• রোববার , ১৭ নভেম্বর ২০২৪

প্রস্তুুত জল্লাদ রাজু-যে কোন সময় ফাঁসি মুফতি হান্নান ও বিপুলের


প্রকাশিত: ৮:০৮ পিএম, ১১ এপ্রিল ১৭ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৬৯ বার

গাজীপুর প্রতিনিধি  :  প্রস্তুুত জল্লাদ রাজু-যে কোন সময় ফাঁসি মুফতি হান্নান ও বিপুলের-
jongi-Hannan-bipul-www.jatirkhantha.com.bdনিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষনেতা ‘মুফতি’ আব্দুল হান্নান ও জঙ্গি শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের সঙ্গে দেখা করতে তাদের স্বজনদের ডেকেছে কারা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) ডাকা হলেও সাক্ষাতের নির্দিষ্ট কোনো সময় দেওয়া হয়নি।

সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা ওই দুই জঙ্গিকে রাখা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে। সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা করতে স্বজনদের ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান।
hannan-www.jatirkhantha.com.bd
মিজানুর রহমান বলেন, ‘ফাঁসি কার্যকরের আগের সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া যেহেতু শেষ হয়ে গেছে, সেহেতু দুই আসামির পরিবারের সদস্যদের খবর দিয়েছি। যদি তারা চান, তবে কারাগারে এসে আসামিদের সঙ্গে দেখা করে যেতে পারেন’।

ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি থাকলেও বিধান অনুসারে এটি আসামিদের সঙ্গে স্বজনদের ‘শেষ সাক্ষাৎ’ কি-না, তা বলতে রাজি হননি এই কারা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে এই মুহূর্তে কোনো জল্লাদ নেই। তবে সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যেকোনো কয়েদিকে দিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে নিতে পারি’।কারা সূত্র জানায়, পাশের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, পার্ট-২ এ জল্লাদ রাজু আছেন, যিনি শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের দলে ছিলেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনকে রাখা হয়েছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে। তার সঙ্গে ইতোমধ্যেই দু’দফায় শেষ সাক্ষাৎ করেছেন তার স্বজনেরা। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকালে তার বাবা আ. ইউসুফ, মা আজিজুন্নেছা, ভাই নাজমুল ইসলাম ও তার স্ত্রী দেখা করে যান। আর গত রোববার (০৯ এপ্রিল) আসেন তার চাচা আব্দুন নুর, চাচি আজিজুন্নেছা, চাচাতো বোন রুমেনা, ফুফাতো বোন লুৎফা বেগম ও ফুফাতো ভাই জাবির হোসেন।
Mufti hannan-www.jatirkhantha.com.bd12
এর আগে সোমবার (১০ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতির কাছে ‘মুফতি’ হান্নান ও বিপুলের করা প্রাণভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুর সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পৌঁছে কারাগারে। আর রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি পৌঁছে মঙ্গলবার সকালে।তিনজনকেই তা পড়ে শোনানো হয়েছে বলে জানান স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষ।

কাশিমপুর ও সিলেট- দুই কারা সূত্রই জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফাঁসি কার্যকরের কার্যনির্বাহী আদেশ পাঠালে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে তাদের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখা আছে।  এদিকে তিন জঙ্গিরই ফাঁসি কার্যকরে কারাগারে প্রস্তুতি চলছে বলে রোববার (০৯ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

তবে প্রাণভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর  ফাঁসি কার্যকরে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটাও বলেছেন, ‘জেলকোড অনুসারে ২১ দিনের কমে নয় এবং ২৮ দিনের ঊর্ধ্বে নয়- এ সময়সীমার মধ্যে কার্যাদেশ পালন করতে হবে। আমরা সেজন্যই অপেক্ষা করছি। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। সব ফর্মালিটি শেষ হলেই আমরা রায় কার্যকর করবো’।

২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন।

মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৫ আসামির মধ্যে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিল করেন। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন দুই আসামি ‘মুফতি’ হান্নান ও বিপুল।

গত বছরের ০৭ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল খারিজ করে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আসামিরা এ রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন জানালেও গত ১৯ মার্চ তা খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২১ মার্চ প্রকাশিত হলে পরদিন ২২ মার্চ তিন জঙ্গির মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করে কারাগারে পাঠান বিচারিক আদালত।

মৃত্যু পরোয়ানা ও সর্বশেষ রায় শোনার পর গত ২৭ মার্চ পৃথকভাবে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপন স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে রাষ্ট্রপতি বরাবরে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন।শনিবার (০৮ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়ার পর সরকারের সিদ্ধান্তে এখন জেলকোড অনুসারে ফাঁসি কার্যকর করবে স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষ।