বিএনপি’র উস্কানিকে তৃতীয়শক্তি মাতবেনা!
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী : বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি তৃতীয় ধারা সৃষ্টির চেষ্টা আজকের নয়, দুই নেত্রীর মধ্যে কোনোভাবেই সমঝোতা সম্ভব নয় ভেবে যারা মনে করেন একটি তৃতীয় বা বিকল্পধারা তৈরি করলে ও তাকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে দেশকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকট থেকে মুক্ত করা এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা অব্যাহত রাখা সম্ভব, তারা রাজনৈতিক সদুদ্দেশ্য নিয়েই এই চেষ্টা করেছেন। পারেননি। যারা রাজনৈতিক অসদুদ্দেশ্য নিয়ে করেছেন, যেমন এক-এগারো সরকার তারাও পারেননি।
তার মূল কারণ, স্বাধীনতার পর দেশের রাজনীতি দুটি স্পষ্ট ধারায় বিভক্ত হয়েছে। একটি স্বাধীনতার পক্ষের ধারা, তাতে সাম্প্রদায়িক, অসাম্প্রদায়িক, সৎ, অসৎ নানা ধরনের লোক আছেন। আরেকটি স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি ছিল এমন একটি ধারা। তাতে অতীতের মুসলিম লীগপন্থি এবং সাম্প্রদায়িক লোকের সংখ্যাই বেশি। একাত্তর সালের স্বাধীনতার যুদ্ধটাও রয়ে গেছে অসমাপ্ত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পক্ষের শিবির সামরিকভাবে জয়ী হয়; কিন্তু রাজনৈতিক জয় অর্জন করতে পারেনি। ১৯৭৫ সালে প্রতিবিপ্লবী শক্তির কাছে তারা পরাজিত হয় এবং রাষ্ট্রক্ষমতা তাদের হাতছাড়া হয়।
এ সময় দেশের বাম রাজনীতি অনৈক্যে জর্জরিত। দল-উপদল এবং নানা সন্ত্রাসী উপদলে বিভক্ত। দেশের সামরিক বাহিনী এ সময় সাম্প্রতিক অতীতের তুরস্ক অথবা মিসরের মতো ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারত, তখন তারা যত ছোট এবং তাদের শক্তি যত সীমিত হোক, তাদের শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই যদি দেশের স্বাধীনতার আদর্শে দৃঢ় বিশ্বাসী হতেন এবং তা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতেন, তাহলে তুরস্কের সেনাবাহিনী বহুবার কামাল আতাতুর্কের সেক্যুলারিজম রক্ষার জন্য কিংবা মিসরে নাসেরের অধীনে অসাম্প্রদায়িক আরব জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সেই সেনাবাহিনী সেই ভূমিকা গ্রহণ করতে পারত।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী একটি লিবারেশন আর্মি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় নেতাদের হত্যাকাণ্ডের সময় তাদের ঊর্ধ্বতন অফিসারদের একটা অংশ চলে গেলেন জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে কলোনিয়াল আর্মির ভূমিকায়। যদিও জিয়া বাধ্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন; কিন্তু তার আনুগত্য ছিল দ্বিখণ্ডিত। একদিকে বাংলাদেশের এবং অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য, দুটির মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যই তার ছিল প্রখর। তিনি পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার জুনিয়র অফিসার ছিলেন এবং পাকিস্তানের সামরিক ডিক্টেটর জেনারেল আইয়ুব খান ছিলেন তার ‘আইকন’। পরবর্তীকালে তিনি আইয়ুবের কায়দায় ক্ষমতা দখল করেন এবং আইয়ুবের অনুকরণে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। আইয়ুবের মৌলিক গণতন্ত্রের অনুকরণে তিনি গ্রাম সরকার তৈরি করতে চেয়েছিলেন।