বাংলাদেশে জঙ্গি-বিরোধী অভিযান নিয়ে প্রশ্ন কেন?
অনলাইন ডেস্ক : ঢাকার আশকোনায় র্যাবের ক্যাম্পে বিস্ফোরণের দিন হানিফ মৃধা নামে এক ব্যক্তিকে সন্দেহবশত আটক করার দাবী করা হয়েছিল। কিন্তু র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় পরদিনই হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। অথচ হানিফ মৃধার পরিবার বলছে, তাকে গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছিল।তথ্য বিবিসি’র।
এ নিয়ে মার্চ মাসের ৪ তারিখে তার ভাই সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছে। হানিফ মৃধার বোন মোসাম্মৎ রোজিনা দাবী করছেন, সে ঘটনার প্রায় দু’সপ্তাহ পরে র্যাবের পোশাক পরা ব্যক্তিরা হানিফ মৃধার ঢাকার বাসায়ও এসেছিলেন। তার ভাইয়ের ঢাকার বাসায় র্যাবের গাড়ি নিয়ে এবং র্যাবের পোশাক পরা ১৫ জন এসেছিলেন বলে মোসাম্মৎ রোজিনা দাবী করেন।
আশকোনায় র্যাব ক্যাম্পে বিস্ফোরণের দিন হানিফ মৃধাকে আটক করার যে দাবী র্যাব করছে, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। ঐ ঘটনার প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার ভোরে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় সড়কের ওপর বসানো একটি তল্লাশি চৌকিতে র্যাব সদস্যদের গুলিতে এক মোটরসাইকেল আরোহী সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়। পরে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগে বোমা পাওয়া গেছে বলে র্যাব দাবী করে।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো জঙ্গি-বিরোধী অভিযানের সময় আইন-শৃঙ্খলা বহিনী ঘটনার যেসব বর্ণনা দিয়েছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন এবং বিতর্ক তৈরি হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একজন বাসিন্দা মনে করেন, নিরাপত্তা বাহিনীর জঙ্গি-বিরোধী অভিযানের বর্ণনা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। তিনি বলেন, ভালো মানুষ এটার ভিকটিম হচ্ছে কি না, সেটা নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগে।আরেকজন বলছিলেন, আশকোনায় যে ছেলেটা মারা গেল, সেটা একটা সাজানো নাটকও হইতে পারে।
প্রতিটি অভিযানে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের মৃত্যু এসব প্রশ্নকে আরো জোরালো করে তুলছে অনেকের মাঝে। তাদেরকে জীবিত রেখে যদি প্রমাণ করে, তাইলে মনে সবচেয়ে বেটার (অধিকতর ভালো) বলছিলেন পেশায় চাকরিজীবী এক ব্যক্তি।
বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা যে আছে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ কিংবা বিশ্লেষকদের মনে কোন সন্দেহ নেই। কারণ হোলি আর্টিজানে হামলা এবং ব্লগারদের হত্যা তার জোরালো উদাহরণ। এছাড়া বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের বেশ কিছু তরুণের জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সাথে যোগ দিতে সিরিয়ায় যাওয়ার খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করছেন সাংবাদিক জুলফিকার আলী। তিনি মনে করেন জঙ্গি বিরোধী বিভিন্ন অভিযান নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, সেটি দীর্ঘ দিনের নানা ঘটনার ফলাফল – যার শুরুটা হয়েছিল পুলিশ এবং র্যাবের তথাকথিত ‘ক্রসফায়ারের’ বর্ণনা দিয়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণেই বিষয়টি প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন মি: আলী।
তিনি বলেন, “বেশ কিছু গ্রেফতার যেগুলো সংবাদমাধ্যমের সামনে এনে প্রেস ব্রিফিং করে ছবি তুলে বলা হয়েছে যে তারা অমুক মামলার-অমুক হত্যাকাণ্ডের আসামী। কিন্তু পরে দেখা গেছে যে তাদের (সন্দেহভাজনদের) যে জায়গা থেকে যখন ধরার কথা বলা হয়েছে প্রেস কনফারেন্সে, দেখা গেছে তাদের কেউ-কেউ তিনমাস আগে অথবা ছয়মাস আগে অন্য জায়গা থেকে ধরা পড়েছে। তাদের পরিবার জিডি করেছে যে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এসব কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর কাজ নিয়ে সন্দেহ এবং প্রশ্ন ওঠার ক্ষেত্র আগে থেকেই প্রস্তুত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। জঙ্গি-বিরোধী অভিযানে ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ তৈরি হওয়া একটি বড় ব্যাপার বলে উল্লেখ করেন মি: আলী।
তিনি বলেন, জঙ্গি-বিরোধী অভিযানে গ্রেফতার নিয়ে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকেও পরস্পর-বিরোধী বক্তব্য এসেছে, ফলে বিষয়গুলো নিয়ে অনেকের মাঝে নানা রকম বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
মি: আলী বলেন, আপনি যদি সত্যও করে থাকেন, সেটা নিয়েও তার মনে পুরানো পারসেপশান থেকে একটি সন্দেহ তৈরি হবে’ সাম্প্রতিক জঙ্গি-বিরোধী বিভিন্ন অভিযানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যে বিতর্ক সেটিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিভাবে দেখছে, সে সংক্রান্ত কোন বক্তব্য তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
তবে বিভিন্ন সময় পুলিশ এবং র্যাবের পক্ষ থেকে তাদের অভিযান সম্পর্কিত সন্দেহগুলোকে অমূলক হিসেবে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এসব বাহিনী আরও দাবী করেছে যে তাদের চালানো অভিযানের মাধ্যমে তারা জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে সক্ষম হয়েছে।