• রোববার , ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের কাল মার্কস তারেক রহমানকে কেউ ঠেকাতে পারবে না :এম এ মালিক


প্রকাশিত: ৩:৩৯ এএম, ৮ ডিসেম্বর ২৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৫ বার

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, যতই ষড়যন্ত্র হোক, যতই মাইনাস ফর্মুলার চেষ্টা-তদবির হোক বাংলাদেশের কাল মার্কস তারেক রহমান কে কেউ ঠেকাতে পারবে না। তিনি রাষ্ট্র সংস্কারে যে ফর্মুলা দিয়েছেন সেটাই বদলে দেবে আগামীর নতুন বাংলাদেশকে।

 

খালেদা জিয়া-তারেক-মাইনাস ষড়যন্ত্র-

শফিক রহমান : বাংলাদেশের রাজনীতিতে ওয়ান ইলেভেনের মতো মাইনাস টু ফর্মুলা ফের জোরদার হচ্ছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনা চলছে। তবে এবার খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং এটি জোরদারের চেষ্টা-তদবির হচ্ছে বলে বাতাসে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ‘মাইনাস টু’ বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রে নেমেছে।

তবে এ সম্পর্কে ভিন্নমত পোষন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক। তিনি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, যতই ষড়যন্ত্র হোক, যতই মাইনাস ফর্মুলার চেষ্টা-তদবির হোক বাংলার কাল মার্কস তারেক রহমান কে কেউ ঠেকাতে পারবে না। তিনি রাষ্ট্র সংস্কারে যে ফর্মুলা দিয়েছেন সেটাই বদলে দেবে আগামীর নতুন বাংলাদেশকে।

এম এ মালিক বলেন, দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার ও অর্থনৈতিকসহ সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এক বছর ৩ মাস আগে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব ঘোষণা করে বিএনপি। রাষ্ট্র সংস্কারে দেওয়া এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। ক্ষমতায় গিয়ে এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হওয়ার পাশাপাশি দেশের মানুষ মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে এক বছর ৩ মাস আগে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব ঘোষণা করে বিএনপি। ক্ষমতায় গেলে এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও করে দলটি। তবে শেষ পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় বিএনপির সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনাও থেমে যায়।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার লাগাতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর আবার বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সোচ্চার হয়। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে জনমত বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে এই প্রস্তাবগুলো পাঠানো হয়। অতিসম্প্রতি রাজধানীর অভিজাত এলাকার একটি হোটেলে দেশের ক’টি রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিদেশে কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করে বিএনপি। এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে ইতোমধ্যেই দেশ বিদেশের বিভিন্ন মহল বিএনপি নেতা তারেক রহমানের রাজনৈতিক বিচক্ষনতার ভূয়সী প্রশংসা করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

যাহোক, ওয়ান-ইলেভেনে ব্যর্থ হয়ে দেশকে রাজনীতি শূন্য করতে আবারও একই ফর্মুলা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এবার তাদের টার্গেট খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক বক্তব্যেও নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয় মাইনাস টু ফর্মুলা।

তিনি বলেন, মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে কেউ যেন আবার চিন্তা না করেন। মাইনাস-২ ফর্মুলার বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করার পর বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের আলোচনাও শুরু হয়েছে। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাখা কিংবা তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা তৈরি করার মতো বিষয় আছে কি না-বিবিসির এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এমন দুরভিসন্ধি কেউ পোষণ করতে পারেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না। আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে পারি বাংলাদেশে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাইপাস করে কিছু হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,
ওয়ান ইলেভেনের সেই ভূমিকা ছিল ২০০৬ সালের শেষভাগে অক্টোবর মাসে। তখন বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেরা বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিতে না পারেন সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট তুমুল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্চ্ছিল। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ঘিরেই ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত সমাবেশের ডাক দিয়েছিলো।

এই একই ধরনের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো ব্যাপক সহিংসতা। জ্বালাও-পোড়াও আর হামলায় প্রাণ দিতে হয়েছিলো বহু মানুষকে। সেই সংঘাতের উপলক্ষ ছিল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বেশকিছুদিনের আওয়ামী জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের পর রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। কে এম হাসান শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদে আসীন হন অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ।

এরপর নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নানাবিধ কাজকর্ম শুরু থেকেই আলোচিত- সমালোচিত হতে থাকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এমতবস্থায় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পরিচিতি পায় ওয়ান-ইলেভেন নামে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গঠিত নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের এ দিনে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে সেনা সমর্থিত সরকার।বাতিল করা হয় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন।

যাহোক, ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উৎখাত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে বিএনপি নির্বাচন দাবি করে আসছে। তবে সরকারের অনড় সংস্কার নিয়ে। অন্যদিকে আন্দোলনকারী অনেকেই আকার-ইঙ্গিতে বলার চেষ্টা করছেন, ‘আগে সংস্কার, তারপর নির্বাচন’।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারবেন তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি দলের নেতাকর্মীরা। এরমধ্যে তারেক রহমান কিছু মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তবে আইনি বাধা অপসারণে প্রশাসনিক ধীরগতিতে দলের অনেকের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এরমধ্যে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কারও কারও বক্তৃতাও বিএনপিকে ইঙ্গিত করে দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

এদিকে, রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশকে রাজনীতি ও রাজনীতিক শূন্য করতে দেশের প্রধান দুই নারীনেত্রীকে সরিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। ওই চক্রটি আবারো সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এমনকি দেশের ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে।

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন দুই প্রধান নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে কারাবন্দি করে রাখা হয়। এরপর ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’র আলোচনা জোরদার হয়েছিল। তখন অনেকেই অভিযোগ করেছিল, ‘দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে’। যা পরে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ হিসেবে পরিচিতি পায়।