• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হবে? তাসকিন-হাবিবুলের স্বপ্ন


প্রকাশিত: ৪:৫১ পিএম, ৩ জানুয়ারী ১৬ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৫ বার

Taskin-Ahmed-www.jatirkhantha.com.bdনীপা খন্দকার   :  তাসকিন হাবিবুলের স্বপ্ন বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হবে? ‘২০০৭ বিশ্বকাপ আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের বীজ বুনে দিল। তখন আমরা যে স্বপ্নটা দেখতে শুরু করেছিলাম, সেটা এখন এসে সত্যি হয়েছে। আজকের এই সময়টা কিন্তু আরও একটা নতুন দিনের ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে।’

বাংলাদেশের ক্রিকেট এই পর্যন্ত পৌঁছাতে কম বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়নি। হাবিবুল বললেন, ‘আমি যখন শুরু করি, তখন আমার বাবা-মা চাইতেন না আমি ক্রিকেট খেলি। তখন ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হয়েছে, পরে কিছু করে তো খেতে হবে!

000000000000টেস্ট ম্যাচ যখন খেলা শুরু করলাম, তখনই প্রথম বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের চুক্তি হলো। ২০০০ সালের সেই সময়টায় আমরা বেতন হিসেবে বোর্ড থেকে যা পেতাম, শুনলে তাসকিনরা লজ্জা পাবে। প্রিমিয়ার লিগ খেলেও এখনকার মতো টাকা পাওয়া যেত না। আর বিপিএলের মতো টুর্নামেন্ট তো ছিলই না। এখন যেমন ক্রিকেটাররা পণ্যদূত হিসেবেও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।’

মাত্রই টিনএজ বয়সটা পেছনে ফেলেও ভেতরে ভেতরে টিনএজের ছটফটানি তাসকিনের মধ্যে। ‘আমিও পিটুনি কম খাইনি,’ বললেন তিনি। ‘আমার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল অনূর্ধ্ব-১২ বয়সীদের একটা টুর্নামেন্ট। এর তিন দিন আগে আব্বু আমাকে মেরে ব্যাট ভেঙে ফেলেছিল। তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে। সত্যি বলতে, মাত্র গত কয়েক বছরে খুব দ্রুত ছবিটা বদলে গেছে।

পাড়ায় আমরা টেনিস বলে খেলতাম। তখন আমাদের স্বপ্ন ছিল “কাঠের বল”-এ ক্রিকেট খেলব। এখন তো অনেকে শুরুই করে প্রপার ক্রিকেট বল দিয়ে।’এই দুই সময়ের মধ্যে মূল পরিবর্তনটা কোথায়? হাবিবুল তাসকিনের কাছে ‘স্যার’। তবে এবার অনুজের উত্তরই আগে পেলাম আমরা, ‘এখন আমরা প্রতিটি ম্যাচ জেতার জন্য মাঠে নামি, প্রতিপক্ষ যে-ই হোক না কেন।’

হাবিবুল বললেন, ‘এখন একটা ম্যাচ হেরে গেলে প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়। এখন জিম্বাবুয়েকে আপনি ৫-০তে হারালেও কেউ পিঠ চাপড়ে দেবে না। কিন্তু এক ম্যাচ হারলেই তুমুল সমালোচনা হবে।’
হাবিবুল ফিরে গেলেন দেড় দশকেরও আগের সময়টায়।

‘আমাদের জিমই ছিল না। জিম করতে হলে বিকেএসপিতে যাও, সেটাও নামমাত্র জিম ছিল, আধুনিক না। এখনকার তুলনায় কিছুই ছিল না বলা যায়। এখন একাডেমি ভবন আছে। একাডেমি মাঠ, ইনডোর, ফিটনেস ট্রেনার, ফিজিও¦সব সময়ই ক্রিকেটারদের হাতের নাগালে।’

তাসকিন জানালেন, আরেকটি বড় পরিবর্তন এসেছে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া এবং ধরে রাখার একটা সুস্থ কিন্তু তীব্র প্রতিযোগিতায়। ‘এখন যে কেউ জানে, প্রতি ম্যাচে পারফর্ম করতেই হবে। আমার কাজ হলো নিজেকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়া। বিনয়ী হওয়া। মাটিতে নিজের পা রাখা। এক মৌসুম ভালো খেলেছি মানেই সব পেয়ে গেলাম, তা নয়।

ভালো দিকটা হলো, আমাদের দলে অভিজ্ঞ আর তরুণদের ভালো ভারসাম্য আছে। মাশরাফি ভাই, সাকিব ভাই, তামিম ভাইয়েরা তাঁদের অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন।’
তাসকিনদের জন্য হাবিবুলের একটি সতর্কবার্তাও আছে, ‘এখন ক্রিকেটের সঙ্গে এত কিছু জুড়ে গেছে, এ সময় মনোযোগটা ধরে রাখা আরও বেশি জরুরি। নিজের কাজের প্রতি নিবেদন থাকতে হবে। খেলার আরেকটি মানে কিন্তু শৃঙ্খলা। সবচেয়ে বড় কথা, নিজের কাজের প্রতি সৎ থাকা।’

তাসকিনও আশ্বস্ত করতে চাইলেন পূর্বসূরিকে, ‘খেলাই আমাদের সব। এটা আমরা ভালো করেই জানি। খেলা আছে বলেই আমি এনডোর্স করতে পারছি। পারফর্ম করতে না পারলে কেউ বিজ্ঞাপনে দেখাবেও না। সবচেয়ে বড় কথা, এখন প্রতিযোগিতা এত বেড়েছে, খেলা না থাকলেও প্রত্যেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুশীলন চালিয়ে যায়।’

তাসকিনের স্বপ্ন বড় ক্যানভাসে আঁকা। ‘আমি ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই বাংলাদেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে রেখে। শুধু বিশ্বকাপ জেতা নয়, যেদিন অবসর নেব, সেদিনও যেন আমি দেখি, বিশ্বকাপের ট্রফিটা আমাদের দেশেই আছে।’

তফাতটা ধরিয়ে দিলেন সাবধানী হাবিবুল, ‘কয়েক বছর আগে হলে আপনি করতেনই না প্রশ্নটা। আগে এ কথা বললে আমিও হয়তো মনে মনে হাসতাম। কিন্তু এখন জোর দিয়ে বলতে পারছি, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবেই। এই স্বপ্ন দেখার সময় এসে গেছে।’