• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের শিলং ট্রাজেডি-কার পাপে?


প্রকাশিত: ২:৩৩ এএম, ১৪ মে ১৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৩ বার

ডেস্ক রিপোর্টার.ঢাকা:  অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মেঘালয় রাজ্য পুলিশ সোমবার সকালে শিলং শহরের গালফ লিংক এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। salauddin shilong-www.jatirkhantha.com.bdওই সময় সালাহ উদ্দিনের কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় পুলিশ তাঁকে একটি মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে গতকাল সকালে তাঁকে অন্য একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাঁর হার্টের চিকিৎসা হচ্ছে। তবে সালাহ উদ্দিন কীভাবে শিলং গেলেন, সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারেনি।

দুই মাস ধরে নিখোঁজ থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদের খোঁজ মিলেছে। তিনি এখন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি নিজে ফোন করে তাঁর অবস্থানের কথা স্ত্রী হাসিনা আহমদকে জানিয়েছেন। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে হাসিনা আহমদ সে কথা সাংবাদিকদের জানান।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে সালাহ উদ্দিনকে সেখানকার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
সে কারণে সেখানে আইনগত প্রক্রিয়া আছে। সে প্রক্রিয়া শেষ হলে দুই দেশের মধ্যে যে বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে, তার আওতায় খুব সহজেই সরকার তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমদ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানের বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ওপাশ থেকে একজন নারী ইংরেজিতে বলেন, তিনি মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস (মিমহ্যানস) হাসপাতাল থেকে বলছেন। জানতে চান, আমি সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী কি না।

sssssss“হ্যাঁ” জবাব দিলে ওপাশ থেকে বলা হয়, সালাহ উদ্দিন আহমদ তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি কথা বলতে চান। এখনই কল করতে পারবেন কি না।’ সঙ্গে সঙ্গেই হাসিনা ওই নম্বরে ফোন দেন।এরপর সালাহ উদ্দিন আহমদের কণ্ঠ শুনে আবেগাপ্লুতও হয়ে পড়েন হাসিনা। সালাহ উদ্দিন তাঁকে বলেন, তিনি বেঁচে আছেন এবং মোটামুটি ভালো আছেন।

তাঁর বেঁচে থাকার তথ্য তিনি দ্রুত বিএনপির নেতা-কর্মী, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও বিএনপির প্রেস উইংকে জানাতে বলেন।হাসিনা বলেন, আজই (মঙ্গলবার) মেঘালয়ে গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসতে বলেন সালাহ উদ্দিন। ভিসা-সংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাহায্য নিতে বলেন। হাসিনা বলেন, ‘আমাকে বলল যাওয়ার সময় কিছু গরম কাপড় নিয়ে যেতে। সেখানে নাকি খুব ঠান্ডা।’

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেই বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর গুলশানের বাসায় যান হাসিনা। খালেদা জিয়ার বাসায় প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করে আবারও নিজের বাসায় আসেন হাসিনা। আড়াইটার দিকে নিজের বাসার নিচতলার লাউঞ্জে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় তাঁর দুই পাশে ছিলেন বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ ও চিকিৎসক ফরহাদ শুভ।

সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজের পর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান তাঁর স্ত্রী। তিনি কোনো প্রশ্ন আশা করছেন না বলে শুরুতেই জানান। এরপর তিনি ফোন পাওয়ার ঘটনাটি বর্ণনা করেন।সাংবাদিকেরা শুধু জানতে চান, ওপার থেকে যিনি কথা বলেছেন, তিনি যে সালাহ উদ্দিন আহমদ, এটা কীভাবে নিশ্চিত হলেন। জবাবে হাসিনা বলেন, ‘১০০ বছর পরেও তাঁর সঙ্গে কথা হলে আমি কণ্ঠ শুনেই চিনব।’

সালাহ উদ্দিন আহমদ কবে ওই হাসপাতালে বা ভারতে গেলেন, কীভাবে গেলেন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, ‘আমার সঙ্গে তাঁর সাড়ে তিন থেকে চার মিনিট কথা হয়েছে। এর মধ্যে এত সব জানতে পারিনি। আমি আমার স্বামীকে ফিরে পেতে যাচ্ছি, এর চেয়ে বড় কিছু আর আমার জানার ছিল না।’

সালাহ উদ্দিনকে ফেরত আনতে হাসিনাসহ কয়েকজন মেঘালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁরা কাগজপত্র প্রস্তুত করে ভারতীয় দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করেছেন বলেও সাংবাদিকদের জানান।

শিলং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক শিলং টাইমস-এর সম্পাদক মানস চৌধুরী বলেন, সোমবার সকালে শহরের গলফ লিংক এলাকা থেকে ৫৪ বছর বয়সী এক বাংলাদেশিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ওই ব্যক্তি পুলিশকে বলেন, তাঁর নাম সালাহ উদ্দিন আহমদ; তিনি বাংলাদেশি। কিন্তু ভ্রমণের কাগজপত্র দেখাতে না পারায় পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, তাঁকে খুবই বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। কথাবার্তাও স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছিল না। এ কারণে পুলিশ তাঁকে শিলংয়ের ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে নেয়।গতকাল সকালে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন, তিনি মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। এরপর বুকে ব্যথার জন্য হৃদ্রোগ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি জানান, সালাহ উদ্দিনকে আটক করার খবরটি গতকাল মঙ্গলবার শিলং টাইমস-এ প্রকাশিত হয়।

গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩-বি নম্বর সড়কের একটি বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে ঢুকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা সালাহ উদ্দিন আহমদকে ধরে নিয়ে যায়। হাসিনা আহমদ তখন অভিযোগ করেন, স্বামীর খোঁজ চেয়ে পরদিন রাতে তিনি গুলশান থানা ও উত্তরা থানায় জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি।

সরকারের ‘নির্দেশে’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে গেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। বিএনপির পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ করা হয়।তবে সরকার বরাবরই এসব অভিযোগ নাকচ করে আসছে। উল্টো সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় বিএনপিরই হাত আছে বলে ইঙ্গিত দেন সরকারের মন্ত্রীরা।

স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতেও যান সাবেক সাংসদ হাসিনা আহমদ। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়, নাশকতার মামলা থাকায় বিএনপির এই নেতাকে তারাও খুঁজছে। কিন্তু সন্ধান পায়নি।সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে পাওয়া গেল কি না, সে বিষয়ে নিয়মিত অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট গত ১২ এপ্রিল একটি আবেদন নিষ্পত্তি করে দেয়।
এর মধ্যে ১৯ মার্চ ও ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দুই দফা স্মারকলিপি দিয়ে আসেন হাসিনা আহমদ। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সাংসদ হন এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।