বনানীতে ধর্ষণকারী ধনির দুলালরা এখনো ধরা পড়েনি
এস রহমান : বনানীর ধর্ষণ নায়করা এখনো বহাল তবিয়তে। তবে তদের পাকরাওয়ের সব ধরনের চেষ্ঠা চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। জানা গেছে জন্ম দিনের পার্টির কথা বলে বনানীর একটি বিলাসবহুল হোটেলে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করে কতিপয় ধনীর দুলালের কুসন্তান। মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকদের একজনের ছেলে সাফাত আহমেদ (২৬) এখনো ধরা পড়েনি। এছাড়া অন্য আসামীরাও এখনও পলাতক।
এদিকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। জন্মদিনের পার্টিতে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণ’ মাসখানেক আগের এ ঘটনায় শনিবার বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা হয়। তাদের মধ্যে সাফাত আহমেদ (২৬) আপন জুয়েলার্সের মালিক চার ভাইয়ের একজন দিলদার আহমেদের বড় ছেলে বলে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন জানিয়েছেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে থাকা এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সাফাতকে গ্রেপ্তারে তাদের গুলশান-২ নম্বরের বাসায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছেন তারা। তবে আসামি সাফাতকে পাওয়া যায়নি।
মামলার অপর আসামিদের মধ্যে নাঈম আশরাফ (৩০) ও সাদমান সাকিফ (২৪) নামে দুজন সাফাতের বন্ধু এবং বিল্লাল (২৬) তার গাড়িচালক। অপরজন সাফাতের দেহরক্ষী, মামলায় তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।পুলিশ কর্মকর্তা মতিন জানান, নাঈমের বাবা একজন ঠিকাদার এবং তিনি একটি টেলিভিশন স্টেশনের বিজ্ঞাপন বিভাগে কর্মরত। আর ‘পিকাসো’ নামের একটি রেস্তোরাঁর মালিকের ছেলে সাদমানও একটি টেলিভিশন স্টেশনে কর্মরত।
‘ধর্ষিতা’ দুই ছাত্রীর একজনের দায়ের করা ওই মামলায় ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে সাফাত ও নাঈমের বিরুদ্ধে। অন্য চারজন তাদের সহযোগিতা করেছেন। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ঘটনার ভিডিও করেছেন বলে অভিযোগ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সাফাত, নাঈম, সাদমান এবং ঢাকার একজন সংসদ সদস্যের ছেলে বনানী ১১ নম্বর সড়কে একটি রেস্তোরাঁ চালান। এছাড়া তাদের একাধিক সীসা বার রয়েছে।
ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ একটি অনলাইনকে বলেন ওই রাতে যদি কিছু হয়েও থাকে তাহলে সমঝোতার ভিত্তিতেই হয়েছে। এই অভিযোগের পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর আগে একজন টেলিভিশন উপস্থাপিকার সঙ্গে তার ছেলের বিয়ে হয়।
বিয়েটা তারা মেনে নেননি। পরে বউয়ের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণে ছেলে তাকে তালাক দেয়। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই উপস্থাপিকাই ষড়যন্ত্র করে ওই দুই মেয়েকে দিয়ে সাজানো মামলা করিয়েছে। মামলা করতে থানায় ছেলের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীও গিয়েছিল।
মামলার বাদী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেয়ে ২৮ মার্চ এক বান্ধবীসহ তিনি বনানীর ‘রেইন ট্রি’ হোটেলে যান। সেখানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাতভর আটকে রেখে সাফাত ও নাঈম তাদের ধর্ষণ করেন।
ওই রাতে ওই ছাত্রীর এক ছেলে ও মেয়ে বন্ধুও এই দাওয়াতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন বলে জানান তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার ঢাকার দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রীর মেডিকেল পরীক্ষা হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে মামলায় বলা হয়, আসামিদের মধ্যে সাদমান সাফিকে প্রায় দুই বছর ধরে চেনেন ওই ছাত্রী। তার মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ দিন আগে সাফাত আহমেদের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তারা দাওয়াত পান।ওই দিন সাফাতের গাড়ি দিয়ে তাদের ওই হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় চালক বিল্লালের সঙ্গে গাড়িতে সাফাতের দেহরক্ষী ছিলেন।
তাদের বলা হয়েছিল হোটেলে ছাদে বড় করে অনুষ্ঠান হবে, অনেক মানুষের সমাগম ঘটবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা অতিথি দেখেননি। সেখানে সাফাত, নাঈম, সাদমান এবং তাদের সঙ্গে দুইজন মেয়েকে দেখতে পান। কথোপকথনে ওই দুই মেয়ের নাম নাজিয়া ও তানজিলিশা বলে জানতে পারেন তারা।
মামলায় বলা হয়, এই দুই মেয়েকে নিয়ে সাফাত ও নাঈম বারবার নিচে নামছিলেন এবং ফিরে আসছিলেন।
এরমধ্যে তাদের এক চিকিৎসক বন্ধু এবং এক বান্ধবী সেখানে উপস্থিত হন বলে জানান ওই শিক্ষার্থী।কিছুক্ষণ পর পরিবেশ ভালো না লাগায় তারা চারজন চলে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে সাফাত-নাঈমরা তাদের বন্ধুকে মারধর করে তার কাছ থেকে গাড়ির চাবি কেড়ে নেয়। এরপর শুধু তাদের দুইজনকে (ধর্ষিতা দুই ছাত্রী) নীচে একটি কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে এবং পরদিন সকাল ১০টায় তাদের ছেড়ে দেয়, বলা হয়েছে মামলায়।
ওই চিকিৎসক বন্ধু এবং বান্ধবীর অবস্থা কী হয়েছিল সে বিষয়ে মামলায় স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, পরদিন সকালে দুই ছাত্রীকে ছেড়ে দেওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল বলে বাদী তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, আশা করা হচ্ছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, “আসামিদের বাড়িতে অভিযান চালানো ছাড়াও সম্ভাব্য সকল স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। যে হোটেলে এই ঘটনা ঘটেছে সেখানে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাথে কথা বলা হয়েছে।ধর্ষণের ঘটনার আগে যে দুইজন তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল, তাদের সাথে কথা বলা হবে। এছাড়া এজাহারে আসামিদের সাথে যে দুইজন মেয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।