প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অগ্রাহ্য-সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালকে টাকা দিচ্ছেনা অর্থ মন্ত্রণালয়
এম রহমান.ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অগ্রাহ্য-সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালকে টাকা দিচ্ছেনা অর্থ মন্ত্রণালয় । সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুন্যালের জন্য অর্থ পেতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অর্থ বিভাগের সঙ্গে কথা বলতে চান। অর্থ মন্ত্রণালয় সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে টাকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই কারণে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মনে করছেন সময়, প্রয়োজন ও বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেই এই অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি অর্থ মন্ত্রী ও অর্থ বিভাগের সঙ্গে কথা বলেই নিতে চান। তিনি অর্থ পাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কাজ হচ্ছে না।
সন্ত্রাস বিরোধী আইনে এক বা একাধিক সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই জন্য সরকার সেটা গঠন করতে চাইছে। সরকার আর্থিক বিভিন্ন দেক বিবেচনা করেই ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর তারা এতে অনাগ্রহ দেখান। যতদিন পর্যন্ত ট্রাইবুন্যাল গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না ততোদিন জেলা জজ ও দায়রা জজদের দিয়ে বিচার কাজ পরিচালনা করা হবে। এখনও তারাই বিচারকাজ করছেন। তবে সরকার এই সব মামলা দ্রুত শেষ করতে চান সেটা করতে পারছেন না। কারণ এখন ধীর গতিতে কারণে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে প্রায় ৫০০ মামলার নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠনের ব্যাপারে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ২৮ (১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, এ আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের দ্রুত ও কার্যকর বিচারের উদ্দেশ্য, এক বা একাধিক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। ২৮ (২) ধারায় রয়েছে, এ আইনের অধীনে গঠিত ট্রাইব্যুনাল, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকারের মাধ্যমে নিযুক্ত একজন দায়রা জজ অথবা একজন অতিরিক্ত দায়রা জজের সমন্বয়ে গঠিত হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই আইনের বলেই বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠন করতে চায়। ২০১২ সাল থেকে চেষ্টা করেও গত প্রায় তিন বছরে সফল হতে পারেনি।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস দমনে এই সব মামলা দ্রুত নিস্পত্তির তাগিদ দেন। সেই হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবকে চিঠি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। তিনি চিঠিতে তাকে জানান, সন্ত্রাস বিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় দায়ের কৃত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। সেটা হলে সন্ত্রাস দমন করা সম্ভব হবে। এখন চলমান মামলার কাজ বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ গণ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে পরিচালনা করছেন। এই কারণে তা শেষ হতে সময় লাগছে বেশি। দেরিতে মামলা নিস্পত্তি হওয়ার কারণে সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম সফল হচ্ছে না। এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যেহেতু ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর কমব্যাটিং টেরোরিজম অ্যান্ড মানিলন্ডারিং কমিটির সভাপতি। সেই জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য বিশেস ট্রাইবুন্যাল গঠনের বিষয়টি তাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়কে এই আদালত গঠন করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে অনুরোধ করা হয়। এর এক বছর পর জুলাই মাসে সাতটি জেলা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের জন্য একটি করে মোট সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানায়। এই জন্য ওই আদালত গঠন করার জন্য আড়াই কোটি টাকার প্রয়োজন এবং বিচারাদালত গঠন ও এই বিচার কাজ করার জন্য ৪২টি পদ তৈরি করার কথা বলা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় আর্থিক দিক বিবেচনায় অর্থ বিভাগ সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনাল গঠনে অপারগতা প্রকাশ করে।
এদিকে গত মাসে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করার জন্য তাগিদ দেন। সেইসঙ্গে এই সব মামলার অভিযোগ পত্র যাতে দ্রুত হয় সেই জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এরপর বেশ কয়েকটি মামলার সম্প্রতি চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। বিএনপি চেয়ারপারসনসহ বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনার সময়ে যে সব মামলা হয়েছে ওই সব মামলার বেশ কয়েকটিতে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই সব মামলার বিচারকাজ শুরু হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর এই সব মামলারকাজ দ্রুত শেষ করতে চাইছে।
সূত্র জানায়, এই জন্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অর্থ বিভাগের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানাতে চান। কারণ এই ব্যাপারে ২০১২ সালের নভেম্বর মাস থেকে এ ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য দুটি মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছে। কিন্তু তারা বিষয়টির গুরুত্ব দিচেছ না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চাহিদাপত্র দিলেও এবং বার বার তাগিদ দিয়ে চিঠি দেওয়া হলেও তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় এখন জানতে চেয়েছে যে ঠিক কত সংখ্যক মামলা সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে রয়েছে। বিচারকাজেরও একটি চিত্র তারা চেয়েছে। এর প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। সেই চিঠির উত্তর পাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি বিবেচনা করবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আমরা সন্ত্রাস দমন করার জন্য এই সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত নিস্পিত্তি করতে চাইছি। এই জন্য বিশেষ আদালতও গঠন করতে চাই। সেটা করা গেলে মামলার কাজ যেমন দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে তেমনি সন্ত্রাসও দমন করা যাবে। আমরা এই আদালত গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ চেয়েছি। কিন্তু সেটা এখনও মিলেনি। এই কারণে আদালত গঠনে দেরি হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি অর্থ বিভাগেও কথা বলবো। তারা যাতে টাকার ব্যবস্থা করে সেটাও বোঝানোর চেষ্টা করবো। কারণ এই অর্থ সংস্থান হলে ও মামলা দ্রুত নিস্পত্তির ব্যবস্থা করা গেলে অনেক সুফল পাওয়া যাবে। এই জন্য আমরা চেষ্টা করবো বিশেষ আদালত গঠন করার।
এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি আইনমন্ত্রীও এই ব্যাপারে চেষ্টা করছেন। তিনি বলেছেন, আমরা এখন বিজ্ঞ জেলা জজ ও দায়রা জজদের দিয়ে মামলার বিচার কাজ করানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু আমরা টাকা পেতে চাই। এই জন্য বার বার বলা হয়েছে। টাকা পেলে আদালতও গঠন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে গুরুত্ব বিবেচনা করে অর্থের সংস্থার করবে বলে আমরা আশা করছি। সেই সঙ্গে চেষ্টাও অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস নির্মূল করতে হলে এই সব মামলার দ্রুত নিস্পত্তি করার পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তিও কার্যকর করতে হবে। তাহলে সন্ত্রাস দমনে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।