরাফত আলীর ছেলে শমসের আলী। দলিলে ৯৯ বছরের জন্য ৪ একর জমির সেলামি দেখানো হয় মাত্র ৬৪ হাজার টাকা। অথচ গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এ সম্পত্তি লিজ বরাদ্দ দেয়নি। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের পক্ষে সংস্থাটির তৎকালীন অফিস সহকারী কাম ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মো. নুরুজ্জামান ‘দলিল বাহক’ হিসেবে ওই দলিলে সই করেন।

অথচ দলিল সই করার জন্য গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নুরুজ্জামানকে কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে মিরপুরের তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার মোখলেসুর রহমান ঠাকুর জমির মৌজা মূল্যের চেয়েও কম দেখিয়ে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি করেন। এত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কোনো ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও তিনি অন্যদের যোগসাজশে তা করিয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তিনি নিজ বা অন্যের স্বার্থে বিনা যাচাইয়ে ওই সম্পদ জালিয়াতিতে শমসের আলীকে সহায়তা করেন।

পরে ভুয়া ইজারার বরাদ্দপত্র দেখিয়ে নেওয়া ওই সম্পত্তির ওপর ‘শাহ আলী নগর হাউজিং এস্টেট’ সাইনবোর্ড টানিয়ে প্লট বিক্রি করে ওই চক্র। এসব প্লটের ওপর এখন গড়ে উঠেছে উপশহর। অর্ধশত প্লটের ওপর ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। আর এ এলাকা এখন পরিচিত ‘শাহ আলীনগর হাউজিং এস্টেট’ নামে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইজারা নিয়েছেন মর্মে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে সরকারি জমি আত্মসাৎ করেন। পরে জালিয়াতি ও প্রতারণামূলকভাবে ওই জমি দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করেন। মামলায় দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪০৬/৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।