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি যখন বিভক্ত, অনৈক্যে জর্জরিত এবং বিপর্যস্ত, একজন দেশপ্রেমিক জেনারেলের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ সেনাবাহিনী তখন ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারলে দেশে ‘৭৫ সালের পর এমন ভয়াবহ অবস্থার উদ্ভব হতো না। সেনাবাহিনী এ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেনি দুই কারণে। এক. কর্নেল (অব.) তাহেরের গণবাহিনী গড়ায় এবং অবিভক্ত জাসদের তথাকথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে infentile adventure (শিশুসুলভ বিপ্লব); দুই. সেনাবাহিনী থেকে বহিস্কৃত কর্নেল ফারুক, বজলুর রশিদ, মেজর ডালিম প্রমুখ পেছনে থেকে উস্কানি দিয়ে সেনাবাহিনীতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করা। এর পেছনে প্রধান মদদদাতা ছিল পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা চক্র। প্রধান সাহায্যদাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান।
জিয়াউর রহমানের পর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টে আবাস তৈরির পর তার স্বামীর ক্যান্টনমেন্টে তৈরি দলকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির মুখোশ পরিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেন। বিএনপি কখনও আওয়ামী লীগের বিকল্প বা প্রতিপক্ষ দল হিসেবে গড়ে ওঠেনি। গড়ে উঠেছে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, দেশের স্বাধীনতার আদর্শেরও বিরোধী দল হিসেবে; তাই স্বাধীনতার শত্রু জামায়াত ও শাখা দলগুলোকে বিএনপি গ্রহণ করেছে মিত্র হিসেবে। মিত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে বাংলাদেশে ৩০ লাখ নর-নারী হত্যাকারী পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে। স্বাভাবিকভাবেই ‘৭১ সালের মতো ভারত বর্তমানেও এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের শিবিরের পেছনে। ‘৭১-এর অসমাপ্ত যুদ্ধ এখনও অব্যাহত রয়েছে।
তবে একটাই স্বস্তির ব্যাপার। বাংলাদেশের তরুণ অফিসার ও জওয়ানরা ‘৭১ সালের মতো তাদের কর্তব্য বুঝে নিতে এবারও ভুল করেনি। দেশে যে গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে, তার পক্ষে তাদের অধিকাংশই অবস্থান নিয়েছে। পাকিস্তানি প্রজন্মের সিনিয়র অফিসারদের পাকিস্তানের প্রতি কলোনিয়াল আনুগত্য থেকে তারা মুক্ত। তরুণ প্রজন্মের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্মার্ট, পেট্রিয়ট এবং দক্ষ সেনাবাহিনী হিসেবে এখন গড়ে উঠেছে। জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠাতেও সুনাম অর্জন করেছে।
অনেকে, বিশেষ করে বিএনপি এক-এগারোর সেনা সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত সরকারের ঢালাও নিন্দা করে। আমি করি না। আমি তখনই লিখেছি, এটা ছিল অ্যাক্ট অব গড। ক্ষমতা থেকে বিএনপি-জামায়াতের হাতের পুতুল এক অথর্ব ও অকর্মণ্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কেড়ে না নিলে এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের আড্ডা হাওয়া ভবন ভেঙে দিয়ে তারেক রহমানের ‘ডিক্টেটেড ইলেকশন’ হতে দিলে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভদ হতো।
পরে মইনুল-ফখরুলের মনে স্থায়ীভাবে ক্ষমতা দখলের বাসনা জাগে, এটা তাদের পদস্খলন। ‘মাইনাস টু থিয়োরি’র উদ্ভাবকও তারা নন। এটা তথাকথিত সুশীল সমাজ এবং তাদের শীর্ষ নেতা ড. ইউনূস, ড. কামাল হোসেন, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রমুখ, কতিপয় এনজিও এবং তাদের মুখপাত্র দুটি ইংরেজি, বাংলা দৈনিকের বকেয়া বাম সম্পাদকের বহুদিনের জোট থিয়োরি, ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে এই থিয়োরির মূল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। নিজেরা আন্দোলনের দ্বারা অথবা চক্রান্তের দ্বারা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরাতে না পেরে এক-এগারোর রেজিমের দ্বারা তারা এই উদ্দেশ্য সফল করতে চেয়েছিলেন।
