বাংলাদেশের ক্রিকেট বদলে দিচ্ছে বিশ্বকাপের যুবারা-
আসমা খন্দকার : অনূর্ধ্ব-১৯ এ বাঘা বাঘা ক্রিকেটার তৈরী হচ্ছে-এরা বাংলাদেশের ক্রিকেটটাই যেন বদলে দেবে্-এমন প্রত্যয় দৃশ্যমান হচ্ছে খেলায়। এখানে অনেকে এগিয়ে ২০০৬ যুব বিশ্বকাপে মুশফিকদের দরের চেয়ে-। ওই দলকে ‘ড্রিম টিম’ও বলতে আপত্তি নেই তাঁদের।
যে দলে মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, রকিবুল হাসান, সোহরাওয়ার্দী শুভ, শামসুর রহমান, মেহরাব জুনিয়র, ডলার মাহমুদের মতো একগুচ্ছ বিপুল সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড় ছিলেন, যাঁদের বেশির ভাগই পরে জাতীয় দল পর্যন্ত পৌঁছেছেন, কেউ কেউ তো এখন দলের কান্ডারিও। সেই দলকে ‘স্বপ্নের দল’ বলাটা নিশ্চয় বাড়াবাড়ি নয়!
তা ছাড়া ওই দলের অধিনায়ক তত দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দিয়েও ফেলেছিলেন। আগের বছর লর্ডস টেস্টে অভিষেক হয়ে গিয়েছিল মুশফিকের। আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখার বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন সাকিব-তামিমও। ধারে-ভারে এগিয়ে থাকা দলটার কাছে প্রত্যাশাও ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু মুশফিকেরা সেই স্বপ্ন সত্যি করতে পারেননি। শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা থেমে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে, মঈন আলীর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেটে হেরে। যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ওটাই সর্বোচ্চ সাফল্য, পঞ্চম হওয়া।
মিরাজদের সামনে এখন মুশফিকদের ‘ছাড়িয়ে’ যাওয়ার সুযোগ। কাল কোয়ার্টার ফাইনালে মিরপুরে বাংলাদেশ যুবাদের প্রতিপক্ষ নেপাল। এই বাধা টপকাতে পারলেই সেমিফাইনাল। আর সেটা হলে, বিরাট এক মাইলফলকই ছোঁবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯। ক্রিকেটের বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো শেষ চারে পা রাখবে বাংলাদেশ। শুধু ক্রিকেট কেন, ফুটবল-হকির কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে শেষ চারে কি বাংলাদেশ কখনো পা রেখেছে?
দারুণ অর্জনের সামনে দাঁড়িয়ে যুবা অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ এগোচ্ছেন খুব সাবধানে। তিনি ভালোই জানেন, এখান থেকে পা হড়কানো মানেই স্বপ্নের সমাধি! গ্রুপপর্বে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেওয়া নেপালকে তাই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন মিরাজ, ‘বাংলাদেশ এর আগে কখনো সেমিফাইনাল খেলেনি। যদি নেপালের সঙ্গে জিততে পারি, সেটি হবে অনেক বড় অর্জন। এখন যে পর্যায়ে আছি, এখানে হারলে আর সুযোগ নেই।
বাদ পড়ে যেতে হবে। ফলে আগের চেয়ে মনোযোগ আরও বেশি থাকবে। যেহেতু নক আউট খেলা। জিতলে ওপরে যাব, হারলে শেষ! এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’
অবশ্য সেমিফাইনালে পা রাখার আগেই মিরাজরা আরেকটি মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছেন। ২০০৪ যুব বিশ্বকাপ হয়েছিল বাংলাদেশেই। সেবার শেষ আটে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল যুবারা। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সেটি আবার মিরাজের নেতৃত্বে। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করলেও এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখাই আসল। অধিনায়ক ধরে রাখতে চান সামনেও, ‘যেহেতু কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছি, সামনে যেতে অনুপ্রাণিত করছে। এর আগে মুশফিক ভাইয়েরাও ভালো পজিশনে ছিল। আমাদের সামনেও ভালো করার সুযোগ রয়েছে।
চেষ্টা করব সুযোগটা কাজে লাগানোর। আমাদের ব্যাটসম্যান-বোলাররা আগে যা করছে, এখন সেটাই করবে। নতুন করে কিছু করব না। নতুন কিছু করতে গেলে সমস্যা হবে। আগের তিনটা ম্যাচ যেভাবে খেলেছি, কোয়ার্টার ফাইনালও সেভাবে খেলব।’
আর সেটি হলেই যুব বিশ্বকাপে পূর্বসূরিদের সাফল্যকে ছাড়িয়ে যাবেন মিরাজরা ।