• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

“বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশনা সিটি নির্বাচন ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে”


প্রকাশিত: ৫:২৮ পিএম, ২৮ মার্চ ১৫ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৬ বার

khaleda-takak-www.jatirkhantha.com.bd  এস রহমান.ঢাকা:

“বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশনা সিটি নির্বাচন ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে”। বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত হিসাবে জমাও দিবেন। বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে যাচ্ছে না এবং সহসাই আন্দোলন থেকে সড়ে আসার কোন ঘোষণা দিবে না। তারা একসঙ্গে নির্বাচন ও আন্দোলন করতে চাইছে।

এই জন্য আন্দোলনের কর্মসূচি হিসাবে অবরোধ বহাল থাকবে। বিএনপির নীতি নির্ধারকদের একজন জানান, হরতালের কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। গত কয়েক সপ্তাহ বিএনপি সপ্তাহের প্রথম তিনদিন টানা ও পরের দুই দিন ৪৮ ঘন্টা করে হরতাল কর্মসূচি দিয়ে আসছিল।

আপাতত সারাদেশে ২ এপ্রিল পর্যন্ত হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে চাইছে না। সেই হিসাবে এখনও হরতালের নতুন কর্মসূচি আসেনি। এই সময়ে মনোনয়ন পত্র দাখিল, যাচাই বাছাইয়ের বিষয়টি রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না হলে বিএনপি এই ইস্যুতে এখন আন্দোলন শুরু করবে। এই জন্য নতুন নতুন দাবি জানিয়ে সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু যাতে হয় সেই জন্য তারা সরকারের উপর চাপ তৈরি করতে কর্মসূচি দিবে। নির্বাচন কমিশনকেও চাপে রাখতে চাইছে।

পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসাবে বিভিন্ন সভা সমাবেশ করতে চাইছে দলটি। সেখানেও তারা জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরে বক্তৃতা করবে। এই ভাবেই তারা একদিকে সিটি নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের প্রচারণায় যেমন রাখতে চায় তেমনি তাদের প্রার্থীরা যাতে জয়ী হয় সেই চেষ্টা করবে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, গ্রহনযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কর্মসূচি দিলে তারা একদিকে দাবিও আদায় করতে পারবে, অন্য দিকে তারা মিডিয়াতেও নিজেদের সংবাদের আধিপত্য রাখতে পারবে। হরতাল লাগাতার ভাবে পালন করায় তেমনভাবে সারা মিলছে না বলে সরকার যে অভিযোগ তুলছে সেখান থেকেও বিএনপি বাইরে বের হয়ে আসতে পারবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি চেষ্টা করবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার। সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হয় সেই জন্য চেষ্টা বহাল থাকবে। আর সেটা করানোর জন্য আমরা সবই করবো। সরকার যদি সত্যিকার অর্থে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চায় তাহলে সরকার হয়তো সেই রকম পরিবেশ তৈরি করবে। যদিও এখনও পর্যন্ত এর কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকারের ভাব হচ্ছে বিএনপি নির্বাচনে আসলে যাতে জয়ী হতে না পারে। যে কোন ভাবেই হোক আমাদের প্রার্থীদেরকে তারা পরাজিত করে দিতে চাইবে। আর সেটা হলে আমরা মেনে নেব না। এই কারণে আমরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি আন্দোলনেও থাকছি। এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনও এমন কোন ভূমিকা নেয়নি যাতে মনে হয় যে তারা গ্রহণযোগ্য ও সষ্ঠু নির্বাচন করবে। তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হিসাবেই কাজ করছে।

তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত যা সিদ্ধান্ত আছে তা হলো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে নির্বাচনী কর্মসূচি ছাড়া আন্দোলনের ওই ধরনের কোন কর্মসূচি থাকবে না। হরতালও থাকবে না। যখন কর্মসূচি দেওয়া হবে তখন ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীকে হরতালের আওতামুক্ত রাখা হবে। তিনি বলেন, একদিকে নির্বাচন করবো অন্য দিকে হরতাল করবো সেটাতো হয় না। এই কারণে বিএনপির মনোভাব রয়েছে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা না করা। সেই হিসাবে নির্বাচনী আমেজে আমরা সেটা করতে চাইবো। তবে তা হলেও ঢাকায় কোন কর্মসূচি না থাকলেও নির্বাচনী প্রচারণা চালানোটাও একটা আন্দোলনের কৌশল হিসাবে দেখা হবে। সিটি নির্বাচনের পর পরই যাতে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা করে সেই দাবিও আমরা করবো। সেই হিসাবে আমাদের মূল আন্দোলন চলবে।

তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন করলেও অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়টি আসবে না। কারণ অবরোধে ঢাকায় ও চট্টগ্রামের মহানগরীতেতো কোন সমস্যা নেই। এই কারণে সেটা প্রত্যাহার করারও দরকার হবে না। অবরোধতো মহানগরীতে সব ধরনের যানবাহন চলে। অবরোধতো মহাসড়কগুলোতে। আসলে আমাদের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা এসেছে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে।

এদিকে বিএনপির এই ধরনের কর্মসূচি থেকে সরে আসা উচিত বলে মনে করেন শত নাগরিক কমিটির প্রধান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করার পর আমরা এটা বুঝতে পেরেছি তিনি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চান। এই জন্য প্রয়োজনে কর্মসূচিও শিথিল করবেন। তবে সেটা কেমন করে করবেন, কতটুকু করবেন সেটা এখনই বলেননি। বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করছেন আন্দোলন ও নির্বাচন এক সঙ্গে চলবে। এই ক্ষেত্রে আমার মত হচ্ছে নির্বাচনে অংশ নিলে কর্মসূচি স্থগিত করা প্রয়োজন। আন্দোলন আর নির্বাচন একসঙ্গে হলে সমস্যা হতে পারে। বিএনপি যদি এমন করে যে ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগরীকে হরতাল মুক্ত রাখে। অন্য সব জায়গায় হরতাল দেয় সেটা কি ঠিক হবে? আমার মনে হয় না। কারণ সেটা ঠিক হবে না। আবার এটাও যদি ঠিক করে যে অবরোধও বহাল থাকবে সেটাও সমস্যা হতে পারে। আমি মনে করি প্রয়োজন হলে অবরোধও স্থগিত করা যেতে পারে। হরতাল, অবরোধ সহ অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত রেখেই নির্বাচন করতে হবে। এরপর যদি দেখা যায় সরকার ও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করছে না ও পরিবেশও তৈরি করছে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করছে না তখন আবার কর্মসূচি দিয়ে নির্বাচন বর্জন করা যাবে।

একবার আন্দোলন স্থগিত হলে এখন বিএনপি আন্দোলনের যে পর্যায়ে রয়েছে সেটা স্থগিত করা হলে ও নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও আর সেই পর্যায়ে নিতে পারবে না এই আশঙ্কায় তারা সেটা না করে আন্দোলন ও নির্বাচন এক সঙ্গে করতে চাইছে এই ব্যাপারে আপনি কি বলবেন, তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করলেও তা একই জায়গায় আন্দোলন ধরে রাখতে পারবো। উপরন্তু আরো অভিযোগ করতে পারবে সরকার যে সিটি নির্বাচন করছে সেটাও প্রভাবমুক্ত নয়। সেই প্রতিবাদেও তারা নতুন নতুন কর্মসূচি দিতে পারবে। তিনি বলেন, এখনই এই ব্যাপারটি বলা যাচ্ছে না। এই জন্য আরো সময় লাগবে।

এদিকে তারেক রহমান দলের নেতা, কর্মীদের জানিয়েছেন, চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অংশ ও কৌশল হিসেবেই আসন্ন সিটি নির্বাচনে লড়াইয়ে থাকবে বিএনপি। ‘সারাদেশে বিএনপির কোটি কোটি নেতাকর্মী রয়েছে। গত কয়েক মাসে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মতামত নিয়েছি। তারা বলেছেন, শত জুলুম-নির্যাতন-কষ্ট সহ্য করে হলেও গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। তাদের মতামত, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই এই ভোট ডাকাত সরকার এবং দলীয় নির্বাচন কমিশনের মুখোশ উšে§াচন করতেই নির্বাচনে যাওয়া প্রয়োজন।

আরো দাবি করেন, তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় অনেক কর্মী বলেছেন- আওয়ামী লীগ ছলে-বলে-কৌশলে যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাদের সেই অপকৌশল সফল হতে দেয়া যাবে না। কৌশলী হয়েই আমাদেরকে এগুতে হবে। আন্দোলনকে পৌঁছাতে হবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। দূরে থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন কথা দিচ্ছি, শিগগীরই নেতাকর্মীদের সামনে হাজির হবো। তখন দেশের জনগণের সঙ্গে, দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে দেখা হবে, মুখোমুখি কথা হবে ইনশাআল্লাহ।

ওই ভিডিওতে তার আরো দাবি, তফসিল ঘোষিত এলাকায় আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনী কাজ চলবে, সেই সাথে সারা বাংলাদেশে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সকল অপকৌশল প্রতিহত করতে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি। তার দাবি, আমাদের দলের তৃনমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, আন্দোলনের গতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন দিয়ে তারা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। অংশগ্রহণ করে আমরা প্রমাণ করতে চাই, তাদের অধীনে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।