• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নে রেজা কিবরিয়া-বিএনপি ভাঙতে তৎপর বলছেন নূর


প্রকাশিত: ৯:৫৯ পিএম, ২০ জুন ২৩ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৪ বার


লাবণ্য চৌধুরী : ক্ষমতার গন্ধে একে অপরের বিরুদ্ধে চরম বিরুদ্ধাচারণ চলছে গণ অধিকার পরিষদে।অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন রেজা কিবরিয়া। এ অবস্থায় রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের দ্বন্দ্বে ভাঙনের মুখে পড়েছে গণ অধিকার পরিষদ। দলটির আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে দলের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ওদিকে এসব ঘটনার নেপথ্যে ফরহাদ মজহারের ‘ইনসাফ কায়েম কমিটি’ কলকাঠি নাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক নেতারা।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সদস্য সচিব নুরুল হক নূর। গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে দলের বলেন, ‘টাকার লোভে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে তিনি বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর।’সোমবার (১৯ জুন) রাতে নুরুল হক নূর তার নিজের ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেন।

‘রেজা কিবরিয়ার অসত্য বক্তব্য ও মিথ্যাচার নিয়ে আমার বক্তব্য নিম্নরূপ’ শীর্ষক স্ট্যাটাসে নুরুল হক নুর বলেন, ‘নিজের অপকর্ম ঢাকতে আমাকে নিয়ে রেজা কিবরিয়ার অসত্য বক্তব্য ও মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ। রেজা কিবরিয়া কতটুকু অযোগ্য, সেটা তার কাজকর্মে ইতোমধ্যে আপনারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। গণ অধিকার পরিষদের মতো একটা সম্ভাবনাময় দলের আহ্বায়ক হয়েও তিনি ওইভাবে দলের মিটিং-মিছিল, কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না।’

নুর জানান, গতকাল রবিবার (১৮ জুন) তাদের দলের বৈঠক ছিল। সে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় জনৈক মাসুদ করিম/এনায়েত করিমের বিএনপি ভাঙা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কথিত সরকারবিরোধী প্রোগ্রামের নামে রেজা কিবরিয়া ব্যাংকক, কাঠমান্ডুতে একাধিকবার মিটিংয়ে অংশ নেন।

দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং সর্বশেষ ইনসাফের প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার বিষয়ে গতকাল রেজা কিবরিয়ার বাসায় জরুরি মিটিংয়ে এসব বিষয়ে জবাবদিহি চাওয়া হয়। তিনি সদুত্তর না দিয়ে নেতাদের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বাসার ছাদের মিটিং স্থান ত্যাগ করে বাসায় ঢুকে আর মিটিংয়ে আসেনি।

যে কারণে আমরা তার উপস্থিতিতে আর মিটিং করতে পারিনি। তাই উপস্থিত সদস্যদের মতামতে আমরা বাকি আলোচনা সম্পন্ন করি। আজকে পূর্ব নির্ধারিত মিটিংয়ে অসমাপ্ত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হই যে, … মিটিং এখনও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চলমান।

স্ট্যাটাসের বিষয়ে নুরুল হক নূর সত্যতা স্বীকার করেছেন। এসব বিষয়ে জানতে রেজা কিবরিয়ার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে তার পারিবারিক একটি সূত্র জানায়, পায়ের চিকিৎসায় তিনি বিদেশে আছেন।স্ট্যাটাসে নুর আরও উল্লেখ করেন, নিশ্চয়ই আপনারা অবগত আছেন, এই রেজা কিবরিয়ার কারণেই গণফোরামও ভেঙে ছিল।

গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ দুই নেতার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ–পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে দলটিতে অস্থিরতা চলছে অনেক দিন ধরেই। বিভিন্ন সময় তাঁরা প্রকাশ্যেও বিরোধে জড়িয়েছেন। দুই নেতার বিরোধে দলে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় গত রোববার ঢাকায় রেজা কিবরিয়ার বাসভবনে গণ অধিকার পরিষদের নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন।দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সেই বৈঠকেও পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর ফলে কোনো সমাধান সেদিন হয়নি।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোববারের বৈঠকে রেজা কিবরিয়া দলের সদস্যসচিব নুরুল হকের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেশী দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগ করেন।এ ছাড়া রেজা কিবরিয়া দলের তহবিল নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলেন।অন্যদিকে নুরুল হক পাল্টা অভিযোগ করেন যে তাঁদের দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া অনেক দিন ধরে ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের নেতৃত্বাধীন ইনসাফ কায়েম কমিটির কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। সে জন্য তিনি অর্থ পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন নুরুল হক।

এ ছাড়া দলের কর্মকাণ্ডে সময় না দেওয়ার অভিযোগও করা হয় রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে।রোববারের বৈঠকে কোনো সমাধান হয়নি। পরদিন রেজা কিবরিয়া বিদেশে চলে যান।তবে গতকাল রেজা কিবরিয়ার অনুপস্থিতিতে গণ অধিকার পরিষদের নেতারা আবার বৈঠকে বসেন। এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নুরুল হক।

গতকালের বৈঠকে রেজা কিবরিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় রাশেদ খানকে। একই সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যে দলের কাউন্সিল করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।রাশেদ খান তাঁদের দলের বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো নিশ্চিত করেছেন। দলটির অন্য একাধিক সূত্র বলেছে, দলের দুই নেতার বিরোধের মীমাংসা সম্ভব হবে কি না, এই প্রশ্ন তাঁদের অনেকেরই রয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেছেন আমিই বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক আছি, আমিই থাকব। আমার সাথে ৭৫ শতাংশ নেতা-কর্মী আছে। সিনিয়ররা আমার সাথে আছেন, নিবন্ধন আমার নামেই হবে।আহবায়কের পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার (২০ জুন) রেজা কিবরিয়া গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।  সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়ে দুই বছর আগে রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরকে সদস্য সচিব করে গণঅধিকার পরিষদ গঠিত হয়েছিল।