বিএনপির সংগ্রাম কার বিরুদ্ধে-দেশের বিরুদ্ধে না নাগরিকদের বিরুদ্ধে?
আসমা খন্দকার.ঢাকা:
ভুল পরিস্থিতি বোঝার মতো আমাদের বোধ হয় সাধারণ জ্ঞান আছে। বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি চলছে তাতে বলার অপেক্ষা রাখে না যে এটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিএনপির চলমান কর্মসূচি দেশের সবাই বন্ধ করতে চাইছে এমনকি বিএনপির মধ্যেও অনেকে দেশের এ পরিস্থিতি না চালানোর পক্ষে রয়েছে। তারা কার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে? দেশের বিরুদ্ধে না নাগরিকদের বিরুদ্ধে? কেন তারা দেশ বিরোধী কর্মসূচি দিয়ে তাদের জনপ্রিয়তা কমিয়ে দিচ্ছে? তাদের মেধা কি এতই বোধহীন হয়ে পড়েছে যে কোন সঠিক আর কোনটি বুল সেটি বোঝার মতো সামর্থ নেই।
সৃষ্টিকর্তা কত সুন্দর করে পৃথিবী তৈরি করেছেন। সুন্দর এই পৃথিবীর একটি জাতির রাস্তায় পিকেটাররা অগ্নিসংযোগ করছে। সেই সাথে পেট্রলবোমা দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়ে মারছে। এটাই কি সর্বশেষ সমাধান?
সুন্দর জীবন ধারণ করে বেঁচে থাকার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকরা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। এমনটা হওয়া কি ঠিক? আমি মনে করি এটি সঠিক সিদ্ধান্ত কারণ এদেশে কোন শান্তি ও ন্যায়বিচার নেই। অশুভ শক্তি জীবনকে তাড়া দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। জীবন পরিচালনা করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হচ্ছে এখানে।
আমার মনে হয় এর চেয়ে বেশি কিছু পাওয়া এ দেশে সম্ভব নয়। কারণ প্রতিদিন খবরে দেখি পেট্রল বোমা মারা হচ্ছে। মিনিটের মধ্যে সঙ্গে সঙ্গে জীবন্ত ও তাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে নিরীহ মানুষের। যখন শুনি বৃদ্ধা নারী বরিশাল থেকে চিকিৎসার জন্য এসে বোমা হামলার শিকার হয়ে পুরো শরীর পুড়ে গেছে তখন আমাদের কি করার আছে? এটার কোন জবাব নেই। এটি শুনার পরেও আমরা আমাদের চায়ের কাপে চুমুক দিতে থাকি এবং নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরি আমরা।
একদিকে দেশের শ্রমজীবীরা ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করছে অন্যদিকে অগ্নিসংযোগকারীরা দেশকে পিছে নিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে নিয়ে তারা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে।
অনেকে মনে করছে হরতাল ও অবরোধে যেভাবে নিরীহ মানুষ মরছে এ জন্য বহুল জনসংখ্যার দেশ থেকে হ্রাস পাবে। আমরা এসব কি ভাবছি? একটু ভেবে দেখুন আপনার পরিবারে আপনি যদি না থাকেন তাহলে কি অবস্থা হবে পরিবারের অন্য সদস্যদের। আপনাকে হারানোর যন্ত্রণা তাদের কাছে কেমন হবে?
রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল ও অবরোধের কারণে দেশে যে এ অগ্নিসংযোগ ও পেট্রল বোমা হামলার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে আইনি ব্যবস্থাসহ শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য আমাদের শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। শিশুদের পাশাপাশি পুরো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিনষ্ট হচ্ছে বছরের শুরু থেকে। এসএসসি ও অন্য পরীক্ষার্থীরা সময় মতো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না। নির্ধারিত সময়ের পরীক্ষায়ও সময়মত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
নতুন বছরের শুরুতে সারা দেশের শিশুদের মধ্যে আনন্দ ও হাসি দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। কিন্তু বর্তমানে দেশে যে দৃশ্য আমরা দেখছি তা ব্যথিত করে। এ সকল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে শুধু রাজনৈতিক কারণেই হচ্ছে। অবরোধ, হরতাল ও পেট্রল বোমা হামলা চালিয়ে তাদের ভবিষ্যত ধ্বংস করে দিচ্ছে। দিন মজুর যারা জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে তাদের জীবনও থমকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখার জন্য অতন্ত্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। সেই গার্মেন্টস শ্রমিকরা কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য দুটি পন্থা অবলম্বন করতে হয়। তাদের নিজেদের উদ্যোগে গণপরিবহনে করে কর্মস্থলে যেতে হয় অথবা পায়ে হেঁটে যেতে হয় অবরোধের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে।
অবরোধ পালনকারী ও অগ্নিসংযোগকারীদের দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। ক্রসফায়ারের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে পথে ঘাটে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। যারা ক্রসফায়ারে প্রাণ হারাচ্ছে তাদের পরিবারের সন্তানদের কি অবস্থা হবে? যে বড় ভাইয়ের স্নেহের আদর পেয়ে তাদের এখন কি অবস্থা হবে?
বর্তমান সরকার রাজনৈতিক সহিংসতা পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার কি প্রতিনিয়ত দেশের সব অঞ্চলের মানুষের সমস্যার সমাধান করে সাহায্য করতে পারবে। যদিও সরকারের কিছু সাহায্যের খবর আমরা সবাই জানি।
অসংখ্য মানুষকে হত্যা করার এ অনৈতিক কর্মকাণ্ড পার্টির পক্ষ থেকে বন্ধ করার উদ্যেগ গ্রহণ করতে হবে। দেশে এ হত্যা অগ্নিসংযোগ ও বোমার রাজনীতির পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে তারা জনসমর্থন হারিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।
আজকাল সহনশীলতা দেশের একটি বড় উপহার। বাংলাদেশে সহনশীলতার অতিরিক্ত মাত্রা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ৬০ জন মানুষ মরছে তার পরেও স্টার জলসায় মেগা ধারাবাহিক নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে অনেকে কিন্তু কেন? শাহাবাগের গণজাগরণ মঞ্চ জাতির সেবায় নিয়োজিত রয়েছে? তাদের কারণে ব্লগার অভিজিৎ রায় এখনো জীবিত রয়েছে নিরাপদ রয়েছে তার পরিবারে?
দেশের ভবিষ্যত বিনির্মাণের জন্য আমাদের মনে ও চিন্তায় পরিবর্তন আনতে হবে । আজকাল আমার মতো অনেকে চায়ের দোকানে, অফিসে, রেস্টুরেন্টে সংলাপের কথা বলছে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এতই নাজুক হয়েছে এখন মনে হচ্ছে শুধু সংলাপই সংকট উত্তরণের জন্য যথেষ্ট নয়। সংলাপ বা আলোচনা আমাদের পেট্রল বোমা থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে না। তাৎক্ষণিকভাবে সংঘবদ্ধ চক্রকে সহিংসতায় প্রতিরোধ করা আদৌ সম্ভব হবে না।
প্রকৃতপক্ষে দেশের মানুষ ও অর্থনীতির সুরক্ষা করতে হবে। এ দেশে ধর্মের নামে বিদেশি রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ আর চাই না। আমাদের দেশীয় রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ হতাশাজনক। চলমান সংকট সমাধানে দেশের মানুষকে নিয়ে সংকট উত্তরণের পথ বের করতে হবে। নিজেদের কাজে অন্যদের নাক গলানো আদৌ সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে এড়িয়ে চলার জন্য বিদেশিদের উপর নির্ভরতা কমানো উচিত। সমস্যটি যেহেতু দেশের তাই সমাধান তৈরি করতে হবে দেশের মানুষের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
বর্তমান সংকট যেহেতু রাজনৈতিক তাই এটির সামধান করার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। সাধারণ মানুষেরও দায়িত্ব পালন করতে সহায়তা করতে হবে। সুতরাং রাজনীতিবিদদের উচিত দেশের সর্বস্তরের মানুষের মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে রাজনীতির এ যুদ্ধের অবসান করা। তাহলেই দেশের মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে।