• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপিতে তারেক বিদ্রোহ-তোলপাড়!


প্রকাশিত: ৫:০১ পিএম, ২৩ জুলাই ১৮ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২১ বার

স্টাফ রিপোর্টার : অরাজনৈতিক কার্যকলাপে বিএনপিতে তারেক জিয়া বিদ্রোহ ক্রমশ বাড়ছে। বিষয়টি কেউ আগে প্রকাশ না করলেও এখন তা ‘বিদ্রোহ’ এর মওতা অবস্থা নিয়েছে। বলা হচ্ছে এতে কোনঠাসা হচ্ছে ত্যাগী নেতারা। বিএনপির একাধিক নেতা সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশে বলেন, দল পুনর্গঠনের নামে ত্যাগীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। এই কাজটা করছেন ভাইয়া গ্রুপ নামের একটি নতুন গ্রুপ। এরা বিএনপিকে শেষ করবে, তারেক রহমানকে শেষ করবে।

এদের হাত থেকে দল ও তারেক রহমানকে বাঁচান। বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে নতুন এই ভাইয়া গ্রুপ যা ইচ্ছে তা-ই করছে। এর আগেও একইভাবে তারেক রহমানকে নিয়ে একটি ভাইয়া গ্রুপ মাঠে নেমেছিল। তারাও একই কাজ করেছে। আবার নতুন একটি গ্রুপ মাঠে নেমেছে। কমিটি গঠন নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করা প্রসঙ্গ টেনে একাধিক নেতা উল্লিখিত বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে শান্ত হয়।

এ সময় নেতারা বলেন, দেশের মানুষ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। তাই দলকে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে এখন কাজ করতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের জন্য রাজপথে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। যারা খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা করছেন, তাদের মাথা থেকে এই চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে আহ্বান জানান।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই বৈঠক হয়। যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী,

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আসাদুল হাবিব দুলু, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মাহবুবে রহমান শামীম, শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ অংশ নেন।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির সম্পাদকম-লীর নেতারা। দলকে সুসংগঠিত করে পরিকল্পনামতো এই আন্দোলনে যাওয়ার জন্য সিনিয়র নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, আন্দোলন, জাতীয় নির্বাচন, সাংগঠনিক অবস্থা, আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নিজেদের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বৈঠকের শুরুতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সিনিয়র নেতারা তাদের কথা শুনতে চান। তাদের বক্তব্য ও পরামর্শ দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

বৈঠকে সম্পাদক পর্যায়ের নেতারা একমত পোষণ করে বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না। তবে এ বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের আরও পরিষ্কার করে বলার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশগ্রহণ করতে না পারলে বিএনপিও সেই নির্বাচনে যাবে না। এ ক্ষেত্রে কোনো নির্বাচন হবে না বলেও জোরালোভাবে পরিষ্কার করার জন্য বলেছেন নেতারা।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের দাবি তুলেছেন নেতারা। এই আন্দোলন ঢাকা মহানগর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইউনিয়ন পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার কৌশল নিতে বলা হয়েছে- যা একপর্যায়ে গণআন্দোলনে রূপ দিতে হবে। তারা বলেছেন, কঠোর আন্দোলনের বিকল্প কিছু নেই। সঠিক সময়ে যেন সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয় তার জন্যও কয়েকজন নেতা দাবি তোলেন।

বৈঠকে কয়েকজন নেতা জানান, শুধু রাজপথের আন্দোলন দিয়ে কখনো সরকার পতন হয় না। এর জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন, দেশের বিভিন্ন সামাজিক পেশাজীবীদের সমর্থন দরকার হয়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের ব্যর্থতার বিষয়েও তারা সমালোচনা করেন।

আগামী আন্দোলন ও নির্বাচনকে টার্গেট করে দলকে পুনর্গঠনের বিষয়ে অনেক নেতা সমালোচনা করে বলেছেন, বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠনের সময় জেলার দায়িত্বে থাকা নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা কিংবা পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে নতুন কমিটির নেতাদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এটা আগামী আন্দোলনে প্রভাব ফেলবে।

আগামীতে যেসব জেলায় অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন করা হবে, সেসব এলাকার নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে যেন কমিটি দেওয়া হয়, তার জন্য দাবি করেছেন অনেক নেতা।কয়েকজন নেতা দলের সিনিয়র নেতাদের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা জাতীয় ঐক্য নিয়ে কথা বলছেন; কিন্তু সেই ঐক্য কতদূর হয়েছে তা খোলাসা করতে হবে। কারণ নির্বাচনের বেশি সময় নেই। তাদের বিষয়ে এখনই নেতাকর্মীদের জানাতে হবে।