• বৃহস্পতিবার , ২ মে ২০২৪

বঙ্গবন্ধু কর্নার গৃহবন্দী! অগ্রণী ব্যাংকের এমডি নিশ্চুপ!


প্রকাশিত: ১০:২৭ পিএম, ১৪ আগস্ট ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৪ বার


শফিক রহমান : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণীয় করে রাখার অনন্য এক উদ্যোগ ছিল বঙ্গবন্ধু কর্নার। অগ্রণী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধু কর্নারটি একসময় ছিল সারা ব্যাংকিং সেক্টরের অগ্রণী। সেই বঙ্গবন্ধু কর্নার এখন গৃহবন্দী! বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ মুরশেদুল কবীর বঙ্গবন্ধু কর্নারটিকে গৃহবন্দী করে রেখেছেন।

এখন কেউ আর এই কর্নারে ঢুকে বই পড়তে পারেন না। জানতে পারেন না বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে। অবহেলা অযত্নে পড়ে অছে কর্নারটি। এই কর্নারে লাইট জ্বলেনা, অন্ধকারময় অবস্থা। অবহেলা অযত্নে বঙ্গবন্ধু কর্নারটি কে সীমাহীন অসম্মান করা হচ্ছে। গ্লাসে জমে রয়েছে ময়লা! জাতির পিতাকে সর্বদা স্মরণে রাখার এ অনন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিইও) মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম।

আগে প্রধান কার্যালয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরে ঢুকলেই সবার চোখ আটকে যেত কর্নারটিতে। বঙ্গবন্ধুর একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা আছে সেখানে। কক্ষটির শেলফে শোভা পাচ্ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেকগুলো বই। একটি বড় ছবির নিচে লেখা ‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি বঙ্গে/এইখানে কিছুক্ষণ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে’। অফিসে আসা মানুষজন সেখানে থমকে দাঁড়িয়ে প্রবেশ করত কর্নারটিতে। যারা অপেক্ষা করেন, তারা বই নিয়ে পড়ার চেষ্টা করতেন। কেউ বা মোবাইলে সেখানকার সুন্দর দৃশ্যগুলো ধারণ করতেন। কিন্তু আজ কেন এ অবহেলা। কেন অসম্মান করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কর্নারকে।

সেখানে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যটি ছিল নজর কাড়ার মত। এর ওজন ১১৭ কেজি। এখন এটি যেন শো-পিচ করে রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বই-পুস্তক, ছবি, লেখা ও প্রামাণ্যচিত্র ছিল কর্নারে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা প্রায় ৪০০ বই সেখানে ছিল।সেখানে বঙ্গবন্ধুর একটি আর্টিকুলেট ই-বুক ছিল। যা রিফ্লেকশনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সব তথ্য প্রকাশ করত।

অথচ এটি এখন যেনো বিলীন হতে চলেছে গৃহবন্দী অবস্থার কারণে-! অভিযোগ রয়েছে অযাচিতভাবে বঙ্গবন্ধু কর্নারটি কে গৃহবন্দী করে ছোট করা হয়েছে। অন্যত্র জায়গা থাকলেও বঙ্গবন্ধু কর্নার ছোট করে এখানে বসানো হয়েছে কয়েক জনের বসার জায়গা। যেটা না করলেও হতো। কিন্তু ওই যে হাইব্রিড-! ফলে যা হবার বঙ্গবন্ধু কর্নার হয়ে গেছে গৃহবন্দী। এখন কে এটা মুক্ত করবে সেটাই প্রশ্ন!!

