শফিক আজিজ.ঢাকা:
বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) উপ কমিশনার জিল্লুর রহমানের ঘুষ কেলেংকারিতে ইজ্জত পাংচার জোগাড় হয়েছে পুরো বাহিনীর। বিএমপি পুলিশের-ঘুষ তহবিলের আরও ২৭ লাখ টাকা নয়ছয়ে জড়িত একাধিক জিল্লুর । ইতিমধ্যে উপ কমিশনার জিল্লুর চেকের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা ফেরত দিলেও আরও ২৭ লাখ টাকা ঘুষের অর্থ তিনি ফেরত দেননি। ঘুষ তহবিলের ২৭ লাখ টাকা তিনি কেন দিচ্ছেন না সেসম্পর্কে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।সন্দেহ করা হচ্ছে ওই টাকা ভাগ যোগ হয়ে যেতে পারে।এক্ষেত্রে আরও পুলিশ কর্মকর্তা ফেঁসে যেতে পারেন।
সূত্র জানায়, পরীক্ষায় পাশ করেও ২৩০ পুলিশ সদস্য’র পদোন্নতি আটকে দিয়েছিল বরিশাল বিভাগ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়ে পদোন্নতি বাগানোর জন্য ওই পুলিশ সদস্যরা সকলে মিলে ঘুষ তহবিল গঠন করে। তহবিলে ৭৭ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে। টাকা চলে যায় বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার জিল্লুর রহমানের কাছে।তিনি ওই টাকা ব্যাংকে রেখে নিজের এ্যাকাউন্ট লাভবান করছিলেন। কিন্তু পদোন্নতি না পাওয়া পুলিশ সদস্যরা পুরো তথ্য মিডিযায় ফাঁস করে দিলে তোলপাড় শুরু হয়।
এদিকে, পদোন্নতির জন্য ‘ঘুষের তহবিল’ সংগ্রহের অভিযোগে তদন্তে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) গঠিত তদন্ত কমিটি থেকে উপ-কমিশনার (সদর) শোয়েব আহমেদকে বাদ দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে ।একই সঙ্গে তিন সদস্যের কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে পাঁচ জন করা হয়েছে।
উপকমিশনার শোয়েব তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রধান ছিলেন।শুক্রবার তদন্ত কমিটি পুনর্গঠনের কথা জানান বিএমপি কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরী।তিনি বলেন, উপকমিশনার (ট্রাফিক) আবু সালেহ মো. রায়হানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান, অপু সরোয়ার, শাহানাজ পারভীন ও রুনা লায়লা।কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উপকমিশনার শোয়েব আহমেদকে তদন্ত কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে পুলিশ কমিশনার বলেন, ঘুষ তহবিলের বিষয়টি জানার পরেও তিনি (শোয়েব আহমেদ) নিশ্চুপ ছিলেন। তাই নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএমপি কমিশনার আরও জানান, গত ২৮ জুন অনুষ্ঠিত বিএমপি পুলিশের কল্যাণ সভায় উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফ জানান, ঘুষ তহবিলের বিষয়টি ২ মাস আগে উপকমিশনার (সদর) শোয়েব আহমেদকে জানিয়েছিলেন তিনি।উপ-কমিশনার (সদর) ছাড়াও শোয়েব আহমেদ গোয়েন্দা ও নগর বিশেষ শাখার প্রধান।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার দুটি চেকের মাধ্যমে জিল্লুর ৫০ লাখ টাকা ফেরত দেন বলে বরিশাল মহানগর পুলিশের কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরী জানিয়েছেন।তিনি বলেন, জিল্লুর রহমান উপ-কমিশনার (সদর) শোয়েব আহমেদের কাছে চেকের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন।পদোন্নতির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যে সব পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে তাদের টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উপ-কমিশনার (সদর) শোয়েব আহমেদ জানান, ব্রাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দুটি হিসাবে ২৫ লাখ টাকা করে ৫০ লাখ টাকার দুটি চেক জমা করেছেন জিল্লুর রহমান।এক বছর আগে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও পদোন্নতি হচ্ছিল না এমন ২৩০ পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে টাকা তুলে ৭৭ লাখ টাকার একটি ‘তহবিল’ গঠন করা হয়েছিল বরিশালে।
পুলিশের তদন্তে এর সত্যতা পাওয়ার পর প্রথমে বরিশাল মহানগর পুলিশের এএসআই, নায়েক, কনস্টেবল ও রেশন স্টোরকিপার পদে থাকা দশজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।পরদিন উপ-কমিশনার জিল্লুরকে বরখাস্ত করা হয়।শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অসদাচরণ, দুর্নীতি ও পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে পুলিশ সদরদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা একেএম কামরুল আহছান জানিয়েছেন।