এ জন্যই এক-এগারোর সরকার পরে নিজেরাও দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য জনপ্রিয়তা হারানোর পরও এই ‘সুশীল-নিরপেক্ষ’ অক্ষশক্তি এক-এগারোকে সমর্থন জুগিয়ে চলেছে। এক-এগারোর এই চক্রান্ত সফল হলে তারা এমন একটি অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করতেন, যার সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী হতেন ড. ইউনূস অথবা ড কামাল হোসেন। জেনারেল মইন হয়তো হতেন নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি। এই সরকার বেশিদিন টিকত না। এর চেহারা দাঁড়াত আফগানিস্তানের মার্কিন তাঁবেদার কারজাই সরকারের মতো। যে ‘গুড গভর্ন্যান্সে’র স্লোগান তুলে তারা ক্ষমতায় বসতেন, তার কিছুই তারা প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন না। দেশ আরও বেশি সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে ভরে যেত।
ড. কামাল হোসেন, যিনি এত শীর্ষ বুদ্ধিজীবীর সমর্থন নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে সেটি পর্যন্ত চালাতে পারেন না, তিনি হবেন দক্ষ রাষ্ট্রপতি? আর ড. ইউনূসের উড়ন্ত বিমানে অথবা বিমানবন্দরে দুরন্ত রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়ে তারপর ধূমকেতুর মতো আকাশে মিলিয়ে যাওয়া থেকে কি বোঝা যায় না, ‘গরিবের ব্যাংকার’ নাম নিয়ে বিদেশের রাজরাজড়ার সঙ্গে রোজ খানাপিনা করা আর মাঠের রাজনীতি করা এক কথা নয়। এখন তিনি স্বরূপে ফিরে এসেছেন। এখন তিনি একজন ‘সামাজিক ব্যবসায়ী’। গরিবদের কাঁধ থেকে তাকে নামানো হয়েছে, এটাই বাঁচোয়া।
আরেকটি সাধারণ নির্বাচন সামনে নিয়ে ডা. বদরুদ্দোজা হঠাৎ আবার দেশের রাজনীতিতে একটি ‘তৃতীয় শক্তির’ আবির্ভাবের কথা বলেছেন। বলেই নিজেদের পেটের কথা বের করে ফেলেছেন বুঝতে পেরে এখন নানা সাফাই গাইতে শুরু করেছেন। রাজনীতিতে যারা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত তারা দেশে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব চাইবেন, তাতে বিস্ময়ের কী আছে? আগে এই তৃতীয় শক্তি আমরা দেখেছি। বর্তমানে এই তৃতীয় শক্তিটি কে বা কারা?
আগেই বলেছি, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের সেনাবাহিনী এখন অনেক স্মার্ট, পেট্রিয়ট এবং রাজনীতি-সচেতন। হাসিনা সরকার তাদের জন্য একটি স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীর উপযোগী যেসব সুখ-সুবিধা ও অধিকারের ব্যবস্থা করেছেন, তা তারা ক্ষমতায় গিয়েও পাবেন না। মাঝখান থেকে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো মিরাকল দেখাতে না পারলে নিন্দিত হবেন। এ যুগে বহির্বিশ্বও কোনো সামরিক শাসনকে স্বীকৃত দেবে না। এই অবস্থায় বাংলাদেশের তরুণ ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, যাদের উদ্ভব কলোনিয়াল সেনাবাহিনী থেকে নয়, একটি লিবারেশন আর্মি থেকে তারা ব্যর্থ ও হতাশ রাজনীতিক ও বাম থেকে পচনশীল ডানে আসা দুই নব্য ধনী সম্পাদকের উস্কানিতে দেশে তৃতীয় শক্তি হওয়ার অলীক মরীচিকার পেছনে ঘুরবেন, আমার তা মনে হয় না।
তাহলে কি জামায়াতের কোমর ভাঙা অবস্থায় হেফাজতের সমর্থনে একটি উগ্র মৌলবাদী জোটের তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভাব কেউ কেউ প্রত্যাশা অথবা আশা করছেন? যে জন্য শাপলা চত্বরে হেফাজতি অভ্যুত্থানের সময় এরশাদ সাহেব ও খালেদা জিয়া তাকে সমর্থন দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন? এমনকি এই অভ্যুত্থানের সাফল্যের ওপর নির্ভর করে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাবেক নেত্রী খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের সব নেতা ও শেখ হাসিনাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন? তার পরিণতি কী হয়েছিল, তা তারা জানেন। তারপরও কি এই সুশীল সমাজ ও ‘নিরপেক্ষ’ পত্রিকা দুটি অতীত ও বর্তমানের ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষাই নেবে না?
