বাঘের থাবায় কুপোকাত সিংহ-রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন
স্পোর্টস ডেস্ক রিপোর্টার : একেই বলে অসাধারণ জয়, কোনো সন্দেহ নেই। এই জয় একই সঙ্গে প্রতীকীও বটে। এর জন্য পি সারা ওভালের চেয়ে ভালো ভেন্যু আর হতে পারতো না। এই মাঠেই বাংলাদেশের রেকর্ড ছিল সবচেয়ে বাজে। দুঃস্বপ্নের ভেন্যুতে এবার দারুণ জয় পেল মুশফিকুর রহিমের দল। নিজেদের শততম টেস্টে বাংলাদেশ রাখলো এগিয়ে চলার প্রমাণ।
কলম্বো টেস্ট ৪ উইকেটে জিতে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ। দেশের বাইরে চতুর্থ আর সব মিলিয়ে তাদের নবম জয়।
পি সারা ওভাল- উপমহাদেশের একমাত্র এই মাঠেই খেলেছেন ক্রিকেট কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যান। শ্রীলঙ্কা এখানেই খেলেছে তাদের প্রথম টেস্ট। উপমহাদেশের দুই পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের প্রথম টেস্ট জয় এসেছে এই মাঠেই। শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক ভেন্যুতে এবার প্রাপ্তির ম্যাচ খেললো বাংলাদেশ।
এই ম্যাচেই অভিষেক হয় মোসাদ্দেক হোসেনের। যার মধ্যে ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন অনেকেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৭০ ছুঁই ছুঁই গড় থাকা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে ভাবা হয় বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটের জন্য উপযোগী ক্রিকেটার হিসেবে। নিজের প্রথম টেস্টে সেই সম্ভাবনার পক্ষেই বলেছে তার ব্যাট। তার অভিষেকের মধ্যে আছে পালা বদলের পরিষ্কার ইঙ্গিত।
বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে দেখা গেছে স্বরূপে। টেস্টে সর্বকালের সফলতম বাঁহাতি স্পিনারদের উইকেট শিকারের তালিকায় উঠে এসেছেন পাঁচ নম্বরে। ডিসমিসালের শতক করেছেন মুশফিক। দেশের বাইরে নিজেদের সেরা জয় পেল বাংলাদেশ।
টেস্টে এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার তাদের মাটিতে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে এটাই তাদের একমাত্র সিরিজ জয় হয়ে আছে। সেবার বোর্ডের সঙ্গে সমস্যার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল খেলোয়াড়দের কেউই ছিলেন না। দ্বিতীয় সারির একটি দল নিয়ে সেবার খেলেছিল দেশটি।
টেস্টে বাংলাদেশের আগের আট জয়ের চারটিই এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এর তিনটি নিজেদের মাটিতে, অন্যটি প্রতিপক্ষের মাঠে। ২০১৩ সালে জয়ের আশা নিয়ে যাওয়া দলটি সিরিজ ড্র করেছিল ১-১ ব্যবধানে। যে কোনো হিসেবেই আগের ওই তিন জয়ের চেয়ে এগিয়ে থাকবে কলম্বো বিজয়। আর এই জয়েই দেশের বাইরে শক্তিশালী কোনো দেশের বিপক্ষে সিরিজ হার এড়ালো বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেকের বিপক্ষেই বাংলাদেশের রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। তবে বরাবরই ভয়ঙ্করতম প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। রেকর্ডও সেই কথাই বলছে।
দ্বীপ দেশটির বিপক্ষে তাদের সবচেয়ে বিব্রতকর রেকর্ড ছিল পি সারা ওভালে। এই মাঠে আগের তিন টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হারে অতিথিরা। এই মাঠে ইনিংস ব্যবধানে ফল হয়েছেও কেবল ওই তিন ম্যাচেই।
বাজে অভিজ্ঞতা আছে শ্রীলঙ্কার অন্য মাঠেও। ২০০১ সালে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে অদ্ভুত আউট দেখেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে দ্বিশতক করে স্বেচ্ছায় মাঠ ছেড়েছিলে মারভান আতাপাত্তু, দেড়শ রান করে তাকে অনুসরণ করেছিলেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। অমন আউট এর আগে পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব।
শ্রীলঙ্কায় প্রথম পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। যে ম্যাচে হারেনি, সেটাতেও দুই ইনিংস মিলিয়ে প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংসের রান ছাড়ানো যায়নি।
এই সবই এখন অতীত। সেই কঠিন সময় পেছনে ফেলে এসেছে দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশটি। সামর্থ্য হয়েছে সিংহের ডেরায় সিংহকে হারিয়ে আসার।