বঙ্গবন্ধু সংশ্লিষ্ট তিনটি ছবির অ্যালবাম ছিল। যাতে ছিল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় অনেক ছবি। বঙ্গবন্ধুর ছবিসংবলিত ৫ ও ১০ টাকার দুটি বড় নোটও ছিল। এখন এগুলো রাখা হয়েছে অবহেলা অযত্নে, অনাদরে এক সাইট করে। অথচ এটি ছিল এই কর্নারের অত্যন্ত আকর্ষনীয়।

২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল সেখানে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তিটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অগ্রণী ব্যাংকে করা বঙ্গবন্ধু কর্নার দেশের দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু কর্নার। এর আগে আনসার-ভিডিপি ব্যাংকে এই কর্নার স্থাপন করেছিলেন শামস উল ইসলাম।এমডি থাকার সময় ২০১৬ সালে সেখানে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু কর্নার করেছিলেন মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধুকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন এমন মানুষের সংখ্যা এ দেশে অগণিত। আবার মুজিব পাগল লাখো কোটি বঙ্গবন্ধু প্রেমির মতো এমন কিছু মানুষ আছেন যারা সেই সাধারণের কাতারে থেকেই অসাধারণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এদের কেউ কেউ কাব্যমনা, শিল্পমনা, ভাবুক আবার কেউবা থাকেন স্বপ্নচায়ী। নিজের অজান্তেই ওরা জগতের অনেক কিছুই নিয়ে ভাবেন, স্বপ্ন দেখেন। এমনকি কল্পনায় আকাশ ভ্রমণ করেন অনেকে।

যিনি বঙ্গবন্ধু, তার কর্ম ও আদর্শকে মনের মধ্যে লালন করেন, ও প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন তিনিই তো সেটা লালন করবেন। কিন্তু আজ একি! তাহলে এখন এখানে কি হাইব্রিড এসেছে-নাকি ইচ্ছাকৃত অবহেলা!
অথচ শামস্-উল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নারে’র দুটি ছবি তুলে দিয়ে এর ধারাবাহিকতায় সারা দেশে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপনের নির্দেশ এসেছিল। ব্যাংকারদের মাঝে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে ছিল এই কর্নার।

কিন্তু সে আশার গুড়েবালি করেছেন বর্তমান এমডি। বঙ্গবন্ধু কর্নারের এ হাল কেন জানতে বর্তমান এমডির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন এর সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি। বিষয়টি নিয়ে এমডির এপিএস ডিজিএম পিআর শাহনাজ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সোমবার ১৪ আগস্ট পাবলিক রিলেশনস ডিভিশন, প্রধান কার্যালয় জীবন বীমা ভবন ২০ তলায় যাওয়া হয়।

এসময় ওই সেকশনের ম্যানেজার পরিচয়দানকারী কথিত ফয়সাল ডিজিএম পিআরের এর সঙ্গে দেখা করতে দেননি। উল্টো তিনি জানতে চান কি কথা বলতে এসেছি! আগে তাকে জানাতে হবে-তারপর তিনি দেখা করার সুযোগ দিবেন। কথা বলার পর্যায়ে তাকে ভিজিটিং কার্ড ডিজিএম পি আর এর কাছে পাঠাতে বলা হলে তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে অসম্মানজনক আচরণ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংকের এই মিডিয়া সেল নিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ চলমান রয়েছে। ইতিপূর্বে অডিটে তদন্তে এসব ধরা পড়েছিল। কিন্তু সব ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে অগ্রণী ব্যাংক পি আর সেকশনের দুইজন ডিজিএম কে বদলী করা হয়েছে। এসব নিয়ে নানা তথ্য আমাদের কাছে সংরক্ষিত হয়েছে। এর সঙ্গে ব্যাংক এমডির যোগসাজশ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে একাধিক সংস্থা।

জানা গেছে, বর্তমান ডিজিএম পিআর কে বর্তমান এমডি দিনাজপুর এলাকা থেকে উড়িয়ে এসে বসিয়েছেন। এর রহস্য কি?
ওদিকে এমডির পাশে বসা এক ডিএমডি কে নিয়ে অনৈতিক নানা কথা উঠলেও এনিয়ে সবাই মুখে কুলুপ এটেছেন। যা নিয়ে থানায় জিডি এন্ট্রি রয়েছে বলেও ওই ডিএমডি জানিয়েছেন।যা অনুসন্ধান করছেন বিভিন্ন সংস্থা-।