• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

বাঘের গর্জন শুনল দক্ষিণ আফ্রিকা


প্রকাশিত: ৫:০৬ এএম, ১৩ জুলাই ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৯ বার

Bangladesh-v-South-Africa-1st-odi-previewডেস্ক রিপোর্টার.ঢাকা: ইমরান তাহিরকে তুলে মারলেন সৌম্য সরকার,  বল গিয়ে পড়ল সীমানাদড়িতে- ছক্কা-বহুকাঙ্ক্ষিত জয়।বাঘের গর্জন শুনল দক্ষিণ আফ্রিকা । এখন বাংলাদেশের যেকোনো প্রতিপক্ষই বাঘের গর্জন এখন শুনতে হবে । আলিঙ্গন করলেন সৌম্য আর সাকিব আল হাসান।

ttttttttttttসন্ধ্যার পর সেই গ্যালারি হঠাৎই ভরে উঠতে লাগল! তখনই যে উঁকি দিতে শুরু করেছে জয়ের সম্ভাবনা। বদলে যাওয়ার উপলক্ষ তৈরি হলো সিরিজের রংটাও। দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট ১৬২ রানে, এই ম্যাচ বাংলাদেশ না জেতে কীভাবে! শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি মিলে গেল এক মোহনায়। ম্যাচের ২৮ তম ওভারেই ৭ উইকেটের একপেশে জয় নিশ্চিত করে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল শুধু সিরিজেই ফিরল না, নিশ্চিত করে ফেলল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলাও।
কিন্তু কে জেতাল বাংলাদেশকে? কী এমন জাদু, যা বদলে দিল বাংলাদেশ দলকে? নাসির হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেনের নিয়ন্ত্রিত বোলিং? নাকি মাশরাফি বিন মুর্তজার বিচক্ষণ অধিনায়কত্ব, আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে প্রোটিয়াদের চেপে ধরা! কিংবা ব্যাট হাতে সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহর সাহসী উপস্থিতি?
২০০৭ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাটিতে নামিয়ে আনার কৃতিত্ব আসলে পুরো দলেরই। সেবার গায়ানায় বাংলাদেশের ২৫১ রানের জবাবে ১৮৪ রানে অলআউট হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এত দিন বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই ছিল তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। কাল ১৬২ রানে অলআউট হয়ে আরও তলিয়ে গেল সেই ‘রেকর্ড’। ওয়ানডে ক্রিকেটেই ২০০৯ সালের পর প্রথমে ব্যাট করে এটা দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে কম রান।
টি-টোয়েন্টি আর প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ চেয়েছিল প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের স্পিনে আটকাতে। তাতে সাফল্য না আসায় ছক বদলে কাল ব্যাটিং উইকেট পেতে দেওয়া হলো মিরপুরে। ভাবটা এমন—যত পারো রান করো, আমরাও আছি…। কিন্তু কী বিস্ময়! হাশিম আমলা, ডেভিড মিলাররা সে উইকেটেই মাথা ঠুকে মরলেন! ব্যাটিং উইকেটেও তাঁরা পারলেন না বাংলাদেশের মাথার ওপর রানের পাহাড় তুলে দিতে। ম্যাচ শেষে অবশ্য প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের মাথার ওপর ছাতা ধরলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফিই, ‘এই উইকেটে ব্যাটিং করা কিন্তু খুব সহজ ছিল না। বল মাঝে মাঝেই একটু থেমে আসছিল।’
আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের যতটা না ব্যর্থতা, তার চেয়ে বেশি কৃতিত্ব বাংলাদেশের বোলারদেরই। ভারত সিরিজে বিস্ময় বালক হিসেবে আবির্ভূত বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের অফ কাটার এবার প্রোটিয়াদের জন্যও দুর্বোধ্য হয়ে গেল। তাঁর হঠাৎ দেওয়া ইয়র্কারগুলো ছুরির ফলার মতো নেমে আসছিল ব্যাটের গোড়ায়। অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি যা একটু মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন, তাঁকেও থামিয়ে দিলেন নাসির হোসেন। আর রুবেল তো বরাবরের মতোই প্রত্যয়ী। সিরিজে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা এই পেসারের নিখুঁত লাইন-লেংথের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের একটু দিশেহারাই লাগল।
বাংলাদেশের যেমন মুস্তাফিজ, দক্ষিণ আফ্রিকারও আছেন কাগিসো রাবাদা। আরও একবার বাংলাদেশের শুরুটা কাঁপিয়ে দিলেন অভিষেকে ৬ উইকেট পাওয়া এই পেসার। নিজের প্রথম বলেই বোল্ড করলেন তামিম ইকবালকে। দলের ২৪ রানের সময় গুড লেংথের বলে স্টাম্প ভেঙে দিলেন লিটন দাসেরও। তবে রাবাদাকে থেমে যেতে হয়েছে ওখানেই। ম্যাচের বাকি গল্পটা সৌম্য আর মাহমুদউল্লাহর যুগল হাতে লেখা।
তৃতীয় উইকেটে দুজনের ১৩৫ রানের জুটিতে জয়ের একেবারে দুয়ারে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ জয় নিয়ে ফেরায় সৌম্যর সঙ্গী হতে পারলেন না অ্যাবটের বলে শর্ট মিড উইকেটে আমলার ক্যাচ হয়ে যাওয়ায়। এর আগেই অবশ্য ফিফটি হয়ে গেছে তাঁর। সৌম্যর হয়ে গেছে আরও আগেই। অপরাজিত ৮৮ রানের ইনিংসের শেষ আকর্ষণটা হলো ইমরান তাহিরকে স্লগ সুইপে মারা জয়সূচক ওই ছক্কা।
ম্যাচ জয়ের আরও অনেক নায়কের ভিড়ে সৌম্যর মাথাটা উঁচু করে দিল স্বপ্নের ওই সমাপ্তি। দলের প্রতিনিধি হয়ে এটাও যেন জানিয়ে দিলেন, ভারত-পাকিস্তান বলে কথা নেই, বাঘের গর্জন এখন শুনতে হবে বাংলাদেশের যেকোনো প্রতিপক্ষকেই।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।