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির দ্বিতীয় ধারাই তৈরি হয়নি, তাতে তৃতীয় ধারা জন্ম নেবে কোথা থেকে? স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ এককভাবে ক্ষমতায় বসার পর একটি গণতান্ত্রিক দ্বিতীয় ধারা তৈরির সুযোগ দেখা দিয়েছিল বামেদের দ্বারা। সিপিবি ও ন্যাপ (মোজাফ্ফর) সে সুযোগ নিলেন না। তারা গণঐক্যজোটের থিয়োরির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গেলেন। চীনপন্থি বামদের একটা বড় অংশ এবং ভাসানীপন্থিদের একটা বড় দল ‘৭১-এর পরাজিত শত্রুর সঙ্গে হাত মেলাল।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ভেঙে হিটলারের ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট পার্টির নামটি গ্রহণ করে বাংলাদেশে জাতীয় সমাজতন্ত্রী দল নামে যে দলটি গঠিত হলো, তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে সদ্য প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি ধ্বংস করারই উন্মাদ পরিকল্পনায় মেতে উঠেছিল। তাহলে বাংলাদেশে বিলাতের টোরি ও লেবারের মতো গণতন্ত্রের এই দুই ধারার রাজনীতিতে দ্বিতীয় ধারাটি তৈরি করবেন কারা? কেউ করেননি।
গণতান্ত্রিক বা সংসদীয় রাজনীতিতে এই যে বিরাট শূন্যতা, এর স্থান সহজেই দখল করেছে সেনাবাহিনীতে পাকিস্তানপ্রেমী একদল বিভ্রান্ত সেনাকর্তা, একদল বিতাড়িত কর্নেল ও মেজর এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তি। পাকিস্তানের মিলিটারি অ্যান্ড মস্কের অ্যালায়েন্সের মতো এই অ্যালায়েন্স গড়ে উঠেছে এবং পঁচাত্তরের নির্মম ট্র্যাজেডি ঘটিয়েছে। এই ট্র্যাজেডিকে মূলধন করেই সেনাপতি জিয়াউর রহমান তার বিএনপি তৈরি করেন। একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নয়, সেনাশাসনের সিভিলমেস হিসেবে। তাতে রাজনৈতিক মুখোশ হিসেবে ডা. বদরুদ্দোজা এবং শাহ আজিজুর রহমান দুই ‘দেশপ্রেমিকেরই’ স্থান হয়েছে। বিএনপি সহজেই মৌলবাদী এবং স্বাধীনতার শত্রু মৌলবাদী জামায়াতকেও কোলে টেনে নিয়েছে।
ফলে এ যাবৎ বাংলাদেশে যে লড়াই চলেছে, তা ব্রিটেনের টোরি পার্টি ও লেবার পার্টি বা আমেরিকার ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই গণতান্ত্রিক ধারার মতো দুই পার্টির মধ্যে নয়; বাংলাদেশে লড়াই চলেছে স্বাধীনতার সপক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যে। বিপক্ষ শক্তির হাতে বড় অস্ত্র ছিল বন্দুকের দ্বারা দখল করা ক্ষমতা, চক্রান্ত ও সন্ত্রাস। এখানে গণতন্ত্রের দুই ধারার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবকাশ কোথায়? প্রথম গণতান্ত্রিক ধারা যদি আওয়ামী লীগ হয়, তাহলে দ্বিতীয় ধারাটি কে? বিএনপি-জামায়াত? তাহলে বর্তমান জার্মানিতে নাৎসি দলকে গণতান্ত্রিক ধারার একটি দল হিসেবে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না কেন?
বাংলাদেশে সত্য সত্যই একটি গণতান্ত্রিক তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব প্রয়োজন হতো, যদি ইতিমধ্যেই একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক দ্বিতীয় ধারা থাকত। যদি ড. কামালরা তথাকথিত তৃতীয় শক্তির আশায় বসে না থেকে, নিজেরা রাজনৈতিক এতিম না সেজে এবং ছোট এতিমদের দলে না টেনে দেশে বাম গণতান্ত্রিক একটি শক্তিশালী দ্বিতীয় পক্ষ বা বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে পারতেন এবং সেই আসন থেকে ‘৭১-এর পরাজিত শক্তি ও হিংস্র মৌলবাদী পক্ষকে তাড়াতে পারতেন। বর্তমানেও তারা তা না করে নানা ফ্রন্ট গঠনের ধুয়া তুলে স্বাধীনতার শত্রু এবং গণবিরোধী শিবিরকেই কার্যত সাহায্য জোগাচ্ছেন এবং দেশে অদৃশ্য তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবের রব তুলে রাজনীতির ঘোলা পানি আরও ঘোলা করে তুলছেন।পরম করুণাময় স্রষ্টা এদের সুমতি দিন।লন্ডন, ১ জুন শুত্রুবার, ২০১৮