• রোববার , ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ফাহিমের চাঞ্চল্যকর তথ্য-টার্গেট কিলিং করছে হিজবুত তাহরির


প্রকাশিত: ৪:১৩ এএম, ১৮ জুন ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৩৩ বার

মাদারীপুর প্রতিনিধি   :  মাদারীপুরে কলেজশিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যাচেষ্টায় গ্রেফতার গোলাম fahim-www.jatirkhantha.com.bdফাইজুল্লাহ ফাহিম ছিল হিযবুত তাহরির ক্যাডার। একাধিক টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনায় এরা মাদারিপুরে অভিযানে নামে।এর আগে এরা বাংলাদেশের আর কোথায় কোথায় টার্গেট কিলিং করেছে সে তথ্য উদঘাটন করছেন গোয়েন্দারা।এজন্য ফাহিমকে নেয়া হয়েছে ১০ দিনের রিমান্ডে।

জিজ্ঞাসাবাদে ফাহিম চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।গোয়েন্দারা বলছেন, শুধু কলেজশিক্ষক নয়, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত অনেক হত্যাকাণ্ডেই হিযবুতের সম্পৃক্ততা রয়েছে। টার্গেট কিলিংয়ের দিকে ঝুঁকছে সংগঠনটির সদস্যরা। কিলিং মিশনে অংশ নিচ্ছে দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররা।

1জানা গেছে, নাশকতাবিরোধী অভিযানের মধ্যেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সরকারবিরোধী পোস্টার লাগিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে সংগঠনটি। প্রকাশ্যেই বিলি করছে লিফলেট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের সরব উপস্থিতি। সাঁটানো পোস্টারে তাদের বিশেষ আহ্বানের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল বেলা ৩টার দিকে হিযবুত তাহরির অনলাইনে সম্মেলন করে। পুলিশের সপ্তাহব্যাপী অভিযানে হিযবুত তাহরিরের ২১ সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঘোষণা দিয়ে অনলাইন সম্মেলন করেছিল নিষিদ্ধ এই সংগঠনটি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, আগাম ঘোষণা দিয়ে চুরি করে সম্মেলনের চেষ্টা করেছিল হিযবুত। এ জন্য পুরো রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। বনানী থেকে চার হিযবুত সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এরা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

মাদারীপুরে সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গ্রেফতার গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমকে গতকাল ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তবে এরই মধ্যে ফাহিমের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য আদায় করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক গ্রুপ তৈরি করেছে হিযবুত তাহরির। মেধাবী ছাত্রদের মগজ ধোলাই করে হিযবুত তাহরির উগ্রপন্থায় ধাবিত করছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছে। স্পর্শকাতর কথাবার্তার জন্য তারা কখনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না।

বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর শেরশাহ এলাকা থেকে মহিবুল আলম নামে এক হিযবুত সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকেও দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিবুল ২০১৩ সালেও একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। পুলিশের দাবি, জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর মহিবুল নিজ বাড়ি রাউজান উপজেলা ও নগরীতে হিযবুত তাহরিরকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করলেও কলেজশিক্ষক হত্যাচেষ্টায় গ্রেফতার ফাহিম ওই এলাকার কারও সঙ্গে চলাফেরা করত না। উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহপাঠীদের সঙ্গেও খুব একটা মিশত না সে।

একই প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করা ফাহিম চলতি বছর শেষ হওয়া উচ্চ মাধ্যমিকের রসায়ন পরীক্ষা না দিয়েই ১১ জুন সকালে ঢাকার দক্ষিণখানের বাসা থেকে নিরুদ্দেশ হয়। এক দিন পর ফাহিম তার বাবার মোবাইল ফোনে এসএমএস করে বলে, ‘বিদেশ চলে গেলাম, এ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।’

পুলিশ বলছে, রিপন চক্রবর্তীকে জঙ্গি কায়দায় কুপিয়ে হত্যার চেষ্টায় অংশ নেয় সালমান তাসকিন, শাহরিয়ার হাসান, জাহিন, রায়হান ও মেজবাহ নামের হিযবুত তাহরিরের সদস্য। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে জঙ্গি কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মাদারীপুরে প্রথম হামলা চালায় হিযবুত।

কিলিং মিশনের আগে তারা একাধিক দিন ওই শিক্ষকের বাসা ও আশপাশে রেকি করে। শহরের কলেজ গেট এলাকায় বাসার কড়া নেড়ে ঘরে ঢোকে এবং এরপর চাপাতি দিয়ে রিপনের মাথা ও ঘাড়ে আঘাত করে। রিপনের চিৎকারে আশপাশের মানুষ এগিয়ে এসে ফাহিমকে আটক করে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ফাহিম হত্যাচেষ্টায় জড়িত আরও পাঁচজনের নাম বলেছে। প্রসঙ্গত, জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরিরকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৯ সালে। এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক হিযবুত সদস্যকে গ্রেফতার করে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তবে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় সাংগঠনকি তত্পরতা অব্যাহত রেখেছিল।