ফিজ আর সাকিবের জাদুতে জিতল টাইগাররা
স্পোর্টস রিপোর্টার : ফিজ আর সাকিবের জাদুতে জিতল টাইগাররা। সঞ্জয়া আউট হওয়ার পরই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। অন্যান্য ম্যাচে জয়ের পর যেমন উল্লাস হয়, এ ম্যাচে কিছুটা তার ব্যতিক্রম। উল্লাস ছাপিয়ে অন্যকোনো কিছু খেলোয়াড়দের চোখেমুখে স্পষ্ট। একে একে সবাই এসে মাশরাফির পিঠ চাপড়িয়ে দিলেন। কারো মুখে বিজয়ের হাসি নেই। থাকবে কী করে- এই জয়োল্লাসে যে বিরহের বেদনা মাখা।
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং, মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচে তিন বিভাগেই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ তাদের সেরাটা দিয়ে খেলল। একটি পরিপূর্ণ দলগত প্রচেষ্টায় শ্রীঙ্কার বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৪৫ রানের দারুণ একটি জয় পায় টাইগাররা। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাশরাফিকে জয় দিয়ে বিদায় জানায় তার সতীর্থরা। এর চেয়ে আর দারুণ বিদায় হতে পারতো কী অধিনায়কের জন্য? টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিতে তার সতীর্থরা তাকে এই জয়টি উপহার দিতে নিজেদের সবকিছু উজার করে দিয়ে যে প্রাণপণ চেষ্টাটি করেছে সেটি মাশরাফির চোখে না পরার কথা নয়। দিনশেষে সেটিই হয়তো মশরাফির সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ও স্বস্তির বিষয় হতে দাঁড়াবে।
৪ এপ্রিল টস করতে এসে মাশরাফি ঘোষণা দিয়ে বসলেন এটাই তার শেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ। তার অবসর নেওয়ার বিষয়টি তিনি ছাড়া দলের আর কেউ জানতেন কিনা সন্দেহ। তার এমন ঘোষণায় গোটা বাংলাদেশের মতো সেরা একাদশের সবাই হতভম্ব! মাশরাফির বিদায় ঘোষণার প্রভাব যেন দলেও পড়ল। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং, সবখানেই। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ তাদের প্রথম টি-টোয়েন্টিটি হেরে গেল ৬ উইকেটে।
৬ এপ্রিল মাশরাফির শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। টস জিতে ব্যাটিং নিলেন মাশরাফি। পিঠের ব্যাথার কারণে তামিম ইকবাল খেলতে পারেননি এই ম্যাচটি। তাসকিন আহমেদকে বসিয়ে মাশরাফির ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তরুণ তুর্কি মেহেদী হাসান মিরাজের অভিষেক ঘটানো হল। উদ্বোধনী জুটিতে ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার রেকর্ড ৭১ রান তুললেন। রান পেলেন সৌম্য (৩৪), ইমরুল (৩৬), সাব্বির (১৯), সাকিব (৩৮), মোসাদ্দেক (১৭) ও মুশফিক (১৫)। তাতে মালিঙ্গার হ্যাটট্রিক সত্ত্বেও বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রানের সংগ্রহ পায়।
ব্যাটিংয়ের পর ফিল্ডিংয়ে যেন এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। অফুরন্ত প্রাণশক্তি সবার মধ্যে। যে যার অবস্থান থেকে শতভাগ দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। তাতে শুরুতেই ফল পায় বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের করা ইনিংসের প্রথম বলেই শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে ৪ মারেন আগের ম্যাচে নজরকাড়া ৭৭ রানের ইনিংস খেলা কুশাল পেরেরা। পরেই বলেই বোল্ড হয়ে যান তিনি। দ্বিতীয় ওভারে এসে আবারো আঘাত হানেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এবার দিলশান মুনাবেরাকে মাহমুদউল্লাহ হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান।
পঞ্চম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৪০ রানের মাথায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আঘাত হানেন। মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে আউট হন অধিনায়ক উপল থারাঙ্গা (২৩)। এরপর মুস্তাফিজুর রহমান বোলিংয়ে এসে প্রথম দুই বলে নেন দুই উইকেট। প্রথম বলে আসেলা গুনারত্নকে (০) আউট করেন। পরের বলেই মিলিন্দা শ্রীবর্ধনে (০) পয়েন্টে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। এরপর জুটি বাঁধেন অভিজ্ঞ থিসারা পেরেরা ও চামারা কাপুগেদারা। তারা দুজন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৫৮ রান সংগ্রহ করেন।
দলীয় ৯৮ রানের মাথায় সাকিব আল হাসানের বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হয়ে থিসারা পেরেরা আউট হলে এই জুটির অবসান ঘটে। ১১৯ রানের মাথায় সেকুগে প্রসন্নকে সরাসরি বোল্ড আউট করেন মাশরাফি। মুস্তাফিজ তার দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এসেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা চামারা কাপুগেদারাকে ফেরান। তার অফ-কাটার উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে তালুবন্দি হন। ১২৩ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৫০ রান করে কাপুগেদারা ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে পরাজয়টা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় লঙ্কানদের জন্য।
১৭তম ওভারের শেষ বলে ১২৪ রানের মাথায় লাসিথ মালিঙ্গাকে বোল্ড করেন মুস্তাফিজ। এর মধ্য দিয়ে নিজের ঝুলিতে চতুর্থ উইকেট পকেটে পুরেন দ্য ফিজ। দলীয় ১৩১ রানের মাথায় সাইফুদ্দিনের করা ১৮তম ওভারে শেষ বলে ভিকুম সঞ্জয়া আউট হলে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের যবনিকাপাত ঘটে। আর বাংলাদেশ জয় পায় ৪৫ রানে। তাতে টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও ১-১ ব্যবধানে ড্র করে বাংলাদেশ।
বল হাতে বাংলাদেশের সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। ৩ ওভার বল করে ২১ রান দিয়ে ৪টি উইকেট নেন ফিজ। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। ১টি করে উইকেট নেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
ব্যাট হাতে ৩৮ রানের ইনিংস খেলার পর বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন সাকিব আল হাসান। আর সিরিজ সেরা হন শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা।