• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

বিএনপিতে জিয়ার আদর্শ নেই, তাহলে কী হাসিনার আদর্শে চলে?


প্রকাশিত: ৬:৩২ এএম, ১৩ জুলাই ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯৬ বার

বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা:বিএনপিতে জিয়ার আদর্শ নেই, তাহলে কী হাসিনার আদর্শে চলে? জ্যেষ্ঠ নেতাদের কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়ার ‘কড়া’ মন্তব্যে বিএনপির ভেতরে নানা আলোচনা চলছে। দলীয় প্রধানের এমন কঠোর মনোভাব অনেকে ‘সঠিক’ বললেও অল্পবিস্তর সমাkhaleda hasina -www.jatirkhantha.com.bdলোচনাও হচ্ছে দলের ভেতর।

ঘরোয়া আলোচনায় জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, দলের বিরুদ্ধে তারা কিছুই বলেননি। ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ওই দিনের বৈঠকে বেশ ‘আক্রমণাত্মক’ ছিলেন। তিনি জ্যেষ্ঠ কয়েক নেতাকে ‘শাসিয়েছেন’ও। কেউ কেউ বলছেন, দলের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে খালেদা জিয়ার কঠোর হওয়া দরকার ছিল। দেরিতে হলেও তিনি সে কাজটি করেছেন। এর মাধ্যমে দলের নেতাদের কাছে একটি মেসেজ গেছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান এ বিষয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বক্তব্যে কাউকে ছোট বা বড় করার মতো কিছু হয়নি। সেখানে যে আলোচনা বা আত্মসমালোচনা হয়েছে, তার মূল সুর ছিল দলকে আরও শক্তিশালী করা, দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখা।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য নন, কিন্তু দলে প্রভাবশালী এমন এক নেতা বলেন, পর পর দুটি আন্দোলনে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে, যার কারণে দলের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। সেই হতাশা থেকে অনেক নেতা আত্মশুদ্ধি এবং আত্মসমালোচনা করতে গিয়ে অনেক কথাই বলছেন। ওই সব কথাকে ‘ষড়যন্ত্র’ মনে করলে ভুল হবে।

বিভিন্ন পত্রিকার খবরে এসেছে, ৬ জুলাই রাতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপিতে জিয়ার আদর্শ নেই, তাহলে কী হাসিনার আদর্শে চলে? আপনার বলেছেন, এই দলে জিয়ার আদর্শ নেই, এই বিএনপি দিয়ে হবে না। এসব বলার পর দলে আছেন কেন? এই দলে আপনাদের থাকতে বলেছে কে? দল থেকে চলে যান। হাসিনার মন্ত্রিসভায় গিয়ে মন্ত্রী হোন।’ তিনি বলেন, তৃণমূলের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আপনাদের ওপর আমার সেই আস্থা নেই।

সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমান এবং ড. আবদুল মঈন খানের ফাঁস হয়ে যাওয়া ফোনালাপের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন খালেদা জিয়া। বৈঠকের এক পর্যায়ে এ তিন নেতাকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলেন।

ওইদিন গুলশান কার্যালয়ে ওই বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, তিন নেতার একজনকে খুবই মন খারাপ মনে হচ্ছিল। বৈঠকের পর পরই ওই নেতা অফিস থেকে দ্রুত বের হয়ে যান। একজন নেতাকে অন্য নেতাদের সঙ্গে হাসিমুখে গল্প করতে দেখা গেলেও তাকে খুব একটা স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল না। গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশের পর তাদের অনুসারীরা অনেকেই দেখা করেছেন। এক নেতা তার অনুসারীকে বলেন, গণমাধ্যমে যা এসেছে, তা অনেকাংশে ঠিক। তিনি এও বলেন, আমার বয়স শেষ। এ বয়সে আমি তো অন্য দলে যাব না, যাওয়ার প্রশ্নও আসে না। দলের নেতাদের অনেকেই বলেন, তিন নেতাদের কেউ টেলিফোন আলাপে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বা বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। দলকে ‘বদলানো’ উচিত এমন বক্তব্য উঠে এসেছে তাদের কথায়, যা বিএনপির ‘ভালোর’ জন্যই বলেছেন। তারা বলেন, বেগম জিয়া হয়তো অডিও ক্লিপগুলো ভালো করে শোনেননি। তাকে তার কাছের কিছু লোক ভুল বুঝিয়েছে।

কারো কারো মতে, বিএনপি যে জিয়ার আদর্শে নেই, তা দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীই মনে করেন। দলে ত্যাগী নেতাদের চেয়ে হঠাৎ নেতা হওয়াদের মূল্যায়ন বেশি। সামরিক ও বেসামরিক আমলার দৌরাত্ম্যে এ দলের নেতাকর্মীরা অতিষ্ঠ। স্বয়ং দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ও দখল করে আছেন সাবেক আমলারা, যাদের দলে কোনো অবদান নেই বলে মনে করেন সাধারণ নেতাকর্মী।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘বেগম জিয়া এমন কিছু বলেননি, নেতাদের কেউ হতাশ হবেন। তিনি গঠনমূলক আলোচনা করেছেন, দল পুনর্গঠন হবে বলে জানিয়েছেন। এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই।

অবশ্য বৈঠকে উপস্থিত দলের এক উপদেষ্টা বলেন, খালেদা জিয়া যথার্থ কথা বলেছেন। দলে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে তার কঠোর হওয়ার প্রয়োজন ছিল। আরও আগে লাগাম ধরা উচিত ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের।

তার মতে, বিএনপির খাবেন, বিএনপিকে দিয়ে টাকার মালিক হবেন; তখন নৈতিকতা থাকে না। নিজেদের স্বার্থের বাইরে গেলে কিছু নেতা নীতির কথা বলেন। এরা ভ-। খালেদা জিয়ার উচিত তাদের বাইরে রেখে দল সাজানো। এরা দলে থাকলে ক্ষতি করবে।