ফেসবুককে ভোটে হাতিয়ার বানিয়েছিল বিজেপিও
ডেস্ক রিপোর্টার : ফেসবুকের তথ্য বেহাত হওয়া নিয়ে চলছে তোলপাড়। অভিযোগ উঠেছে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। ওই অ্যাপের মাধ্যমেই কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। এসব তথ্য পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হয়। এবারে নির্বাচনে ফেসবুকের তথ্য কংগ্রেস-বিজেপিও কাজে লাগিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তথ্য পাচারের প্রশ্নে বুধবার ফেসবুকের মালিক মার্ক জাকারবার্গকে সমন পাঠানোর হুমকি দিয়েছিল মোদি সরকার। আঙুল তুলেছিল কংগ্রেসের দিকে। বেলা গড়াতে দেখা গেল তথ্য হাতানোর সঙ্গে জড়িত সংস্থার সঙ্গে বিজেপিরই যোগ দীর্ঘদিনের।এতে আরও বলা হয়, ফেসবুক থেকে তথ্য হাতিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটে নাক গলানোর অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, সেই সংস্থার সঙ্গে কেন কংগ্রেসের মাখামাখি? মোদি সরকারের আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বুধবার যখন দিল্লিতে প্রশ্নটি তোলেন, বিজেপি শিবিরে তখন মুচকি হাসি। ভাবটা, বেড়াল বেরিয়ে পড়ল তো ঝুলি থেকে!
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু কংগ্রেস নয়, রবিশঙ্কর তীব্র আক্রমণ শানান ফেসবুকের উদ্দেশেও। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘এটা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমরা বাকস্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যম ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। ফেসবুক বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া এ দেশের নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে বরদাস্ত করা হবে না।’এতে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার সামাজিক ভূমিকা নিয়ে বরাবরই বেশ উছ্বসিত।
গিয়েছেন ফেসবুকের দফতরেও। বুকে জড়িয়েছেন জাকারবার্গকে। সেই জাকারবার্গের নাম করেই রবিশঙ্কর বুধবার বলেন, ‘…মনে রাখবেন ফেসবুকের মাধ্যমে যদি ভারতীয়দের তথ্য চুরি হয়, তবে তা সহ্য করব না। আমাদের কঠোর তথ্যপ্রযুক্তি আইন রয়েছে। তা প্রয়োগ করা হবে। দরকারে সমন পাঠিয়ে আপনাকে ডেকে আনা হবে।’আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফেসবুক থেকে তথ্য হাতানোয় অভিযুক্ত সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ ওঠায় কংগ্রেস প্রথমে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
দলের সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল যোগাযোগ সেলের প্রধান দিব্যা স্পন্দনা জবাব হাতড়ে বলেন, ‘ইরাকে এত জন ভারতীয় মারা গেলেন। সরকার চেপে গিয়েছিল। ব্যাপারটা এখন সামনে আসায় অস্বস্তি ঢাকতে প্রসঙ্গ ঘোরাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে এমন সংস্থার যোগাযোগ নেই।’এতে আরও বলা হয়, আর এরপরেই সামনে আসে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ভারতীয় শাখার ডিরেক্টর ঢাক পিটিয়ে লিখেছেন, ‘বিজেপির হয়ে গত চারটে ভোট সফলভাবে সামলেছি।
মিশন ২৭২ সফল করতে সাহায্য করেছি।’ কংগ্রেসের রণদীপসিংহ সুরজেওয়ালা এবার চড়া সুরে জবাব দেন, ওই বিতর্কিত সংস্থার সঙ্গে যোগ রয়েছে বিজেপিরই। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ‘মিশন ২৭২’ সফল করতে বিজেপিই কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ভারতীয় শাখা ওভলেনো বিজনেস ইন্টেলিজেন্স প্রাইভেট লিমিটেড (ওবিআই)-এর সাহায্য নিয়েছিল। আসলে ওই মিশনটা ছিল পুরোপুরি ‘ধাপ্পা’।
আনন্দবাজার পত্রিকা আরও বলেছে, কংগ্রেস কি তবে তাদের সাহায্য নেয়নি? ওবিআই-এর ওয়েবসাইট বলছে, বিজেপি ও কংগ্রেস তো বটেই, তাদের পরিষেবা নেয় সংযুক্ত জনতা দল ও আইসিআইসিআই ব্যাংকও। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, স্পষ্ট হয়ে যায় ঝুলি নয়, এটা একটা জালের মতো। বাইরে থেকেই দিব্য দেখা যাচ্ছে, সব রঙেরই মাছ রয়েছে এতে!